Sylhet View 24 PRINT

‘স্বামী-ভাসুর-দেবর যে-ই হোক, আমি প্রত্যেকের ফাঁসি চাই’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১০-২০ ১৯:০০:৩৬

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ‘আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের প্রত্যেকের ফাঁসি চাই, সেটা স্বামী, ভাসুর আর দেবর যে-ই হোক, আমি প্রত্যেকের ফাঁসি চাই। যে স্বামী নিজের সন্তানকে খুন করতে পারে সে আমাকেও খুন করতে পারে।’ - এভাবেই শিশু সন্তান হত্যার বিচার দাবী করেন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া তুহিনের মা অসুস্থ মনিরা বেগম।

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এতো বড়ো ঘটনার কোন কিছুই আগে থেকে জানতাম না। এরকম ঘটনা ঘটবে জানলে আমি তুহিনকে বুক দিয়ে আগলে রাখতাম। আমার কোন সন্তান তাদের কাছে নিরাপদ না। আমি তাদেরকে বিশ্বাস করি না। আমি আর কিছু চাই না শুধু ফাঁসি চাই।’

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কেজাউড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারের জেরে নৃশংস কায়দায় ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিনকে খুন করা হয়। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে তুহিনের স্বজনরাই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছিল- এমনটাই বলছেন গ্রামের আপামর মানুষ।

তুহিনের মা বলেন, ঘটনার সময় আমি আমার সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে ঘুমিয়েছিলাম। পরে ঘরের সবার চিৎকারে জেগে ওঠে দেখি আমার তুহিন বিছানায় নাই। পরে যখন জানতে পারি আমার তুহিনকে নির্মমভাবে খুন করে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে তারপর থেকে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর আর কিছু বলতে পারি না।

সুনামগঞ্জ-দিরাই সড়কের কর্ণগাঁও মোড় থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কেজাউড়া। গ্রামের মধ্যভাগে মো. মাওলানা আব্দুল মচ্ছবির পূর্বপুরুষ মহিম উদ্দিন তালুকদারের নামে বাড়ির নামকরণ করা হয়েছে। সে ঘরে বাস করেন নিহত শিশু তুহিনের বাপ চাচারা। গ্রামটি অশান্ত হয়ে ওঠে গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গোষ্ঠীর অর্ন্তদ্বন্দ্বে। অর্ন্তদ্বন্দ্বে একপক্ষের নেতৃত্বে সাবেক ইউপি সদস্য আনোয়ার আর অপর পক্ষে মাওলানা আব্দুল মুচ্ছাব্বির। এই অর্ন্তদন্দ্বের সর্বশেষ নির্মম শিকারে পরিণত হয় ৫ বছর বয়সী শিশু তুহিন। মুছাব্বির শিশু তুহিনের চাচা।

এর আগে ২০০১ সালে মুজিবুর নামের এক কৃষক ও ২০১৫ সালে খুন হন নিলুফা নামের এক গৃহবধু। দুটি খুনের ঘটনাতেই রয়েছে বিবাদমান দুটি পক্ষের বিরুদ্ধে পরস্পরকে ফাঁসানোর অভিযোগ। মুজিব খুনের ঘটনায় আসামি করা হয়েছিল শিশু তুহিনের বাবা আব্দুল বাছিরকে। অপরদিকে গৃহবধু নিলুফা হত্যা মামলায় আনোয়ার মেম্বার পক্ষের ১৬ জনকে।


কেজাউরা গ্রামের বাসিন্দারা মনে করেন, এই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই শিশু তুহিনকে নৃশংস কায়দায় খুন করে তার স্বজনরা। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি তাদের।

এ ঘটনায় তুহিনের মা বাদী হয়ে ১০ জনকে আসামী করে দিরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় তুহিনের চাচা মাওলানা আব্দুল মুছাব্বির, নাসির উদ্দিন, জুলহাস, জমসেদ আলী, বাবা আব্দুল বাছির ও চাচাতো ভাই শাহরিয়ারকে আসামী করা হয়। তাদের মধ্যে জুলহাস, শাহরিয়ার ও বাবা আব্দুল বাছির আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দিয়েছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আবু তাহের মোল্লা বাবা-চাচাসহ তিনজনের ৫ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। রিমান্ড শেষে তাদেরকে আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।

সিলেটের ডিআইজি মো. কামরুল আহসান, অতিরিক্ত ডিআইজি জয়দেব কুমার ভদ্র, সাময়িক দায়িত্ব প্রাপ্ত পুলিশ সুপার মিজানুর রহমানসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত নিখুঁত ভাবে করা হচ্ছে। যাতে আদালত সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে পারেন।

জড়িতের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সারা জেলায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।


সৌজন্যে : সময়
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ অক্টোবর ২০১৯/জিএসি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.