Sylhet View 24 PRINT

বন্যায় সব হারিয়ে পুঁজিশূণ্য দোয়ারাবাজারের মৎস্য খামারিরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-০৫ ১৬:৩৭:০৭

দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের মৎস্যচাষী আব্দুস শহীদ। তার ১৭টি দিঘী ও পুকুর। ১৬টিই তলিয়ে গেছে বন্যায়। খামারে ২ কোটি টাকা পূঁজি খাটান তিনি।

পোনা ছাড়াও পুরোনো বড় মাছও মজুদ ছিল পুকুরগুলোতে। সাম্প্রতিক বন্যায় প্রায় দেড় কোটি টাকার মাছ ভেসে গিয়ে পুঁজি হারিয়ে এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তার। জেলার শ্রেষ্ঠ মৎস্যচাষীর পুরস্কারপ্রাপ্ত ওই গ্রামের আব্দুর রহিম।

তিনি দীর্ঘদিন থেকে মৎস্য চাষ ও ব্যবসার সাথে জড়িত। বাড়ির পাশেই ৪০ বিঘা জমিতে ছোট, বড় ও মাঝারি ৫টি পুকুর আছে তার। সবটিতেই পুরোনো মাছ মজুদ ছিলো। সাম্প্রতিক বন্যায় একাধিক পুকুরের পাড় ভেঙ্গে ভেসে গেছে তার প্রায় ৬০ লাখ টাকার মাছ।

একই ইউনিয়নের টেংরাটিলা গ্রামের মৎস্যচাষী শের মাহমুদ ভূঁইয়া। ৪০ একর জমিতে একটি বিশাল দিঘী খনন করে তাতে এবারই প্রথম শুরু করেছিলেন বানিজ্যিকভাবে মাছ চাষ। দিঘী ছাড়াও আরও ৪টি পুকুর রয়েছে তার। এবারের প্রথম দফা বন্যার পানিতে ভেসে গেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মাছ।

একই গ্রামের মৎস্যচাষী তাজুল ইসলাম। বন্যায় ভেসে গেছে তার ছোট-বড় ৭টি পুকুরের বিভিন্ন প্রজাতির দেশি-বিদেশি প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ।

শুধু মৎস্যচাষী আব্দুস শহীদ, আব্দুর রহিম, শের মাহমুদ ভূইয়া, তাজুল ইসলামই নয়, বন্যার পানিতে এবার দোয়ারাবাজার উপজেলার কয়েক শতাধিক পুকুর তলিয়ে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে মৎস্যচাষীদের করুণ দূর্দশার খবর জানা গেছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে খামারিদের অন্তত কয়েক কোটি টাকার মাছ। দিঘী-পুকুরে বিনিয়োগকৃত শ্রম-ঘাম, পুঁজি সবই বানের পানিতে তলিয়ে গিয়ে এখন অনেকের কাধে বইছে ঋণের বোঝা।

মৎস্যচাষীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, অব্যাহত টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এবার আগাম কোনো প্রস্তুতি নিতে পারেননি তারা। বন্যার তীব্র স্রোতে জাল দিয়ে ঘেরাও করেও মাছ আটকানো যায়নি। অনেক পুকুরের পাড়ও ভেঙ্গে গেছে। করোনা  ও বন্যা পরিস্থিতি সব মিলিয়ে এখন পুঁজিশূণ্য হয়ে পড়েছেন উপজেলার মৎস্যচাষীরা।

উপজেলার মৎস্য খাদ্য ডিলার কাজী মনিরুজ্জামানে এ প্রতিবেদককে বলেন, “উপজেলাধীন মৎস্য খামারে মাছের খাদ্য সরবরাহ করতে আমি বিভিন্ন কোম্পানি থেকে বাকিতে মাল কিনে মাছ চাষীদের কাছে তা বিক্রি করি। মাছ বড় করে বাজারজাত করার পর ওই মাছ বিক্রির টাকা দিয়ে আমার পাওনা টাকা পরিশোধ করেন মাছ চাষীরা। বছর শেষে কোম্পানিকেও তাদের সকল পাওনা টাকা পরিশোধ করতে হয় আমাকে। কিন্তু এবার করোনা ও আকস্মিক বন্যায় মাছচাষীরাই শুধু ক্ষতিগ্রস্তই হননি, আমরা মাছের খাদ্য সরবরাহকারীরাও বিরাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এলাকা ও এলাকার বাইরের মাছ চাষীদের কাছে আমি এখনো প্রায় দেড় কোটি টাকা পাওনা রয়েছি।”

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার কান্তি বর্মণ জানান, “উপজেলার মৎস্যচাষীরা এবার ব্যাপক লোকসানে পড়েছেন। বন্যা পরবর্তীতে মৎস্যচাষীদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের কাজ এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যচাষীরা সরকারি প্রণোদনার জন্য আবেদন করলে তাদেরকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।”


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৫ জুলাই ২০২০/টিআই/এসডি

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.