Sylhet View 24 PRINT

লন্ডনে গ্রিণফেল টাওয়ার ট্রাজেডির বর্ষপূর্তি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৬-১৫ ০০:৪৭:৫০

মুনজের আহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য :: ব্রিটেন তথা ইউরোপে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ট্রাজেডি গ্রিণফেল টাওয়ার দুর্ঘটনার এক বছর পূর্ণ হয়েছে ১৪ জুন।

পশ্চিম লন্ডনের কেন্সিংস্টনে গ্রিণফেল টাওয়ার ট্রাজেডিতে প্রানহানি ঘটে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ মোট ৭২ জনের। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলেন আরো প্রায় দেড় শতাধিক। ২৪ তলা বিশিষ্ট ওই টাওয়ারে ১২৯টি ফ্লাট ছিল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অগ্নিকান্ডে নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন ২৩ টি ফ্লাটের বাসিন্দা। ঐদিন রাত ১২টা ৫৪ মিনিটে ৪র্থ তলার ১৬ নাম্বার ফ্লাটের রান্নাঘরের একটি ফ্রিজ থেকে আগুনের সুত্রপাত হয়েছিল বলে লন্ডন পুলিশের বরাতে জানা যায় ।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে লন্ডন ফায়ার ব্রিগেডের ২৫০ জন ফায়ার ফাইটার ও ৪০টি ফায়ার ইঞ্জিনের টানা ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত  সময় লেগেছিল। কিন্তু ততক্ষণে ৭২টি প্রাণপ্রদীপ নিভে যায়। টাওয়ার ও এর আশপাশের ভবনসহ মোট ১৫১টি বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

গ্রিনফেল টাওয়ারের বিয়োগান্তক এই ট্রাডেজির বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নেওয়া হয় নানা কর্মসূচী। তন্মধ্যে বার্ষিকীকে স্মরনীয় করে রাখতে পাবলিক তদন্ত এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া  ১৪ জুন বৃহষ্পতিবার দুপুর দেড়টায় নিকটবর্তী সেন্ট ক্লেমেন্ট চার্চে অগ্নিকান্ডে নিহতদের আতœার উদ্দেশ্যে এক মিনিট নিরবতা পালন এবং তাদের নাম পড়া হয়। ঐদিন সন্ধ্যায় নর্থ কেন্সিংস্টন কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ  একত্রিত হয়ে টাওয়ারের পাশে ২৪ ঘন্টা জাগ্রত থাকেন। বৃহষ্পতিবার রাত ১২টা ৫৪ মিনিট তথা আগুন লাগার সময়কাল থেকে গ্রিনফেল টাওয়ার সহ আশপাশের ১২ টি টাওয়ার ৫ দিন ব্যাপী প্রতিদিন ভোর পাঁচটা পর্যন্ত বিশেষ ভাবে আলোকোজ্জ্বল করা হয়। কর্মসূচিতে পরের দিন, সারা দেশের স্কুলগুলোতে ‘গ্রিণ ফর গ্রেনফল’ উদযাপনে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেন।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে অগ্নিকান্ডের ঘটনায়  বর্ষপূর্তি সামনে রেখে ভিকটিম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দ্রুত দেখা করতে না পারার জন্য তিনি সবসময়ই দুঃখিত বলে জানিয়েছেন। ইভিনিং স্টেন্ডার্ডের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, মিসেস মে আরো বলেছেন, 'দুর্যোগ পরবর্তী প্রতিক্রিয়া যথেষ্ট ছিল না এবং যথা সময়ে যথাযথ  পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি, যার জন্য তাঁর নিজের ব্যার্থতা রয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।'

ঘটনার পরদিন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এ ঘটনায় পাবলিক তদন্তের আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, "আমাদের জানতে হবে কি হয়েছিল এবং  এর পুরোপুরি ব্যাখ্যাও আমাদের দিতে হবে"। কি হয়েছিল? কেন হয়েছিল? এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে করনীয় কি? এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে সেসময় তিনি সাবেক অবসর প্রাপ্ত বিচারপতি স্যার মার্টিন মোর বিকের নেতৃত্বে পাবলিক তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন।

ঘটনার ঠিক তিনমাস পর ১৪ই সেপ্টেম্বর মি. মার্টিন তদন্ত শুরু করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘তদন্ত প্রক্রিয়াটি প্রতিক্রিয়াশীল নয়, এটি কাউকে শাস্তি প্রদান কিংবা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা নয়। এটা কেবল সত্যের কাছে পৌঁছানো।’

স্যার মার্টিন ৩৫ জনের একটি দলের সহযোগিতায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন , যার মধ্যে একটি আইনি দল, বেসামরিক কর্মচারী এবং তিনজন পরামর্শদাতা রয়েছে। ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার গত ২১ মে থেকে ৯ দিনব্যাপী নেওয়া হয়েছে।

তদন্তের প্রথম পর্বের প্রতিবেদন এ বছরের অক্টোবর নাগাদ প্রকাশ করা হবে বলে আশা করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত তদন্ত দল। দ্বিতীয় পর্ব নতুন বছরের শুরুতে এবং পূর্নাঙ্গ তদন্ত প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এর হাতে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে অনুসন্ধানে ৭ জন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ছয় মাস বয়সী এক মৃত শিশুকে পাওয়া গেছে মায়ের হাতের মধ্যে। শিশুটির মা ফারাহ হামদানকে ১৯ ও ২০ তলার মধ্যখানে পাওয়া যায় । এসময় তার হাতেই ছিল তার ৬মাস বয়সী হতভাগ্য শিশু লিনা। একই সাথে লিনার ৮ বছর বয়সী বোনকে ২০ তলা থেকে উদ্ধার করা হলেও হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের বক্তব্য :
গ্রিণফেল টাওয়ারে নিজ পরিবারের চারজন সহ মারা যান মৌলভীবাজারের কমরু মিয়া। কমরু মিয়ার ভাগ্নে ও কমিউনিটি নেতা, কে এম আবু তাহির চৌধুরী বলেন, গ্রিণফেল টাওয়ারের অগ্নিকান্ডের পর একটি প্রতারক চক্র নিহতদের স্বজন সেজে হাজার হাজার পাউন্ড হাতিয়ে নেয়। পুলিশ এখন এদের গ্রেফতার করছে। কমরু মিয়ার পরিবার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করে তাহির চৌধুরী বলেন, কমরু মিয়ার এক ছেলে যিনি ঐদিন ঘরে না থাকায় বেচেঁ গিয়েছিলেন।

কমরু মিয়ার ভাতিজা আবদুর রহিম বলেন, আমরা প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের যথাযথ ক্ষতিপূরন দাবী করছি।

ব্রিটিশ মিডিয়াতেও গল্প সাংবাদিকতা :
লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে ভয়াল অগ্নিকান্ডের দু সপ্তাহ পর সনাক্ত হয় হোসনা ও তার মায়ের লাশ । এরপর পাওয়া যায় পরিবারের অপর সদস্যদের লাশ। এর মধ্যে হোসনা’র লাশ পাওয়া যায় ১৭ তলার লিফটের পাশে। তার মার ৬৪ বছর বয়সী রাবেয়া বেগমকেও একই ফ্লোরে নিজেদের ফ্লাটে পাওয়া যায়। ডেন্টাল রেকর্ড পরীক্ষার মাধ্যমে মা মেয়ের লাশ সনাক্ত করা হয়। 

এদিকে, মা মেয়ের লাশ পাওয়া গেলেও বাবা ও দু ছেলের লাশ সনাক্ত না হওয়া ও ভিন্ন ভিন্ন স্থান থেকে মা মেয়ের লাশ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে কিছু ব্রিটিশ মূলধারার মিডিয়ার গল্প সাংবাদিকতার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এর আগে '৯০ বছরের অতীশিপর বৃদ্ধ বাবা কমরু মিয়াকে নীচে নামানো সম্ভব না হওয়ায় দেড় ঘন্টা সময় পেয়েও ভবন থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেননি হোসনা,তার মা ও দু ভাই" এমন আবেগের গল্পময় আর যুক্তিসল্পতায় পুর্ন রির্পোট প্রকাশ করে কিছু ইংলিশ দৈনিক। পরিবারটির বাকী সব সদস্য কমরু মিয়াকে রেখে নিজেদের জীবন বাঁচানোর কোন চেষ্টা করেননি বলেও উল্লেখ করা হয় রির্পোটগুলোতে। আর আদৌ সেটি ঘটলে পাচঁজনের লাশ নিজেদের ফ্লাটে থাববার কথা। সেখানে হোসনার লাশ লিফটের পাশে,আর মায়ের লাশ নিজেদের ফ্লাটে মিলল কি করে? বাবা আর দুভাইয়ের লাশও মিলল না সেস্থানে। যেখানে তাদের শিরোনাম ছিল 'একই সাথে মরতে মৃত্যুকে বরন'।

অনেকে বলছেন, এত প্রানের হানি আর দায়িত্বশীলদের অবহেলা আড়াল করতে ই এমন রির্পোট প্রকাশ করে পাঠকের দৃষ্টি সরাতে চেয়েছিল তারা।

অথচ, সুযোগ আর দেড় ঘন্টার মত সময় পেলে দুজন তরুন পুত্র সহ পরিবারের অন্য চার সদস্যের পক্ষে কমরু মিয়াকে কাধেঁ করে হলেও বয়ে নামানো সেক্ষেত্রে অসম্ভব হত না- এমন মন্তব্য অনেকের।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.