Sylhet View 24 PRINT

ভোগান্তির আরেক নাম বিমান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০৮ ০১:২১:৩৫

আহমেদ আবুল লেইস :: বর্তমান আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হচ্ছে আকাশপথ আর পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই তাদের নিজস্ব পন্য ও যাত্রী পরিবহনের জন্য সরকারী উড়োজাহাজ থাকে, যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে ৪টা ফেব্রুয়ারি “আকাশে শান্তির নীড়”‎ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে লাল সবুজের পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর জন্ম হয়।

আন্তর্জাতিক রুটে যাত্রী এবং মালামাল পরিবহনের পাশপাশি আভ্যন্তরিন সেবাও প্রদান করে থাকে। বিশ্বের প্রায় ৪২ টি দেশের সাথে এর আকাশ সেবার চুক্তি থাকলেও মাত্র ১৬টি দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করে।
অন্যান্য দেশের সরকারী বিমান সংস্হা গুলি লাভজনক হলেও আমাদের কিন্তু দূর্নিতী আর অসাধু অব্যাবস্থাপনার জন্য রাষ্ট্রীয় এই প্রতিষ্ঠানটি বারবার লোকসান হতে মুক্তি পাচ্ছে না।

বর্তমান সরকার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার এর মত কয়েকটি নতুন মডেলের আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত উড়োজাহাজ লিজে কিনলেও যাত্রী সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অভিযোগ রয়েছে,অনেক সময় বিমানের টিকেট সংকট আছে বলে কর্তৃপক্ষ জানায় অথচ ফ্লাইটের সময় আসন ফাঁকা থাকে, কিছুদিন আগে বিমানের খাবার খেয়ে একজন প্রবাসী সাংবাদিকের ডাইরিয়া হওয়ার কারনে সপ্তাহখানেক হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। সময়মত ফ্লাইট না হওয়া এখন নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার। হাজারো যাত্রীর অসন্তোষ আর নালিশ যেন বিমানের পিছু ছাড়ছেনা। গেল কিছুদিন আগের আমার ব্যক্তিগত ভ্রমনের অভিজ্ঞতা ছোট্ট করে তুলে ধরতে চাই।

গত ৫ই সেপ্টেম্বর সিলেট টু লন্ডন ফ্লাইট নং বিজি ০৬০৪ ফ্লাইট যাত্রীরা ঢাকা হয়ে সরারসরি লন্ডন যাওয়ার কথা, যার ফ্লাইট নং বিজি ০০০১। যাত্রার শুরুতেই সিলেট থেকে ১৫ মিনিট বিলম্বে বিমান ছাড়লেও এটাকে সবাই স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবেই মেনে নিয়েছিলেন কিন্তু বিপত্তি ঘটে ঢাকা থেকে লন্ডন যাত্রার সময়। ফ্লাইট যেখানে লোকাল সময় সকাল ৯.৫৫মিনিটে ছাড়ার কথা সেখানে যাত্রীরা ১১.৫৫মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষমাণ থাকার পরে বিমান কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদক দেরী হওয়ার কারন জানতে চাইলেন এবং কেন কোনো আগাম ঘোষণা করা হলনা ? ডিউটি অফিসার এনামুল হক প্রথমে বিমান বহরে নতুন ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন তাই বিলম্বিত হচ্ছে বলে জানান। পরে আমাদের চোখের সামনে যখন অন্যান্য এয়ারলাইন্স গুলো অবিরত উডডয়ন ও অবতরন হচ্ছে কেন ? এর সটিক জবাব দিতে ব্যর্থ হন। একেক সময় একেক ত্তজর দেখান তিনি।

এদিকে প্রায় ৫০০ যাত্রীদের মধ্যে সিংহভাগই বৃদ্ধ মহিলা ও বাচ্চা এবং অনেক রোগীসহ প্রতিবন্ধী লোকও ছিল যারা দীর্ঘক্ষন না খেয়ে থাকার ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তারা এমনকি পানি পর্যন্ত সর্বরাহ করেনি। পৃথিবীর যেকেনো দেশে যদি কোনো পরিবহন এক মিনিটও দেরী করে তাহলে তারা ড্রিংক অথবা হাল্কা খাবার পরিবেশন করে থাকে এটাই স্বাভাবিক। আর এখানে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষায় থেকেও একজন যাত্রীদেরকে বিমানের পক্ষ থেকে দুঃখিত বলার মত সৌজন্যতাবোধ দেখায়নি। এ কেমন ভদ্রতা ? পরবর্তীতে ক্রুদ্ধ যাত্রীদের দাবীর ফলে হাল্কা খাবার ও পানি পাঠাতে বাদ্য হয়। আমরা বার বার দেরীর কারন উদঘাটনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে বিমানের উর্ধতন অফিসারের কয়েকটি নাম্বারে ফোন করি কিন্তু কোনোটাতেই কেউ ফোন রিসিভ করেনি। পরবর্তীতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের প্রধান সিকিউরিটি সদস্য এমদাদুল হক জানান ঐদিন সকালবেলায় তার কাছে লন্ডন থেকে তথ্য এসেছে যে,কে বা কারা আমাদের ফ্লাইটে নাকি বোমাবর্ষণ করার পরিকল্পনা করেছিল তাই সকলের লাগেজ প্রথমে ২০% পরে ১০০% রিস্ক্যানিং করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাঁচ ছয়জনকে আলাদা আলাদা করে অনেকক্ষন যাবত যাত্রীদের তল্লাশী করেছিল। তেরো জন ব্রিটিশ নাগরিককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং খুব দ্রুত চেকআপ শেষ হবে বলে জানান। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সময় বেলা ১.৩০ মিনিটে দীর্ঘ চার ঘন্টা অপেক্ষার অবসান ঘটল এবং হিথরো এয়ার পোর্টে বেলা ৩.৫৫মিনিটে অবতরন করার কথা থাকলেও রাত ৯.০০ ঘটিকায় ফ্লাইট নামে। শেষ হয় এক দুর্ভোগের ভ্রমন।

কিন্তু এই বিলম্বের ফলে হয়রানি ও দুর্গতির স্বীকার যাত্রীদের ক্ষয়ক্ষতি কে দিবে?

মুনিম নামের ডেভন, ইউকের বাসিন্দা যিনি লন্ডন থেকে ২৫০ মাইলস দুরে থাকেন এবং তার কোচে সিট রিজার্ভ করা ছিল বেলা পাঁচটায় এবং তার বাসায় পৌছাতে হিথরো থেকে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় লাগে। লন্ডনেও তার তেমন কোনো পরিচিত কেউনেই যে,রাত কাটাবেন। তিনি ভেবে পাচ্ছেন না কি করবেন। ভবিষ্যতে বিমানে ভ্রমন করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

নেচার আহমদ নামের অপর আরেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন তার প্রতিবন্ধী শিশুর জন্য স্পেশাল সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ট্যাক্সি আগে থেকেই বুকিং করে রেখেছিলেন যেটি ৫.৩০মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষমান থাকার কথা কিন্তু এখন চার ঘন্টারও অধিক সময় সেই ট্যাক্সি থাকার কথা না। আর প্রি বুকিং ব্যতিত এইরকম ট্যাক্সি সহজলভ্য না। এখন উপায় কি হবে তাই তিনি বাচ্চা ও পরিবার নিয়ে খুবই চিন্তিত আছেন।

কমিউনিটি নেতা শামীম আহমদ, লন্ডনের বাসিন্দা জানান যে, এই বিড়ম্বনা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।সিলেট থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু না হওয়া পর্যন্ত মানুষের কষ্ট লেগেই থাকবে। যত দ্রূত সম্ভব এটা বাস্তবায়ণ করার জোর দাবী জানান তিনি।

মানুষ এখন ঠাট্টা করে বিমানকে বেঈমান হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।এই রকম শত শত মানুষের অভিযোগ মাথায় নিয়ে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ বিমান তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। কতৃপক্ষের কোনো টনক নড়ছে না। যদি এভাবে চলতেই থাকে তবে মানুষ অন্য এয়ার লাইন্সেই নিজ দেশে যেতে বাদ্য হবে। জনগনের হাজার হাজার কোটি টাকার এই সম্পদ লাভের মুখ কখনো দেখবে বলে মনে হচ্ছে না।

বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিমানের যাত্রী সেবার মান উন্নয়ন নিশ্চিত ও সময়মত ফ্লাইট উড্ডয়নের ব্যবস্হা না করলে অচিরেই রাষ্টীয় কোষাগারকে সমৃদ্ধ করার একটি গুরুত্ব পুর্ন আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাবে।

সম্পাদক : মো. শাহ্ দিদার আলম চৌধুরী
উপ-সম্পাদক : মশিউর রহমান চৌধুরী
✉ sylhetview24@gmail.com ☎ ০১৬১৬-৪৪০ ০৯৫ (বিজ্ঞাপন), ০১৭৯১-৫৬৭ ৩৮৭ (নিউজ)
নেহার মার্কেট, লেভেল-৪, পূর্ব জিন্দাবাজার, সিলেট
Developed By - IT Lab Solutions Ltd.