আজ বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ইং

মাধবকুণ্ডের কথা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৭-২২ ২২:১৮:৪৪



:: মাতুব্বর তোফায়েল হোসেন ::


মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় এটি অবস্থিত। সবাই বলে জলপ্রপাত, কিন্তু মনে হবে, জলময়ুরী পেখম খুলে সদা নৃত্যরত।

প্রথম মানুষ। যে এই কুণ্ডটা খুঁজে পেয়েছিলো। সে কোনো রাজা-টাজা ছিলো না। তৃষ্ণার্ত পথিক কিংবা যাযাবর মানুষ। হতে পারে বসতি গড়ার চেষ্টা অথবা বিদ্যমান বসতির সম্প্রসারণ। প্রথম প্রাণী, হিংস্র কিংবা নিরীহ ছিলো যে, ঘড়ুত ঘড়ুত করে জল খেয়ে গেছে পেট ভরে। জলের ছড়ার আশে-পাশে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। ক্রমেই মানুষ জড়ো হতে থাকে। ঘন জঙ্গল পরিণত হয় লোকালয়ে। জল থেকে জীবন, জলেই বাঁচে জীবন। কুণ্ডটা তাই জীবনের যাপন ও বিচরণ সম্ভবপর করে তুলেছিলো। এই কুণ্ড ঈশ্বরের মহিমা নিয়ে বহুকাল ধরে দাড়িয়ে আছে। পূর্বপুরুষের প্রাণের দান ভেবে শুরুর দিককার মানুষেরা এটিকে পবিত্র জ্ঞান করেছে। এখানে প্রার্থণা-উপাচার চলতো। গোটা একটা জনগোষ্ঠীর বেঁচে থাকার অবলম্বন 'মাধবকুণ্ড' সেই থেকে মানুষের পরম আদরের বস্তু। এটি মানুষের চোখে সমীহ জাগিয়ে রেখেছে সব সময়, মানুষ পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা মেশানো অলৌকিক অনুভূতি দ্বারা তাড়িত হয়ে অবাক চোখে তাকিয়েছে এর দিকে, তাকায় আজো।

প্রায় দুইশো ফুট উঁচু পাথারিয়া পাহাড়ের উপর থেকে জলরাশি পাহাড়টার গা বেয়ে অবিরাম ধারায় শোঁ শোঁ শব্দে নিচে পড়ছে। অবিশ্রাম পানি পতনের ফলে নিচে সৃষ্টি হয়েছে কুণ্ডের। বিপুল জলের প্রবাহ-ধারা শান্তির বারিধারার মতো মাধবছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মাধবকুণ্ডের নামকরণ সম্পর্কে প্রচলিত আছেঃ
শ্রীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন রাজা, সিলেটের শেষ হিন্দু রাজা, গৌড়গোবিন্দের বংশধর। সে খুব সম্ভবত তেরশো পঁয়ত্রিশ খ্রিস্টাব্দে পাথারিয়া পাহাড়ে শিকারের উদ্দেশ্যে গমন করে। তখন সে কুন্ডের পাশে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ কাজ শুরু করতে গিয়ে মাটির নিচে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় একজন সন্যাসীকে দেখতে পায়। সন্যাসীর নাম মাধবেশ্বর। তখন রাজা গোবর্ধন ঐ সন্ন্যাসীর পদবন্দনা ও স্তূতি করলে সন্যাসী তার উপর সন্তুষ্ট হয়। সন্যাসী রাজাকে জানালো, সে বহু বৎসর এখানে পড়ে আছে, গঙ্গাদেবীর সাথে মিলিত হবার ইচ্ছা তার। আর সেটা বিষর্জিত হবার মাধ্যমেই কেবল সম্ভব। সেজন্য মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে তাকে এ কুণ্ডে বিসর্জন দিতে রাজাকে অনুরোধ করে। রাজা সেই মতো কাজ করলো। সন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র অর্থাৎ গঙ্গাদেবীর সাথে মাধবেশ্বর মহাদেবের মিলন হওয়া মাত্র তিনবার 'মাধব মাধব মাধব' নামে দৈববাণী হয়। সম্ভবত এ থেকেই মাধবকুণ্ড নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে, মহাদেব বা শিবের পূর্বনাম 'মাধব' এর নামানুসারে তার আবির্ভাব স্থানের নাম মাধবকুণ্ড।

এ কুণ্ডের পাশেই স্থাপন করা হয়েছে শিবমন্দির। এই মন্দিরের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। যে পাহাড়টির গা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এ পাহাড়টি সম্পূর্ণ পাথরের। এর বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে ছড়া। ছড়ার উপরের অংশের নাম গঙ্গাইমারা ছড়া আর নিচের অংশের নাম মাধবছড়া। পাহাড়ের উপর থেকে পাথরের ওপর দিয়ে ছুটে আসা পানির স্রোত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে হঠাৎ খাড়াভাবে উঁচু পাহাড় থেকে একেবারে নিচে পড়ে যায়। এতে দুটি ধারা সৃষ্টি হয়। একটি বড়, একটি ছোট। বর্ষাকালে ধারা দুটি মিশে যায়। মনে হয় বিরাট একটি ধারা। জলরাশি যেখানে পড়ছে তার চতুর্দিকে পাহাড়, নিচে কুণ্ড। কুণ্ডের মধ্যভাগে অনবরত পানি পড়ছে। ফলে স্থানটি অনেক গভীর।

কুণ্ডের ডান পাশে একটি পাথরের গহ্বর বা গুহার সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় ভাষায় এ গুহাকে কাব বলা হয়। এ সম্পর্কে 'শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত' গ্রন্থের লেখক অচ্যূত চরণ তত্ত্বনিধি লিখেছেন, এই কাব যেন বহু যত্নে মানুষের দ্বারা খোদিত পাথরের একটি একচালা ঘর, অথচ এ কাব প্রাকৃতিকভাবেই সৃষ্ট। কাবের পাশে ছোট্ট একটি মঠ দৃশ্যমান। জায়গাটিকে পবিত্র জ্ঞান করা হয়। ১৩৪২ বঙ্গাব্দে বিষ্ণুদাস সন্ন্যাসী মাধবকুণ্ডের পশ্চিমাংশে কমলা বাগান তৈরি করেন, সেই কমলা বাগান আজও আছে। মূল জলপ্রপাতের বাম পাশে প্রায় দুইশো গজ দূরে আরও একটি পরিকুণ্ড নামের জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকেও অনবরত পানি পড়ছে। কিন্তু সেখানে খুব কষ্ট করে যেতে হয়।

জলপ্রপাতের মাঝামাঝি পাথরের গায়ে কিছু ঘাস জন্মেছে। তার মধ্যে কঁচুগাছও আছে দেখলাম। কঁচুর পাতা সবাইকে ছাড়িয়ে জলের সাথে বাড়ি খায়। পাতায় বাড়ি খেয়ে পানির ছিটা লাগে, ঘাসের গোড়ায় তাতেই পানি পৌছায় পর্যাপ্ত। মজার বিষয় হলো, ঘাসগুলো মাথা বেশি বাড়ালে জল-ধারার আঘাতে বাধাগ্রস্ত হয়। বেশি বাড়ার সুযোগ মেলে না। ঐ দলছুট ঘাসেদের জন্য করুণা। করুণার আঁচলে পুরো অঞ্চলটাকেই বেধে রেখেছে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত।

কুণ্ডের ভেতর ডুব দিয়ে একাধিক পর্যটক প্রাণ হারানোর কারনে কুণ্ডে নামা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক পুলিশ প্রহরা রয়েছে, যাতে কেউ কুণ্ডে গোছল করতে না নামে। পরিবর্তে খানিকটা দূরে জল প্রবাহের নীচে পাকা ঘাটলা করে দেয়া হয়েছে। ওখানটাতে সবাই গোছল করতে নামে। বিশুদ্ধ জলের ধারায় গা ডুবিয়ে, গা ভিজিয়ে স্বর্গীয় অনুভূতি নেয় মানুষ। এ জলের ধারা স্বচ্ছ-সুমিষ্ট-অমৃত-সুধা। পাহাড়ের শরীর ঘেষে পতিত জলের ধারা যেন কোনো স্বর্গ-দেবীর বিকশিত দেহ-খন্ড। ঠান্ডা বাতাসের প্রবাহ এনে কুণ্ডের তলদেশে গরমে আরাম নিয়ে আসে। অলৌকিক সৌন্দর্য্যের এই নিত্য ভূমি আদরে আবেশে বিগলিত হবার উপলক্ষ তৈরি করে রেখেছে।

মাধবকুণ্ডের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলিকে আরো আকর্ষণীয় করেছে মাধবকুণ্ডের পাশের পানপুঞ্জিগুলি। সিলেটের জৈন্তা পাহাড় থেকে আগত খাসিয়া উপজাতিদের শ্রমে গড়ে উঠেছে এগুলি। পানের লতাগুলো প্রতিটি বৃক্ষকে শাড়ির আঁচলের মতো জড়িয়ে রেখেছে। দক্ষিণ দিকের পাহাড়ে তাকালে খাসিয়াদের বসত-বাড়ি দেখা যায়। ঘরগুলো পাহাড়ের উপর থেকে নীচের দিকে একটার পর একটা লেগে আছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে, বসত-ঘরগুলো যেন পাহাড় ধরে ঝুলছে। পাশাপাশি কেরেছগাতা, গঙ্গাইমারা ছড়া, নাগিনী টিলা, পরিকুণ্ড অপেক্ষাকৃত দুর্গম স্থানে অবস্থিত। এগুলো বাড়তি সৌন্দর্য। বিস্তৃত প্রান্তর জুড়ে চাবাগানগুলো মনোরম সৌন্দর্যের আধার হয়ে বিরাজমান। কেরেছগাতায় একটি কেরোসিন তেলের খনি ছিলো। বৃটিশরা এখান থেকে তেল উত্তোলন করেছিলো। এই তেল পরিবহণের জন্য রেলপথও নির্মিত হয়েছিলো।

কথিত আছে, মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে একবার কৃষ্ণনগরের রাজা লালাগৌড় হরি তার মাকে নিয়ে মাধবকুন্ডে পূণ্যস্নান করতে আসেন। গঙ্গাস্নানের পর বিশ্রামের প্রসঙ্গ এলে মা তাকে বললো, পরের জায়গায় কিভাবে বিশ্রাম করবো? রাজা তখন বিরাট এলাকা পনেরো শো টাকায় কিনে নেন। বর্তমান মাধবকুন্ডের পশ্চিম অংশের নিকটবর্তী গ্রামটিই নাকি সেই গ্রাম। প্রতিবছর এই কুন্ডে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশ তিথিতে বারুনী স্নান উৎসব হয়।

মাধবকুন্ডের উৎপত্তি সম্পর্কে বলা হয়, হাজার বছর পূর্বে এই এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছিলো। ফলে জায়গাটিতে কিছু উলট-পালট হয়। পৌরাণিক যুগে বর্তমানের মতো জলপ্রপাত ছিলো না বলেই মনে হয়। ছিলো কতগুলো ছড়া। ছড়াগুলো কুলুকুলু বয়ে যেতো পাহাড়ের উপত্যকা দিয়ে। ভূমিকম্পের প্রভাবে উপত্যকার এক অংশ টিলার অংশ হিসেবে উপরে উঠে যায়, অপর অংশ নীচে নেমে যায়। ফলে ছড়ার পথ হঠাৎ এই স্থানে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুইশো ফুট নিচে পড়ে যায়। সেই থেকে পানি পাহাড়ের গা ঘেষে পতিত হয়ে অতপর ছড়া দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর এই লাফ দিয়ে জলধারার নৃত্যঢঙে পথ পেরোতে গিয়েই সৃষ্টি হয়েছে মনোহর দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য। যেটাকে আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে উচু জলপ্রপাত বলা হচ্ছে। শুধু মাধবকুন্ড জলপ্রপাত নয়, পৃথিবীর প্রায় সকল জলপ্রপাত সৃষ্টি হবার পেছনেই রয়েছে কোনো না কোনো বিরাট ভূমিকম্প।

"মাধবকুণ্ড ঝর্ণা
কোন রাজার দুহিতা তুমি, উজ্জ্বল বর্ণা?
উচ্ছল তরঙ্গে ছলকে ফেলো জল
ডাগর আঁখিতে যেন টলমল।"
একজন স্থানীয় কবির উচ্চারণ। সত্যি মাধবকুণ্ড যেন রাজার দুহিতা।

জীবন যার তছনছ হয়ে আছে, জন্মের অভিশাপ মাথায় নিয়ে ভগ্ন হয়েছে হৃদয় যার, অগতির নিরুপায়ে বিভ্রান্ত যার মতি-গতি, পতিত হবার পাপ-মনস্তাপে সুতীব্র দংশনে আহত যার মন, প্রেম কিংবা অপ্রেমে ছিন্নভিন্ন যেজন, আসুক সে এইখানে নেমে, দেখুক অপূর্ব সুন্দরী এই ঝর্ণাধারার দেহভঙ্গিমা। জল পতিত হবার শব্দ শুনুক, জল ছড়িয়ে পড়ার দৃশ্য দেখুক, জল গড়িয়ে যাবার পথ ধরে চোখ রাখুক। জীবনের গ্লানি, ব্যর্থতা-বিদুরতা, মুহূর্তেই তার নির্বাপিত হবে। কুন্ড আর কাবের মাঝখানে ঘুরপাক খাওয়া জল নিঃশব্দ-নির্বিঘ্নে পথ বাহির করে ঝিরিঝিরি বয়ে যায় ছড়ার পথ ধরে। প্রপাতের সাদা দেহের ছন্দ দেখতে দেখতে পথিকের মন উদাস হবেই, প্রেমে বিগলিত মন হাজার রকম হাতখুলে জড়িয়ে ধরতে চাইবেই, রুপালী ঝরণার ধারা বেয়ে বেয়ে স্বর্গের সিড়ি ধরার স্বাদ সে নেবেই, নীল আসমানের নীচে অলৌকিক এ দৃশ্য রূক্ষ মানুষের মেজাজেও শীতল পরশ এনে দেবেই, মানুষ এখানে এলে ক্ষণিকের জন্য হলেও নিজেকে অপার্থিব জীব বলে অনুভব করবেই।

এই দুর্গম প্রান্তরে দুই পাহাড়ের চ্যূতি ধরে অন্ধগলির মতো আটকানো এই কুণ্ডে প্রথম মানুষের পদস্পর্শের কথা ভেবে রোমাঞ্চিত হই আমরা। আজ এই বিক্ষুব্ধ নাগরিক জীবনের অসহ্য উত্তাপে দগ্ধ অনুভূতির সুতো ধরে সেই প্রথম মানুষের সহজ-সরল আবিষ্কারের কাছাকাছি পৌছে বিরাট বিস্ময়ের ঘোর লাগে মনে। মানুষ শুধু তৃষ্ণার জল চেয়েছিলো। মাধবকুণ্ডে এসে সেই জল পেয়ে কেমন উৎফুল্ল ভাবখানা ধরেছিলো, আমরা তা চর্মচক্ষে দেখার সুখ পাবো না কোনোদিন। আমরা সেই প্রথম মানবের উত্তরসূরি, পাকা সড়কে গাড়ির ভেতর দেহ সমর্পণ করে হনহন করে পৌছে যাই ঝিরির কাছে, সাদা দীর্ঘদেহী রূপবতীর কাছে। মনে হয় তার পায়ের কাছে হীন-দাস হয়ে মাথা কুটে মরি, আবেগে আপ্লুত উচ্ছল প্রাণে দীর্ঘ দেহ বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে রাখি। জড়িয়ে জড়িয়ে, পাক খেতে খেতে আর ঘষে ঘষে মাড়িয়ে যাই তার গোটা দেহ। উঁকি দেয়া আকাশের পরিহাসকে ভ্রক্ষেপ না করে বেশরম প্রেমে উন্মাতাল হই, পৌছে যাই পাথারের চূড়ায়, যেখানে বিচরণ করে পশু আর পাখি।

প্রেয়সী মাধবকুন্ডের জলপ্রপাতের ঢেউ লাগে আবিষ্ট হৃদয়ে এসে, তামসী মাধবকুন্ড জলের প্রপাতে বিদ্ধ করে হৃদয়, তীব্র শেল হেনে চূর্ণ করে দেয় আবেগী পরাণ, পরাণে হৃদয় থাকে, হৃদয়ে প্রেম থাকে, প্রেম ছড়িয়ে আহত হয়ে পড়ে থাকে দুই পাহাড়ের ভাঁজে। বেশি বেশি ভালোবাসার উগ্র আবেগ যখন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হৃদয়ে তীব্র হয়ে বাজে, রূপসী ঝরণার অপূর্ব ছন্দ এসে জোড়া দিয়ে যায়, জোড়া দিয়ে প্রেমের মানুষকে খাটি প্রেমিকের আদল দিয়ে দেয়। অনাবিল আশ্বাস আর অলৌকিক ইশারায় মানুষ যেন নিরাকার অমরত্ব লাভ করে। মরার পরেও মানুষ প্রেমে উত্তীর্ণ হবে, জীয়ন্তে মরার দল একদিন ঠিক পৌছে যাবে প্রেমের প্রত্যাশিত মনজিলে। নিষ্ঠুর মানুষের মন বিগলনের শিকার হবে, ভ্রষ্ট আত্মা তার সাধনার উপায় খুঁজে পাবে। এ ভঙ্গ সমতলে পতিত জল পতিত-পাবনের মত ধরা দেবে তার কাছে।

বাংলার বহু দৃশ্য চোখে দেখেছে, করেছে ভ্রমণ অজস্র কিনারায়, এমন যেজন এখনো আসে নি মাধবকুণ্ডে, সে বড় দুর্ভাগা। 'সব দেবতারে ছেড়ে আমি আমার প্রাণের কাছে চলে আসি'র মতো প্রতিটি মানুষের একবার হলেও এই দিকে আসা দরকার। এ দরকার শুধু দৃশ্য দেখার জন্য নয়, তথ্য জানার জন্যও নয়। এ দরকার হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করার, এখানে এলে উদ্যত মন ভীষণ শান্ত হয়। হাজার বছর ধরে ঘাড় উঁচিয়ে দাড়ানো পাহাড় কালের সাক্ষী হয়ে থাকে, তার সমুখ দিয়ে বহু প্রাণী কিংবা মানুষ হেটে চলে গেছে, তারা সব মরে গেছে, সব ঐ পাহাড়ের সামনে দিয়ে গেছে, যেতে থাকবে অনন্তকাল। এই বিরাটের কাছে কোনো অহংকারেরই পাত্তা নেই জেনে ঠান্ডা জলের ঝিরঝির হাওয়ায় চঞ্চল মনে প্রশান্তির স্রোত নেমে আসে।

মাধবকুণ্ডের রূপ সুধা উপভোগ করতে করতে মগ্ন চৈতণ্য যখন আন্দোলিত হয়, তখন জীবনানন্দ দাসের মতো বলে উঠি,

'আমি সব দেবতারে ছাড়ি আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে:
সে কেন জলের মতো ঘুরে-ঘুরে একা কথা কয়!
অবসাদ নাই তার? নাই তার শান্তির সময়?
কোনোদিন ঘুমাবে না? ধীরে শুয়ে থাকিবার স্বাদ
পাবে না কি?'

লেখক :: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন