আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আওয়ামী লীগের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

পীর হাবিবুর রহমান

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০৭-১২ ০০:৩৯:০৮

ঘটনাবহুল বাংলাদেশে একের পর এক চিত্রপট বদলে যায়। একটি বিষয় বা ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি চলে আসে। কখনো রাজনৈতিক, কখনো বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমাদের উদ্বিগ্ন করে তোলে। কখনো জঙ্গিবাদের আঘাত আমাদের ক্ষতবিক্ষত করে, আবার সন্ত্রাসবাদের দমন আমাদের স্বস্তি এনে দেয়। সবচেয়ে বুকভরা আনন্দ দেয়, আমাদের সোনার ছেলেরা যখন ক্রিকেট দুনিয়াকে কাঁপিয়ে দেয়। বাজেট পাস হয়ে গেছে।   এবারের মতো বাজেট নিয়ে সরকারকে অতীতে কখনো সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে এত সমালোচিত হতে হয়নি। অর্থমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ও অতিকথন বাজেট নিয়ে জনঅসন্তোষ তৈরি করেছিল। সবচেয়ে অবাক ব্যাপার জনগণ ক্ষমতাবানদের কাছে পায় না। চায়ের দোকানে বসে সমালোচনা করে। সংসদ সদস্যরা সংসদে অর্থমন্ত্রীকে তুলাধোনা করতে ভুল করেননি। কিন্তু যে বাজেট মন্ত্রিসভায় পাস হয়ে এসেছিল, সেই বৈঠকে উপস্থিত হয়ে অনুমোদনে ভূমিকা রাখা কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও যখন সংসদে দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করেন, সেখানে আমাদের অবাক ও বিস্মিত হতে হয়।

অবশ্য, একপর্যায়ে প্রবীণ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীকে ডিফেন্স করলেন। বললেন, বাজেট প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী অনেককে নিয়ে করেছেন। আমরা মন্ত্রিসভায় সেটি অনুমোদন করেছি। তোফায়েল আহমেদের যুক্তিসঙ্গত বক্তব্যের পর একে একে আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনুরা দাঁড়িয়ে অর্থমন্ত্রীর পক্ষেই কথা বললেন। সংসদের বাইরের পরিবেশ যাই হোক, সংসদের ভিতরে পরিস্থিতিটা পাল্টে গেল। তোপের মুখে পতিত, একা, নিঃসঙ্গ অর্থমন্ত্রীও শক্তি এবং স্বস্তি পেলেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট পাসের আগে যে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন সেটিই কার্যকর করলেন বাজেট পাসের সময়। অর্থাৎ ব্যাংকের আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা করে দিলেন। অন্যদিকে বর্ধিত কর দুই বছরের জন্য স্থগিত করে দিলেন।

আগামী নির্বাচন ঘিরে যেসব কর্মকাণ্ড আবর্তিত হচ্ছে, চারদিকে ঘটে যাওয়া সব আলামত তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। বাজেট ঘিরে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল সেটি স্তিমিত হয়ে গেছে। সরকার ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছে। বিশাল আকারের বাজেট দিচ্ছে বছরে বছরে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করছে। উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ দিয়ে আওয়ামী লীগ ছোট ছোট নেতাসর্বস্ব রাজনৈতিক মিত্রদের নিয়ে আগামী নির্বাচনে বাজিমাত করতে চাইছে।

ক্ষমতার জন্য যেখানে রাজনীতি সেখানে কি সরকারি দল, কি বিরোধী দল; জনগণের হৃদয় জয় করেই ক্ষমতায় যেতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কিছু দিন ধরে টকশোতে ডাক পেলেও যেতে পারছি না। গোটা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ আর নিজের নিউজপোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি.নিউজ নিয়েই ব্যস্ত আছি। যে সংবাদ প্রিন্ট মিডিয়ায় ছাপালে তথ্যপ্রযুক্তি আইন ৫৭ ধারা কার্যকর হয় না, তা নিউজপোর্টালে প্রকাশ হলে ৫৭-এর খড়গ নেমে আসে। ৫৭-এর খড়গ তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবের এই যুগে গণমাধ্যমের একটি অংশ অনলাইন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে রেখেছে।

এত এত প্রিন্ট মিডিয়া, এত এত ইলেকট্রনিক মিডিয়া; তার চেয়ে যে কোনো ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ভাইরাল হচ্ছে। মানুষের মুখের প্রচারের চেয়ে শক্তিধর প্রচার আর কোনো কিছু নয়। অনলাইন নিউজ পোর্টাল তার সংবাদ পাঠকদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজে শেয়ার দিয়ে থাকে। পাঠকের একটি বড় অংশ যুক্ত হন ফেসবুক থেকে। এখানে ৫৭ আর ওখানে ব্লকের ব্যবস্থা। এতে করে অনলাইন সাংবাদিকতা এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে সময় অতিক্রম করছে।

বাংলাদেশের মানুষের আপনজন চির বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের নাতনি অনিন্দিতা কাজী এপার ওপার বাংলা ও প্রবাসে সমান জনপ্রিয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গ নজরুল একাডেমির সহ-সভাপতিই নন, নজরুল সংগীতের সমজদার শিল্পীই নন, টিভি উপস্থাপকই নন; একজন অনিন্দ্য সুন্দরী, রুচিশীল, উদার, সংস্কারমুক্ত রমণীও। কিছু দিন আগে গিয়েছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। নিউজার্সিতে তিনি যেতেই একজন শাহীন তরফদার, যার নাম পরিচয় মানুষ জানতেন না; তার সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। অধিকাংশ গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করেছিল, অনিন্দিতা কাজী যে পুরুষকে বিয়ে করেছেন তিনি এর আগে প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীনের ছোট বোন গায়িকা লীনুকে বিয়ে করেছিলেন।

নিউজার্সি প্রবাসী শাহীন তরফদারের এটি পঞ্চম বিয়ে। লিনি সাবরীনকে বিয়ে করার আগে তিনি তার প্রথম স্ত্রী ইরানিকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন। লিনির সঙ্গে সম্পর্ক থাকা অবস্থায়ও কাউকে কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। লিনি সাবরীনের সঙ্গে বিচ্ছেদের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে। এরপর তিনি ঢাকায় তনুজা নামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। এখানে দুধের শিশুসহ পরিবাগের ফ্ল্যাট থেকে তনুজাকে বের করে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে কঠিন মামলায়ও পড়েছিলেন। প্রখ্যাত ডিফেন্স কৌঁসুলি মোশারফ হোসেন কাজল তাকে সে যাত্রায় রক্ষা করলেও মামলা শেষ হয়নি। এরপর নানা জায়গায় প্রত্যাখ্যাত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা মুনিরাকে বিয়ে করলেও সংসার ছয় মাসও টিকেনি।

কবি নজরুলের নাতনির সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কারণে এই মানুষটি খবর হয়েছিলেন। কিন্তু খবর আমাদের ফেসবুক পেজে শেয়ার করার পর তিনি অভিযোগ দিয়ে পেজের শেয়ার ব্লক করিয়ে দেন! যে কেউ চাইলেই ৫৭ ধারায় যখন তখন মামলায় সাংবাদিকদের হয়রানি করবেন, অন্যদিকে ফেসবুক পেজে সত্য সংবাদ শেয়ার করলে তিনি যত বড় বিয়ে পাগলাই হন না কেন, বহু বিবাহের সেঞ্চুরিই করুন; আপত্তি নেই। কিন্তু সত্য সংবাদ সহ্য করার ক্ষমতা রাখবেন না, তা কেমন করে হয়?

যাক, যে কথা বলছিলাম, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ যে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি, সেটি রাজনৈতিক অঙ্গনের আলোচনায় শুধু দৃশ্যমান হচ্ছে না, দলের নেতাদের বক্তব্যেও উঠে আসছে। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই আওয়ামী লীগ তার ঐতিহ্যের আন্দোলন, সংগ্রামমুখর ৬৮ বছরের পরিণত বয়সে দ্বিতীয় দফায় চূড়ান্ত বিকাশ হয়েছে। দলের প্রতিষ্ঠাতাদের কেউ দল ছেড়ে চলে গেলে, কেউ বিষাদগ্রস্ত হয়ে পথ হারালে, কেউবা মৃত্যুবরণ করলেও দলে শূন্যতা সৃষ্টি হয়নি। এই দলটি তৃণমূল বিস্তৃত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার হাত ধরে স্বাধিকার-স্বাধীনতার পথ ধরে সত্তরের ব্যালট বিপ্লবে গণরায় নিয়ে সুমহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করে বহু রক্ত আর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। আর বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর কঠিন জেল-জুলুম, দমন, নির্যাতনের মুখে সংগঠিত আওয়ামী লীগ যখন নেতৃত্বের লড়াইয়ে ভাঙনের মুখে পড়েছিল তখন দিল্লি নির্বাসিত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ঐক্যের প্রতীক হিসেবে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হিসেবে দলের হাল ধরেছেন, গণতন্ত্রের সংগ্রামে দীর্ঘ পথই হেঁটেছেন, বার বার মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার বিপদ কাটিয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় দল হিসেবে সংসদীয় গণতন্ত্রের নবযাত্রাকালে সামরিক শাসনোত্তর বাংলাদেশে দীর্ঘ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এনেছিলেন।

সম্প্রতি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেছেন, ’৯৬ সাল পর্যন্ত যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন তারাই প্রকৃত আওয়ামী লীগার। কারণ তাদের ত্যাগ অনেক বেশি। তারাই বিএনপি-জামায়াত দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এবং ওয়ান-ইলেভেনে ভূমিকা রেখেছেন। এটাই দলের নিরেট বাস্তবতা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থেকে নাটোরের আওয়ামী লীগ অ্যাডভোকেট সাজেদুর রহমান খান পর্যন্ত যে হাইব্রিড বা কাউয়া তত্ত্ব হাজির করেছেন সেটি ক্যানভাসে সুবিধাবাদীদের চেহারা তুলে এনেছে। এই সুবিধাবাদীরা যখন যে ক্ষমতায় সেখানেই ভিড় করে। এই সুবিধাবাদী মতলববাজরা এতটাই আওয়ামী লীগকে গত ৯ বছরে গ্রাস করেছে যে, মন্ত্রী, নেতা, এমপি সিন্ডিকেটে ঢুকে গেছে যে; যতদূর চোখ যায় চারদিকে শুধু আওয়ামী লীগ আর আওয়ামী লীগই দেখা যায়। অনেক জায়গায় আগুন সন্ত্রাস মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াতের কর্মীরাও নৌকায় উঠে এমপি হওয়া বর্ণচোরাদের কাছে আশ্রয় পায়। চারদিকে তাকালে মনে হয়, হাইব্রিড আর কাউয়াদের ভিড়ে সোনার তরীতে ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই অবস্থা।

আওয়ামী লীগ নির্বাচন সামনে রেখে অনু্প্রবেশকারী মতলববাজদের সরাতে চাইছে। কিন্তু রাজনৈতিক বাণিজ্যিকীকরণ বা রাজদুর্নীতির নেটওয়ার্কে ওরা যেভাবে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে তাতে আদৌ কি সরানো যাবে। ’৭৫-পরবর্তী কিংবা বিএনপি-জামায়াত শাসনামল এবং ওয়ান-ইলেভেনে সুবিধাবাদীদের বাতি দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। দল ক্ষমতায় এলে এরা মৌমাছির মতো উড়ে উড়ে আসে। দল ক্ষমতা হারালে এরা নীরবে উড়ে যায় মধু আহরণে। আর রাজপথে নির্যাতিত হয়, মামলা খায়, জেলে যায়, পঙ্গু হয় আত্মাজুড়ে বাস করা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত শেখ হাসিনার কর্মীরা।

বিএনপির সর্বনাশ করেছিল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত ছিল সততার প্রতীক। আর বিএনপি হয়েছিল দুর্নীতির বরপুত্রের দল। আওয়ামী লীগে আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী জনবিচ্ছিন্ন বামরা এসে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন, নেতা হয়েছেন, ক্ষমতা ভোগ করেছেন। তারা আওয়ামী লীগার হতে পারেননি, দলের ত্যাগী কর্মীদেরও হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতে পারেননি। সংগঠন আওয়ামী লীগের সামনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মাঠ পর্যায়ে বাণিজ্যিক কামড়া-কামড়িই নয়; এমপি হওয়ার প্রতিযোগিতায় চলছে বিভক্তির টানাপড়েন। সেখানে দলীয় প্রতীকে হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য আর দলাদলি, দ্বন্দ্ব টেনেছে গ্রাম পর্যন্ত। এই কোন্দল নিরসন আওয়ামী লীগের একটি বড় সাংগঠনিক চ্যালেঞ্জ। শেখ হাসিনা দুই হাতে উন্নয়নের প্রকল্প পাস করে দিচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে সেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ঘিরে একদল উন্নাসিক নেতা-কর্মী সুশাসনকে নির্বাসনে পাঠাচ্ছেন। উন্নয়নকে ধূসর করে দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগে একটি কথা প্রচলিত আছে, ‘আওয়ামী লীগ হওয়া যায় না, আওয়ামী হয়ে জন্মাতে হয়। ’ আওয়ামী লীগ হয়ে জন্মানোর আঁতুড়ঘর দুটি। একটি বঙ্গবন্ধুর তৈরি আওয়ামী লীগ পরিবার। আরেকটি ছাত্রলীগ। ষাটের ছাত্রলীগের সেই নেতারা যারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ইতিহাস সৃষ্টি করে রাজনীতির কিংবদন্তি হয়েছিলেন, তাদের একটি অংশ আদর্শিক লড়াইয়ে দূরে সরে গেছেন, নিজেদের নিঃশেষ করেছেন। আওয়ামী লীগে যারা ছিলেন তাদের অনেকেই ইন্তেকাল করেছেন। যারা জীবিত তারা চাইলে পরামর্শটুকু শুধু দিতে পারেন। বেঁচে আছেন বলেই রাজনীতি করেন। ’৭৫-উত্তর থেকে ’৯৬ পর্যন্ত ছাত্রলীগের কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা এখন সারা দেশে অভিভাবকত্ব করছেন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়নি, আওয়ামী লীগের সংগ্রামমুখর দিনে ভূমিকা নেই, বঙ্গবন্ধু কবে তাদের পিতাকে এমপি বানিয়েছিলেন সেই কারণে দল ও জনগণ বিচ্ছিন্ন সেই পুত্রদের ওপর থেকে চাপিয়ে দিলে দলের বিভক্তি আরও বাড়বে। এক সময় ছাত্রলীগ ছিল আওয়ামী লীগ রাজনীতির পথের শক্তি। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে যুবলীগ হয়েছিল একটি সুশৃঙ্খল আদর্শিক তারুণ্যনির্ভর শক্তিশালী লড়াকু সুসংগঠিত কর্মী বাহিনীর দল। হরতালের রাজপথে পুলিশের সঙ্গে পিকেটিংয়ে মারমুখী সাহস নিয়ে আলোচিত হয়েছিল যুব মহিলা লীগ। ২৬ বছর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় নেতৃত্ব তৈরি হয়নি। নেতৃত্ব তৈরি হয়নি আদর্শিক ছাত্ররাজনীতির ধারা বহমান না থাকায়। এমনই অবস্থায় তিন জেনারেশনের ছাত্রলীগ নেতৃত্বনির্ভর প্রবীণ ও নবীনের আওয়ামী লীগ সাজাতে না পারলে নির্লোভ আদর্শিক নেতৃত্বকে সামনে না নিয়ে আসতে পারলে গণমুখী আওয়ামী লীগ গড়ে তুলে জনগণের হৃদয় জয় করা কঠিন চ্যালেঞ্জ। যারা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নির্যাতন সহ্য করে রাজপথ দখল করে রেখেছিলেন তারা অনেকেই আজ উপেক্ষিত। এদের সবাই কি আজ দল করতে পারছেন? তাদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করার সময় এসেছে এই কঠিন চ্যালঞ্জ মোকাবিলায় মানুষের হৃদয় জয় করতে হবে।

এত এত টিআর, কাবিখা, এত এত উন্নয়ন বরাদ্দ জনগণের ভাগ্যোন্নয়নে সঠিকভাবে মানুষের দুয়ারে গেছে কিনা, নাকি এমপিদের সিন্ডিকেটকে খোরাক জুগিয়েছে সেটি বিচার করার সময় এখন। এক কথায় আওয়ামী লীগের একটি পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির জন্য আত্মসমালোচনা ও আত্মসংযমের পথ জরুরি।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন আজীবন মানুষের ভোটাধিকারের আন্দোলনের, গণতন্ত্রের সংগ্রামের চিরসংগ্রামী আওয়ামী লীগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাজনৈতিকভাবে বা প্রশাসনিকভাবে সংবিধানের দোহাই দিয়ে ওই নির্বাচন হজম করে বিরোধী দলের আন্দোলন সংগ্রাম দমন করে দাপটের সঙ্গে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারলেও গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের আদর্শিক সংগ্রামের অবিচল দল আওয়ামী লীগের জন্য গৌরব নয়।   ইতিহাসের বিচারে লজ্জারও।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সব দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অবাধ করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই সঙ্গে এমন নির্বাচনে জনরায় নিয়ে পুনরায় ক্ষমতায় আসা আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখনো অনড়, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে, শেখ হাসিনার অধীনে নয়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় সরকারকে যে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়েছে, সংসদে তুমুল আলোচনা, বক্তৃতা আর্তনাদ হয়ে উঠে এসেছে। বেগম খালেদা জিয়া লন্ডন থেকে ফিরে নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার প্রতিষ্ঠায় আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। বছরের শেষে রাজনীতির চিত্রপট দৃশ্যমান হবে।   সেখানে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষমতার রাজনীতিতে একের পর এক চ্যালেঞ্জ শুরু হয়েছে। ভোটের লড়াই সামনে রেখে আগামীতে আওয়ামী লীগের সামনেও কঠিন চ্যালেঞ্জ।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন