আজ বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং

গবাদি পশুর পাকস্থলীর বর্জ্য ও রক্ত থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৪-২৬ ০১:১৭:০৭

খসরু মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, সিকৃবি :: গবাদি পশুর পাকস্থলীর বর্জ্য ও রক্ত সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সার হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি বায়োগ্যাস উৎপাদনসহ মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহারের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের গবাদি পশুর পাকস্থলীর বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনে প্রথমবারের মত সফল হয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্ম পাওয়ার এন্ড মেশিনারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুন।

গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে দেখা যায় প্রতি কেজি মুরগির বর্জ্য থেকে ২৭.২০ মিলি, প্রতি কেজি গরুর বর্জ্য থেকে ২.৫ মিলি, প্রতি কেজি ছাগলের বর্জ্য থেকে ৩৯.০০ মিলি এবং গরু, ছাগল এবং মুরগির সমন্বিত বর্জ্য থেকে ৭৪.১০ মিলি বায়োগ্যাস বা মিথেন পাওয়া গিয়েছে।

উন্নত দেশের মত বাংলাদেশেও রযেছে প্রচুর গরু এবং হাঁস মুরগির খামার। ইসলামিক ও উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশে রয়েছে অনেক কসাইখানা ও পোল্ট্রি দোকান। যেখানে প্রতি দিন হাজার হাজার গরু, ছাগল, হাঁস ও মুরগি জবাই করা হয়। কিন্তু সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এসব জবাইকৃত পশুর পাকস্থলীর বর্জ্য এবং রক্ত বেশির ভাগই ফেলা হয় নদী নালা বা খোলা জায়গায়। যা বাতাস, পানি ও মাটি দূষিত করে এমনকি এটা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। কারণ এই বর্জ্য পঁচে প্রচুর পরিমানে মিথেন গ্যাস নির্গত হয় যা গ্রীণ হাইজ গ্যাস হিসেবে কার্বন ডাই অক্সাইড এর চেয়ে ২৫ গুন বেশি ক্ষতিকর ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে বছরে গড়ে প্রতি গরু থেকে ৬.৭৭ কেজি মিথেন, প্রতি মহিষ থেকে ৫.২৪ কেজি মিথেন, প্রতি ছাগল/ভেড়া থেকে ০.২০৩ কেজি মিথেন এবং প্রতি মুরগি/হাঁস থেকে ০.০২৪ কেজি মিথেন নির্গত হয় বলে গবেষণায় দেখা গিয়েছে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানী হিসেবে বায়োগ্যাস উন্নত বিশ্বে এখন বহুল পরিমানে ব্যবহৃত হচ্ছে। বর্জ্য ভেদে ৬০-৬৫% মিথেন গ্যাস পাওয়া যায় বায়োগ্যাস থেকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে জবাইকৃত পশুর বর্জ্যরে পরিমান ছিল ২.২০ বিলিয়ন কেজির মত যার প্রায় পুরোটাই অব্যবহৃত থাকে। অপর এক জরীপে দেখা যায় ২০১৫ সালে প্রায় ৩০.২১ মিলিয়ন গরু ও মহিষ, ২৫.৬৯ মিলিয়ন ছাগল ও ভেড়া এবং ১৬০.৭০ মিলিয়ন পোল্ট্রি রয়েছে যা থেকে প্রায় ১০ বিলিয়ন কেজির মত বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হতো। যদি এর ৫০% বর্জ্যও নবায়নযোগ্য জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা যায় তবে তা বিদ্যুৎ ও জ্বালানীতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে। এ প্রসঙ্গে ড. রাশেদ জানান প্রতি ১৫ কেজি পাকস্থলীর বর্জ্য থেকে প্রায় ১ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপাদন সম্ভব। তিনি বলেন বর্জ্য থেকে সার উৎপাদনের পাশাপাশি পিলেট আকারে মাছের খাবার হিসেবেও ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বৃহৎ পরিসরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করা হলে বাংলাদেশে জ্বালানী ও বিদ্যুৎ খাতে নতুন দিগন্তের সূচনা করা সম্ভব হবে।   

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন