আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট, টাকার অংকে মুনাফা কত?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৫-২৩ ১৫:০২:৫০

ফেরদৌস আব্বাস চৌধুরী :: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (BS-1) বাংলাদেশের প্রথম ভূস্থির যোগাযোগ উপগ্রহ, গত ১১ মে ২০১৮ ইডিটি, বাংলাদেশ মান সময় ১২ মে ভোর সোয়া দুইটার দিকে কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয় যা ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ রকেটের প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল।

ইতিমধ্যে মহাকাশে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ তার কক্ষপথে পৌঁছে গেছে এবং ভূ-উপকেন্দ্রে সফলভাবে সংকেত প্রদান করছে।

কিন্তু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পর থেকেই এক বিশেষ মহল থেকে স্যাটেলাইট নিয়ে নানা প্রশ্ন ছুটে আসছে ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ এর লঞ্চারের মত। স্যাটেলাইট এর দাম এত কেন? এর দরকার কি? আমাদের মত দেশে স্যাটেলাইটের কি দরকার যেখানে গরীবেরা দু'বেলা ঠিক মত খেতে পারেনা, রাস্তায় খানা-খন্দ, দুর্নীতি আর ক্ষমতার অপব্যবহার সহ নানা প্রশ্ন আর সংশয় স্যাটেলাইটটিকে তার অরবিটে ঘূর্ণের আগেই ঐসব প্রশ্ন মানব মস্তিষ্কের অরবিট ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে।

জাতিগতভাবেই আমরা কেন জানি সব কিছুকে অর্থ দিয়ে বিবেচনা করি। স্যাটেলাইটটির বহুমুখী ব্যবহার রেখে আমরা চিন্তা করছি কিভাবে এটা থেকে মুনাফা লাভ করা যাবে! অবশ্য পূজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার দরুণ আজকের এই দশা অকল্পনীয় নয়। স্যাটেলাইটটি টেলিকমিনিকিউশন খাত, ডিটুএইচ-ভিসেট অর্থাৎ বিভিন্ন প্রকার চ্যানেলের ব্রডকাস্টিং সেবার সাথে সাথে দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম তথ্য সেবা প্রদান করবে। তথ্যমতে স্যাটেলাইটটির ব্যয় প্রায় ২০০০ কোটি টাকার চেয়ে একটু বেশী, এই বিশাল অর্থের রিটার্ন মানি নিয়ে জাতি বেশ চিন্তিত! যদিও স্যাটেলাইটটিতে ৪০ টি ট্রান্সপোন্ডার আছে যার মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের জন্যে ব্যবহৃত হবে আর বাকি ২০টি ভাড়া দেওয়া হবে যেখান থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব সেইসাথে ভিসেট-ডিটুএইচ সেবা থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ বাঁচবে এবং রাজস্ব আদায় সম্ভব প্রায় ১৪ মিলিয়ন! এখানে একটা প্রশ্ন জাগতেই পারে, অন্যান্য দেশের স্যাটেলাইট থাকতে আমাদের কাছ থেকে কেনই বা ট্রান্সপোন্ডার ভাড়া নিবে? একটা উত্তর হতে পারে সহজলভ্যতা এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তুলনামূলক কমদামে উন্নত সেবা প্রাপ্তির জন্যে। আরেকটি যেমন ভুটান, মালদ্বীপ  নেপাল আর কিরগিস্তানের মত দেশে যেখানে স্যাটেলাইট সেবা নেই সেহেতু তারা বাংলাদেশের মত রাষ্ট্র থেকে সেবা গ্রহণে আগ্রহী হলেও হতে পারে। তাছাড়া কমার্সিয়াল বা রিসার্চ পারপাসে উন্নত কোন রাষ্ট্র  যে কেউ আমাদের থেকে সেবা নিলেও অবাক হবার কিছু থাকবেনা। মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশের চেয়েও ছোট দেশ শ্রীলংকার ও নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে এমনকি যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তানেরো নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে, তবে আমাদের মত স্বাধীন উন্নয়নশীল দেশের কেন থাকবেনা? আমরা কি জাতি হিসেবে তাদের থেকে খুব কি পিছিয়ে?

কয়দিন আগেও যে স্যাটেলাইট শব্দটি আমাদের দেশে উচ্চারিত হতোনা যার একপ্রকার চর্চাও ছিল না। তবে এক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ শত বাঙ্গালীর মাঝে এক নব স্পৃহার সৃষ্টি করেছে। যে টাকার এবং মুনাফার হিসেব কষে আমরা রীতিমত হয়রান, ভাবুনতো স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত দুর্যোগপূর্ব-দূর্যোগকালীন এবং দূর্যোগ পরবর্তী তথ্য কাজে লাগিয়ে আমাদের কৃষিখাতের যে উন্নয়ন ও ক্ষতি মোকাবিলায় কার্যকরি ভূমিকা পালন সাধিত হবে, টাকার অংকে তার হিসেব কত হবে? বিশ্বজুড়ে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে যে গবেষণা সেখানে আমাদের মত দুর্যোগ প্রবণ দেশের দুর্বলতাকে সাড়ানোর জন্যে স্যাটেলাইট কি আদৌ প্রয়োজন নয়?

স্যাটেলাইটটি পরিচালনার জন্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৩০জন বাংলাদেশী বিজ্ঞানীকে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট নির্মাণ প্রতিষ্ঠান থ্যালেস অ্যালেনিয়া তিন বছর মেয়াদি  প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, প্রশিক্ষণ শেষে এই ত্রিশের অধিক বিজ্ঞানীদের হাতে থাকবে সম্পূর্ণ স্যাটেলাইটের নিয়ন্ত্রণ। এই দক্ষ জনবলের দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও কর্মসংস্থান এবং সুদূর ভবিষ্যতে এ খাতে বিপুল সম্ভাবনা টাকার অংকে কতটুকু মুনাফাজনক ভেবে দেখেছে সেই মহল!! শুধু তাই নয় এই ত্রিশেক বিজ্ঞানীর মাঝে ৪-৫ জন এ্যারোস্পেস নিয়ে উচ্চতর পড়া সম্পন্ন করেছেন। উচ্চ শিক্ষায় আমাদের মত দেশের তরুণদের জন্যে এই স্যাটেলাইট নতুন বিষয়কে পরিচিত করেছে। যা থেকে সুদূর ভবিষ্যতে আরো বেশি প্রতিভাবান বাংলাদেশি বৈজ্ঞানিক গড়ে তোলা সম্ভব, টাকার অংকে তার মূল্যেও কি নির্ধারণ করা সম্ভব কিনা আমার জানা নেই।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের মেয়াদ প্রায় ১৫ বছর, অর্থাৎ আগামী ১৫ বছরের ভেতর ব্যাকাপ স্যাটেলাইট হিসেবে হলেও আমাদের আরো অনেক স্যাটেলাইট প্রয়োজন হবে। ইতিমধ্যে ব্র‍্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জোট তরুণ বিজ্ঞানীরা বাংলাদেশে ন্যানো স্যাটেলাইট "ব্র‍্যাক অন্বেষা" উদ্ভাবন করেছে যার সফল উৎক্ষেপণও সম্ভব হয়েছে মহাকাশে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট আগামীদিনের নতুন ডাক দিচ্ছে, উন্মোচন করছে নতুন দিকের, নতুন কর্মসংস্থানের, সক্ষমতা বাড়াবে নতুন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আর  টেলিকমিউনিকেশন খাতে উন্নয়ন এবং নতুনত্বের অঙ্গীকার এসব কিছুতেই নতুনত্বের বার্তা দিচ্ছে এই দেশের ১৮ কোটি মানুষদের....

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন