আজ বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং
মুনজের অাহমদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য :: লন্ডনে পরিবার ও রাজনীতি নিয়েই সার্বক্ষনিক সময় কাটছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের। তবে গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়া কারান্তরীন হবার পর থেকে মন ভালো নেই তারেক রহমানের।
তারেক রহমানের একজন ঘনিষ্টজন শুক্রবার নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ভাই কোকোর লাশ শেষবারের মতো দেখতে পারেননি তারেক। এখন ৭৩ বছর বয়সী মা জেলে। দেশে যে দল পরিচালনায় নেতাদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করবেন তারেক রহমান, সেটাও দুরূহ। ফোন ট্র্যাক করা হয়। লন্ডনেও অনেকে তারেক রহমানের কাছের মানুষ সেজে বিভিন্ন স্পর্শকাতর তথ্য জেনে নিয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে জানাচ্ছেন।
শুক্রবার দিনভর লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্টজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ওয়ান ইলেভেনে দেশ থেকে অাসার লন্ডনের কিংসষ্টন এলাকার একটি বাড়ীতে ভাড়া থাকতেন তারেক রহমান।
ঐ বাড়িটি অপেক্ষাকৃত ছোট হওয়ায় মাসদুয়েক অাগে একই রোডে নতুন অারেকটি ভাড়া বাড়িতে উঠেন তিনি। স্ত্রী ডাঃ জোবাইদা রহমান ও কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে এ বাড়ীতে থাকেন তিনি। জাইমা লন্ডনের কুইনমেরী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অাইনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
ছোটভাই অারাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিথিও তাঁর কন্যাদের নিয়ে মালয়েশিয়া ছেড়ে, তাদের পারিবারিক সিদ্বান্তেই স্থায়ীভাবে লন্ডনে বসবাস শুরু করেন। তারাও থাকেন লন্ডনের কিংসষ্টন এলাকার একটি ভাড়া বাড়ীতে। নিজ পরিবার ও ভাইয়ের পরিবার দুটি পরিবারের অভিভাবকত্বের দায়িত্ব পালন করছেন তারেক রহমান। গত দশ বছরের প্রবাসী জীবনে শুরুর দিকে শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনি একা চলাফেরা করতে পারতেন না। তখন তার দেখভাল করতেন যুক্তরাজ্য বিএনপির প্রয়াত সভাপতি মোঃ কমরউদ্দীন। কিন্তু, এখন সংসারের বাজার সদাই করতে সুপার মার্কেটেও প্রায় নিয়মিতই দেখা যায় তাকে।
তারেক রহমান নিজে ব্রিটেনের ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী। মাঝে মধ্যে একমাত্র কন্যাকে নিয়ে লন্ডনের মেট্রো ট্রেনেও চলাচল করেন। সম্প্রতি, ব্রিকলেন মসজিদে একটি দোয়া মাহফিলে গাড়ী নষ্ট থাকায় ট্রেনে করেই একা যোগ দেন তিনি।
তারেক রহমানের একজন ঘনিষ্টজন অারো জানান, ক্রিকেট অনুরাগী তারেক রহমান প্রায়শই স্ত্রী কন্যাকে নিয়ে খেলা দেখতে মাঠে যান। গত বছর লন্ডনে বাংলাদেশ টীমের খেলা দেখতে স্বপরিবারে মাঠে দেখা গেছে তাকেঁ। একসময়ের চেইন স্মোকার তারেক গত কয়েক বছর হল ধূমপানও ছেড়ে দিয়েছেন।
লন্ডনে রাজনীতির দ্বিতীয় অধ্যায়:
লন্ডনে নিজ বাড়ীর অদূরে কিংসষ্টন লজ নামে একটি হোটেলের লবিতে গেল কয়েক বছর নিয়মিত বসতেন তারেক রহমান। এখানেই বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশ থেকে অাসা নেতা ও সাক্ষাতপ্রার্থীদের সময় দিতেন তিনি। কিন্তু, গত কয়েকমাস ধরে এখানেও অনাকাংখিত অনেক সাক্ষাতপ্রার্থী ভীড় করায় সম্প্রতি কিংসষ্টন লজের লবিতেও দেখা মিলছে না তারেক রহমানের।
লন্ডনে অাসার পর নিজের রাজনৈতিক জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ফের সক্রিয় হবার পর লন্ডনে বিএনপির মিডিয়া সেল গঠন, যুক্তরাজ্যে ছাত্রদলের রাজনীতি বন্ধ সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন তারেক।
খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, গেল কয়েক বছরে তারেক রহমান নিজে বেশ কয়েকবার ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য সফর করেছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে কূটনৈতিক পর্যায়ে বিভিন্ন বৈঠক করে বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে বিএনপির অবস্থান ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।
এছাড়া অামেরিকা, কানাডা ও ব্রিটেনের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও বিএনপির অবস্থান তুলে ধরতে তারেক রহমান নিজে বিভিন্ন টীম গঠন করে দেন। ২০১৪ সালে নিয়োগ দেন ভাইস চেয়ারম্যানের চার উপদেষ্টা। যদিও এসব কূটনৈতিক তৎপরতার ফলাফল কার্যত সেভাবে দৃশ্যমান হয়নি।
লন্ডনে তারেক রহমানের একান্ত ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিতরা হলের বিএনপির কেন্দ্রীয় অার্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান, কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মালেক, ব্যারিষ্টার এম এ সালাম, ব্যারিষ্টার নাসির উদ্দীন অসীম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিক, সাবেক স্পীকার জমির উদ্দীন সরকারের পুত্র ব্যারিষ্টার নওফেল জমির, মঈন উদ্দীন, গিয়াস উদ্দীন রিমন, তারেক রহমানের উপদেষ্টা, হুমায়ুন কবির, অানোয়ার হোসেন খোকন প্রমুখ।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবার পর তারেক রহমান কি করছেন, কেমন অাছেন এ প্রশ্নের জবাবে তাঁর কাছের অনেকেই মিডিয়ায় নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। লন্ডনে প্রতিষ্ঠিত শহীদ জিয়া স্মৃতি কেন্দ্র ও লাইব্রেরীর চেয়ারম্যান, সাবেক ছাত্রদল নেতা শরীফুজ্জামান চৌধুরী তপন শুক্রবার বিকেলে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তারেক রহমান ভালো অাছেন, সুস্থ অাছেন। অামি খবর নিয়েছি, শুক্রবার তিনি কিংসষ্টন মসজিদে জুম্মার নামাজও অাদায় করেছেন।
সুত্র: বাংলা ট্রিবিউন