আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

খালেদার মুক্তির দাবিতে বিএনপি হঠাৎ সক্রিয় কেন?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৪-২০ ১৭:০৪:০৫

সিলেটভিউ ডেস্ক :: দীর্ঘবিরতির পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে দলটি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনসমূহ। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করতে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইউনিটের কমিটিও। পাশাপাশি তাদের দুইটি রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলীয় জোটের মধ্যে যে দূরত্ব ছিল তাও কিছুটা সঙ্কুচিত হয়েছে।

বিএনপির সাম্প্রতিক এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে- খালেদার মুক্তির দাবিতে দলটি হঠাৎ সক্রিয় কেন? প্যারোল ইস্যুতে কি এই সক্রিয়তা? জবাবে দলটির নেতারা বলছেন, আন্দোলন চলমান রয়েছে এবং আন্দোলনের মাধ্যমেই তাদের দলীয় প্রধানকে মুক্ত করবেন।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন। কারাবন্দির পর থেকে বিভিন্ন সময় বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন, বিবৃতি, অবস্থান কর্মসূচি, কালো পতাকা প্রদর্শন, মানববন্ধনসহ প্রভৃতি কর্মসূচি দেয়া হয়। এরপর দীর্ঘদিন খালেদার মুক্তির দাবিতে রাজপথে বিএনপিকে সেভাবে দেখা যায়নি। এ নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও দেখা যাচ্ছে। তোপের মুখে পড়তে হয়েছে সিনিয়র নেতাদের।

সম্প্রতি এ ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করছে দলটি। চলতি মাসের ০৭ এপ্রিল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি এবং ৮ এপ্রিল ২০ দলের শরিকদের নিয়ে বৈঠক করে বিএনপি। ইতোপূর্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে দূরত্ব দেখা গেলেও গণঅনশন কর্মসূচিতে জামায়াত ছাড়া দুই জোটের উল্লেখযোগ্য নেতারা অংশ নেন।

বিএনপির অঙ্গসহযোগী সংগঠনসমূহকে চাঙ্গা করতে ইতোমধ্যে মৎস্যজীবী দল, কৃষকদল, মহিলাদল, তাঁতীদলসহ বেশ কয়েকটি দলের পূর্ণাঙ্গ ও আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য সংগঠনসমূহও প্রক্রিয়াধীন। এছাড়াও বিএনপির জেলা কমিটিও পুর্নগঠনের প্রক্রিয়াধীন।

বিএনপির অন্দর মহলে গুঞ্জন রয়েছে, খালেদা জিয়ার প্যারোলের মুক্তির বিষয়টি সামনে আসার পর দলের অঙ্গসহযোগী সংগঠন এবং দুই জোটকে পাশাপাশি রেখে আন্দোলন চাঙ্গার চেষ্টা করছে।

সূত্র মতে, নেতাকর্মীরা যেকোনো উপায়ে খালেদার মুক্তি চায়, তার সুচিকিৎসা চায়। প্যারোল বিষয়টি নিয়ে যখন আলোচনা , তখন নেতাকর্মীরা মনে করছেন বিষয়টি হয়তো ভেতরে ভেতরে আলোচনা হচ্ছে। সম্ভবত খুব শিগগিরই খালেদা মুক্ত হবেন। প্যারোল মুক্তি হলে সেটা বিএনপি তথা খালেদার জন্য এক প্রকার রাজনৈতিক পরাজয় হবে। খালেদার মুক্তি দাবির আন্দোলনে নেতাকর্মীরা সক্রিয় হচ্ছেন, যাতে করে প্যারোল ইস্যুটা ধামা চাপা দিয়ে বলা যায় আন্দোলনের কারণে খালেদার মুক্তি হয়েছে, প্যারোলে নয়। এটা হলো রাজনীতি। বিএনপি সেটাই করছে।

প্যারোলে মুক্তি ইস্যুর বিষয়টি সামনে আসার কারণে কি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির আন্দোলন চাঙ্গার চেষ্টা হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, ‘না, প্যারোল ইস্যুর জন্য না। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন আগে থেকেই চলছিল, নির্বাচন উপলক্ষে কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। নির্বাচনের পর দলকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করতে তারেক রহমানের নির্দেশনায় আমাদের অঙ্গসহযোগী সংগঠনসমূহ গোছানোর কাজ চলছে এবং নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন চাঙ্গা হচ্ছে। এর সঙ্গে প্যারোলের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর আমরা তো ন্যায়বিচার চাই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আদালত যদি তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে তাহলে খালেদা জিয়া জামিন পেতে পারেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্যই আমাদের আন্দোলন।’

প্যারোল ইস্যুর সঙ্গে আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান বলেন, ‘আন্দোলন চলছে। অপেক্ষা করতে হবে গণঅভ্যুত্থানের জন্য। যেহেতু গণতন্ত্র, আইনের শাসন নেই, অভ্যুত্থানের জন্য জনগণ অপেক্ষা করছে। সেটা দিনক্ষণ ঠিক করে হবে না। কবে হবে বলা মুশকিল। তবে হবে! কারণ সমস্ত কন্ডিশনগুলো হওয়ার মতো অবস্থায় চলে এসেছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার প্যারোল দেয়ার জন্য পাগল হয়েছে। কোন মামলাটা জামিন অযোগ্য? সরকার প্যারোল দিতে চাইলে জামিন দেবেন না কেন? সরকার প্যারোল দিতে এত পাগল কেন? কোন উদ্দেশ্যে? আমাদের কথা স্পষ্ট দেশনেত্রী প্যারোলে যাবেন না। জামিন নিয়ে বের হতে চান, সেই আইনের শাসনটা নিশ্চিত করতে হবে।’

এ বিষয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো কিছু বলতে রাজি হননি।

দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘নির্বাচনের কারণে খালেদার মুক্তি দাবির আন্দোলন স্তিমিত ছিল। প্যারোল ইস্যুটা সামনে আসার কারণে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে, সে রকম কিছু না। ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে আমাদের আন্দোলন সংগ্রাম ছিল, এটা বিভিন্ন পর্যায়ে, বিভিন্নভাবে চলছিল। কখনও একটু জোরদার, কখনও একটু কম ছিল।’

তিনি বলেন, ‘এখন উনি অনেক অসুস্থ। উনার অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং ওনার পছন্দমত হাসপাতালে চিকিৎসা হওয়া দরকার, সেটা দেশেই হোক আর দেশের বাইরেই হোক, এ সিদ্ধান্ত উনিই নেবেন। তো আমাদের দাবি হলো ওনাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়া হোক। কারণ যেসব মামলায় উনি আবদ্ধ এসব মামলায় তার জামিন হতে পারে এবং মুক্ত হতেই পারেন।


সৌজন্যে : জাগোনিউজ২৪

সিলেটভিউ ২৪ডটকম/২০ এপ্রিল ২০১৯/গআচ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন