আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

আওয়ামী লীগ, ব্যাপারটা লজ্জার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-০১-০৮ ০০:২৬:৩০

কাওসার শাকিল :: সব অন্যায় এখন আর আমাদের কাছে অন্যায় না। অন্যায় কে করছে ব্যাক্তিভেদে তার উপর নির্ভর করছে আমরা তাকে অন্যায় বলবো কি বলবো না। মানে যে কাজ বিএনপি সমর্থকর করলে ঘোরতর অন্যায়, সেটা আওয়ামী লীগের সমর্থক কর্মীরা করলে অন্যায় হবে না, এমনটাই যেন রীতি। অন্তত মানুষের প্রতিক্রিয়াহীনতা আর নির্লিপ্ততা দেখে তাই মনে হলো।

বলছিলাম গত ৫ জানুয়ারি বরিশালে ঘটে যাওয়া জঘন্য একটি ঘটনাকে উদ্দেশ্য করে। বরিশাল বিএনপি দশম সংসদ নির্বাচনের তৃতীয় বর্ষপূর্তির দিনে তাদের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটা কালো পতাকা মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে চড়াও হয়। তাতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে এবং কয়েকজন আহত হন।

এই আহত হওয়াদের মধ্যে রয়েছেন আফরোজা খানম রোজি। তিনি বরিশাল বিএনপি এর সহশিক্ষা সম্পাদক। ঠিক জানি না তার অপরাধ কী, তবে তাকে যেভাবে মাটিতে ফেলে পেটনো হলো এটা কোনো মানুষের কাজ হতে পারে না। মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি নিয়ে এরকম পাশবিক আচরণ করা যায় না।

যতই রাজনৈতিক আক্রোশ থাক, কোনো নারীর প্রতি এরকম সহিংস আচরণ কি মুখ বুজে সহ্য করার মতন? এটা কি কোনো সভ্য দেশের সভ্য মানুষের কাজ?

একজন নারীর শরীর আর একজন পুরুষের শরীর এক নয়। একজন নারীর শরীর অনেক বেশি নাজুক এবং আঘাতের প্রতি সংবেদনশীল। সবেচেয়ে বড় কথা একজন পুরুষ যে আঘাতে সামান্য ক্ষতির শিকার হবেন একজন নারী সেই একই আঘাতে চিরস্থায়ী ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন।

কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এসব কেউ বলছে না। একজন নারী রাজনৈতিক কর্মীকে এরকমভাবে রাস্তায় ফেলে মারা হলো অথচ এর কোনো প্রতিবাদ নেই, নেই কোনো প্রতিক্রিয়া। কোনো গনমাধ্যম এটা নিয়ে আলাদা করে সংবাদ করলো না। কোনো নারীবাদী ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেখলাম না একজন নারীর প্রতি এই সহিংসতার কোনো প্রতিবাদ করলেন।

দেখে শুনে মনে হলো ঘরের সহিংসতার প্রতিবাদ করতে হবে, সেটা বন্ধ করতে হবে, কিন্তু প্রকাশ্য দিবালোকে রাজপথে ফেলে যদি একজন নারী রাজনৈতিক কর্মীকে পেটানো হয় তার কোনো প্রতিবাদ করার প্রয়োজন নেই। আর সেই নারী যদি হয় বিএনপি কর্মী তাহলেতো তাকে পেটানো রিতীমত আইনসিদ্ধ। যেহেতু আফরোজা খানমকে পেটানোর সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকেও কিছু করেনি। এ রকমতো আমরা বলতেই পারি।

অনেকেই এখন অতীত ইতিহাস টানবেন। বলবেন আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিলো তখন বিএনপিও একই কাজ করেছে, আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের তারা নির্বিচারে পিটিয়েছে।

দু:খিত, কিন্ত এটা কোনো যুক্তি কিংবা কারণ হতে পারে না। কেউ ক্ষমতায় থাকতে আপনাকে পিটিয়েছে বলে আপনি ক্ষমতায় গিয়ে তাকে পেটাবেন, এরকম চিন্তায় সারাদেশ অন্ধের রাজত্ব ছাড়া আর কিছুই হবে না। এটা ভীষণ নৃশংস এবং ভয়ংকর চিন্তা।

তারচেয়েও বড় কথা আওয়ামী লীগের জন্য ঘটনাটা লজ্জার। আওয়ামী লীগ এখন কর্মী বলে এতোটাই বলীয়ান যে তাদের কর্মীরা বল দেখানোর আর জায়গা পাচ্ছে না। বিরোধী দলের নারী কর্মীদের উপর বল দেখাতে হচ্ছে। দলকে সুসংঘটিত করতে পারলেও আওয়ামী লীগ তৃণমূল পর্যায়ে অনেকটাই লাগামছাড়া, বরিশালে বিএনপি কর্মীদের উপর হামলার ঘটনাটা পড়ে এবং ছবি দেখে তাই মনে হয়েছে।

লেখক: জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন