আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ফিরিয়ে দিলেন মাইক্রো চালক!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-১৬ ২০:০৪:২৪

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: কনেকে নিয়ে মাইক্রোবাসযোগে বাড়ি ফিরছিলেন বরযাত্রীরা। অসাবধানতাবশত গাড়িতে রয়ে যায় ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বরের বাড়িতে পৌঁছার পর সবাই কনেকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কারো মনে নেই স্বর্ণালাঙ্কারের কথা। বরপক্ষের লোকজনের যখন স্বর্ণালঙ্কারের কথা মনে পড়লো, তকোক্ষণে মাইক্রোবাস চালকও বরযাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চলে গেছেন।

এদিকে স্ট্যান্ডে ফিরে গাড়ি পরিষ্কার করছিলেন চালক। এসময় গাড়িতে একটি বক্স পড়ে থাকতে দেখে সেটা খুলে দেখেন তাতে রয়েছে স্বর্ণালঙ্কার। তা দেখেই তিনি বুঝে গেলেন সেটা বরযাত্রী পক্ষের লোকজন গাড়িতে ফেলে গেছেন। অপেক্ষা না করেই গাড়ি নিয়ে আবারও ছুটলেন বরের বাড়িতে। অবশেষে ফিরিয়ে দিলেন সাড়ে ৫ লাখ টাকা মূল্যের ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।

ঘটনাটি শুক্রবার বিকেলে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার কলারতলিপার এলাকায় ঘটেছে। গাড়িতে বরপক্ষের লোকজনের ফেলে যাওয়া ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ফিরিয়ে দিয়ে সততার উজ্জল দৃষ্টান্ত গড়েছেন জাকির হোসেন (২২) নামের এক মাইক্রোবাস চালক। জাকির হোসেন বড়লেখা উপজেলার তেলিরগুল গ্রামের মৃত আবুল হোসেনের ছেলে।

জানা গেছে, বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের কলারতলিপার গ্রামের মো. আব্দুস সালামের ছেলে ইতালি প্রবাসী সাইফুর রহমান ইজামের সঙ্গে শুক্রবার জুড়ী উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর মেয়ে নূরানী জান্নাতের বিয়ে আয়োজন ছিল। বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বিকেলে মাইক্রেবাসযোগে বরপক্ষের লোকজন কনেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। এসময় অসাবধানতাবশত জাকিরের গাড়িতে রয়ে যায় কনের ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার। বাড়িতে বরযাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে চালক জাকির ফিরে যান গাড়ি স্ট্যান্ডে। এদিকে হঠাৎ বর সাইফুর রহমানের বাড়ির লোকজনের মনে পড়ে স্বর্ণালঙ্কারের কথা। তাঁরা যখন চালকের খুঁজে বের হবেন, ঠিক সেসময় স্বর্ণ নিয়ে হাজির হন জাকির। পরে বরের হাতে তুলে দেন ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।

বর সাইফুর রহমান ইজাম শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটভিউকে বলেন, ‘স্বর্ণালঙ্কারগুলো ভুলবশত গাড়িতে রয়ে গিয়েছিল। আমাদের কারো মনে ছিল না। আমরা ভেবেছিলাম হয়তো স্বর্ণগুলো চুরি হয়ে গেছে। এরপরও যখন খোঁজ করছিলাম ঠিক ওইসময় চালক জাকির হোসেন স্বর্ণগুলো নিয়ে হাজির হলেন বাড়িতে। স্বর্ণগুলো ফিরিয়ে দিয়ে জাকির সততার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জাকিরের মতো ভালো মানুষ এখনো পৃথিবীতে আছেন। জাকিরের কাছে আমরা চিরকৃতজ্ঞ।’

মাইক্রোবাস চালক জাকির হোসেন বলেন, ‘কারো কোনো জিনিসের প্রতি আমার কোনো লোভ নেই। ছিলও না কোনোদিন। ঘটনার দিন শুক্রবার যাত্রীদের গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে স্ট্যান্ডে ফিরে এসে গাড়ি পরিষ্কার করছিলাম। ঠিক ওই সময় গাড়ির ভেতরে একটা বাক্স পড়ে থাকতে দেখি। সেটি হাতে নিয়ে খুলে দেখি তাতে স্বর্ণালঙ্কার। বুঝতে পারি সেটা বরপক্ষের লোকজন গাড়িতে ফেলে গেছেন। এরপর সেটা নিয়ে সোজা চলে যাই বরের বাড়িতে। পরে সেটা বরের হাতে তুলে দেই।’

বড়লেখা উপজেলা বাস-মিনিবাস-মাইক্রোবাস সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘জাকির খুবই সৎ ছেলে। সে স্বর্ণালঙ্কার ফিরিয়ে দেয় ভালো একটি কাজ করেছে। যা সত্যিই প্রসংশনীয়।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ মার্চ ২০১৯/এজেএল/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন