আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় ভেজাল পণ্যের কারখানায় অভিযান, ১ জনের জেল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২০ ২১:১২:২৭

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়লেখা :: মৌলভীবাজারের বড়লেখায় ভেজাল খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং একজনকে ১ বছরের কারাদন্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং এবং নিম্নমানের তেল ও মসলা দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল পণ্য তৈরি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেল ও ঘি তৈরি করায় তাদের তিনজনকে এই জেল ও জরিমানা করা হয়।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বিকেলে বড়লেখা পৌরশহরে এই অভিযান চালানো হয়। 

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বড়লেখা পৌর শহরের দক্ষিণ বাজার এলাকায় হোটেল মোশাহিদে গত সোমবার (১৯ আগস্ট) রাতে বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক তল্লাশি চালান। এ সময় হোটেলের দ্বিতীয় তলার ২২২ নম্বর এবং তৃতীয় তলার ৩১৫ নম্বর কক্ষে বিভিন্ন পণ্যের উপস্থিতি দেখতে পান। হোটেল কক্ষে পণ্যের খোঁজ-খবর নেন। এ নিয়ে তাঁর সন্দেহ তৈরি হয়। ওসি হোটেল কক্ষে অবস্থানকারীর ওপর বিশেষ নজরদারি চালান।

মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সকালে পুনরায় ওই হোটেলে গিয়ে কক্ষ দুটিতে তল্লাশি করলে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ চিত্র। দেখা যায়, কক্ষের শৌচাগারকে কারখানা বানিয়ে ক্ষতিকর বিভিন্ন ধরনের রং মিশিয়ে তৈরি করা হয়েছে ঘি, রুহ আফজা, মটরশুটি, বিভিন্ন ধরনের মসলা। কল্যাণী ধনিয়া গুঁড়া, মডার্ন ভেজিটেবল ঘি, মডার্ন সুপার ক্লাস ভেজিটেবল ঘি, কল্যাণী মরিচের গুঁড়াসহ বিভিন্ন নামে এসকল পণ্য তৈরি করা হচ্ছে। বড়লেখা সদরসহ স্থানীয় গ্রামীণ হাটে এগুলো বাজারজাত করা হচ্ছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কক্ষ দুটিতে অভিযান চালানো হয়।

এসময় হোটেল কক্ষের ভাড়াটে ব্রাহ্মনবাড়ীয়ার আশরাফুল ইসলামকে (৫৫) আটক এবং কক্ষ দুটি থেকে বিভিন্ন পণ্য জব্দ করে পুলিশ। জব্দ পণ্যের মধ্যে আছে একটি কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, ভেজাল মডার্ন গাওয়া ঘি ১২ কেজি, কল্যাণী গাওয়া ঘি ১৮ কেজি, পাম ওয়েল ৬০ লিটার, প্রচুর মসলা তৈরির কৌটা ও বোতল। অভিযান শেষে কম্পিউটার ও প্রিন্টার ছাড়া অন্যান্য ভেজাল পণ্য পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে আশরাফুল ইসলাম কক্ষ দুটি ভাড়া নিয়ে ভেজাল পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাত করছিলেন।

পরে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম মো. শামীম আল ইমরান ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে হোটেল মোশাহিদের মালিক আবুল ফাত্তাহকে এরকম কাজে হোটেল কক্ষ ব্যবহার করতে দেওয়ায় ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন। অপরদিকে কক্ষের ভাড়াটে আশরাফুল ইসলামকে ভেজাল পণ্য তৈরি করায় ১ বছরের কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

অন্যদিকে বড়লেখা শহরের বারইগ্রাম এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে ঘি ও তেল উৎপাদন করায় দীপক দত্ত নামে এক ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে কারখানায় জব্দ করা অবৈধ পণ্যগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. শরীফ উদ্দিন।

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী হাকিম মো. শামীম আল ইমরান মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) বলেন, ‘আবাসিক হোটেলটির ২য় ও ৩য় তলা ভাড়া নিয়ে অবৈধভাবে ঘি ও অন্যান্য পণ্য তৈরির সন্ধান পাওয়া যায়। কারখানার মালিক দেড় বছর থেকে এখানে কারখানা পরিচালনা করছিলেন। তাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন আইনে ১ বছরের কারাদন্ড ও এই কাজে সহায়তার অপরাধে হোটেল মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।’

বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) সন্ধ্যায় বলেন, ‘নিয়মিত তল্লাশিকালে সোমবার রাতে আবাসিক হোটেলের দুটি কক্ষে বিভিন্ন পণ্য দেখতে পাই। একটি কম্পিউটার, প্রিন্টারও ছিল। হোটেল কক্ষে পণ্যের খোঁজ-খবর নেই। এ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। এরপর হোটেল কক্ষে অবস্থানকারীর ওপর বিশেষ নজরদারি বৃদ্ধি করি। সকালে পুনরায় ওই হোটেলে গিয়ে কক্ষ দুটিতে তল্লাশি করলে বেরিয়ে আসে ভয়াবহ চিত্র। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর রং এবং নিম্নমানের তেল ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে ভেজাল পণ্য তৈরি হচ্ছিল। পরে ভ্রাম্যমান আদালত কারখানা মালিককে এক বছরের জেল ও ভবন মালিককে এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। একইদিন বিকেলে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে তেল ও ঘি তৈরি করায় আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে একলাখ টাকা জরিমানা করা হয়।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২০ আগস্ট ২০১৯/এজেএল/পিডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন