আজ বুধবার, ০৮ মে ২০২৪ ইং

মৌলভীবাজারে সরকারি ধান ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ প্রকৃত কৃষকদের

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৫ ২০:৫৭:৫২

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের রাজনগরে সরকারিভাবে আমন ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের লোকজনের সাথে সিন্ডিকেট করে একটি চক্র প্রকৃত আমন চাষীদের বাদ দিয়ে কৃষক তালিকা তৈরি করেছেন এমন অভিযোগে ক্ষুব্ধ প্রকৃত আমন চাষীরা তালিকা বাতিল করে প্রকৃত চাষীদের নিয়ে নতুন তালিকা তৈরির দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবছর সরকারিভাবে উপজেলা থেকে ১৪শ ১৭ টন আমন ধান ক্রয়ের লক্ষে বিক্রেতা তালিকায় উপজেলার সাড়ে ৯ হাজার কৃষক তালিকাভূক্ত হন। ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তাগণ এই তালিকা প্রস্তুত করেন। সেই তালিকা থেকে লটারি করে ১ হাজার ৪শ ১৭ জন কৃষক মনোনীত হন।

প্রন্তিক কৃষকরা অভিযোগ করেন, মূল তালিকায় প্রকৃত কৃষকদের অন্তভূক্ত করা হয়নি। বরং মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে গড়ে ওঠে একটি সিন্ডিকেট চক্র। এই চক্র আমন চাষীদের বাইরে বোরো চাষী, সবজি চাষীদের কৃষি কার্ড কৌশলে হাতিয়ে নিয়ে এদের তালিকাভূক্ত করে।

তালিকা যাচাই করে দেখা যায়, একজন কৃষকের নাম একাধিকবার এসেছে। একই মোবাইল ফোন নাম্বার ব্যবহার করেছেন একাধিকজন। এরমধ্যে ১টি ফোন নাম্বার ব্যবহার করেছেন ৫৭ জন। উত্তরভাগ ইউনিয়নের উত্তরভাগ গ্রামের ১৫৮ জন কৃষকের অর্ধেকের বেশী ভুয়া।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ একটি চক্র আমন চাষ করেনি এমন চাষীদের কার্ড অল্প টাকায় ক্রয় করে বিক্রেতা তালিকতায় নাম তুলেছে।

উপজেলা কৃষিবিভাগ জানায়, শুধুমাত্র ফতেহপুর ইউনিয়নে লটারিতে অংশ নেয় ২২৫ জন কৃষক। এরমধ্যে মনোনীত হন ৩৬ জন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাচাই করে দেখা যায় এরমধ্যে ২০ জনই ভুয়া ভূয়া। যাদের আমন চাষ নেই আবার কেউ কেউ বিদেশে থাকেন। যাচাই বাচাই করে যারা ভূয়া তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে বলেও জানায় কৃষিবিভাগ। এই চিত্র উপজেলার বাকি ৭ টি ইউনিয়নের।

ফতেহপুর ইউনিয়নের ছোয়াব আলী গ্রামের কৃষক জলাল মিয়া বলেন, যারা মনোনীত হয়েছে তাদের অধিকাংশের কৃষি কার্ড হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। কেনো কোনো কৃষককে ৪শ থেকে ৫শ টাকা দিয়েও কার্ড হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব কার্ড যখন লটারিতে মনোনীত হবে তখন ঐ সাধারণ কৃষকদের কাছ থেকে অল্প টাকায় ধান কিনে সিন্ডিকেট চক্র সরকারের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে দিচ্ছে।

গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম ও আয়াছ মিয়া জানান, আমন চাষীদের যে তালিকা হচ্ছে তা প্রকৃত চাষীদের জানতেই দেয়া হয়নি। ইউনিয়ন কৃষি কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট চক্রকে নিয়ে গোপনে এই তালিকা করেছেন। ফলে ধান বিক্রয়ে সরকারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত চাষীরা।

রাজনগর উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো.শাহাদুল ইসলাম তালিকায় অসংগতির অভিযোগ স্বীকার করে জানান, লটারীতে নির্বাচিত কৃষক তালিকা অধিকতর যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। প্রকৃত আমন চাষী না হলে কার্ড জব্দ করা হচ্ছে। এরমধ্যে অনেক কার্ড জব্দ করা হয়েছে। আর তালিকা তৈরী করার কাজে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কাজ চলছে।

উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। অনিয়মের অভিযোগ শুনার পর আমন ধান বিক্রয়ের আরেকটি কৃষক তালিকা তৈরীর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। লটারিতে যারা মনোনীত হয়েছেন যাচাই বাচাই কওে প্রকৃত চাষীদের ধান কেনা হচ্ছে। পরবর্তীতে সংশোধিত তালিকা থেকে আরেকটি লটারীর করা হবে। তখন আর প্রকৃত আমন চাষীরা বঞ্চিত হবেন না।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ জানুয়ারি ২০২০/প্রেবি/পিডি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন