আজ মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ইং

অবিশ্বাস্য খুনে স্তব্ধ বড়লেখা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০১-১৯ ২১:০৮:৩৩

এ.জে লাভলু, বড়লেখা :: একে একে খুন করলেন স্ত্রী, শাশুড়িসহ চারজনকে। তারপর রেহাই দিলেন না নিজেকেও, করলেন আত্মহত্যা। কিছু সময়ের মধ্যে লাশে পরিণত হলেন পাঁচজন মানুষ। চার খুন আর এক আত্মহত্যার ঘটনা বড়লেখার মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য হয়ে ধরা দিচ্ছে। এ ঘটনায় শোকে আর বিস্ময়ে স্তব্ধ বড়লেখা।

জানা গেছে, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী-শাশুড়ি এবং দুজনকে হত্যার পর এক যুবক আত্মহত্যা করেছেন। এই ঘটনায় পুরো পাল্লাথল চা বাগান এলাকা যেনো শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে। শোকে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ। নির্মম এরকম হত্যাকাণ্ড অতীতে কোনোদিন ঘটেনি এ এলাকায়।

রবিবার সরেজমিন পাল্লাথল চা বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, নিহতদের লাশ ঘরের মেঝে ও উঠানে পড়ে রয়েছে। মাটিতে রক্তের ছোপ ছোপ দাগ লেগে রয়েছে। এই ঘটনায় স্থানীয় এলাকাবাসী বাকরুদ্ধ। এলাকার মানুষজন লাশ দেখতে ওই বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষজন।

সেখানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা লতা রানী কর্মকারের সঙ্গে। তিনি বলেন,‘ ঘটনাটি সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনেছি। এই ঘটনায় আমরা আতঙ্কিত। এরকম ঘটনা কোনোদিন আমাদের এখানে ঘটেনি। আর যারা মারা গেছেন তাদের সাথে কারো কোনো বিরোধ ছিল না। এই ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা ধারণা করছি, পারিবারিক কলহের কারণে নির্মল এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।’

একই সময় কথা হয় নিহত জলি বুনার্জির বাবা বিষ্ণু বুনার্জীর সঙ্গে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি অন্য একটা চা বাগানে আমার আরেক মেয়ের সাথে থাকি। সকালে খবর পাই আমার স্ত্রী ও মেয়েসহ পাশের ঘরের আরও দুজনকে আমার মেয়ের জামাই কুপিয়ে হত্যা করেছে। পরে সে নিজে আত্মহত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রায় একবছর আগে নির্মলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে জলির বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। আমি তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করতাম। কিন্তু তারা আমার কথা শোনত না।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলির আগে একবার বিয়ে হয়েছিল। আগের পরিবারে তার এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তার নাম চন্দনা। ঘটনার সময় সে ঘরে ছিল। পরে ভয়ে পালিয়ে প্রতিবেশী এক বাড়িতে সে আশ্রয় নেয়। নির্মল এই বাগানের নিয়মিত শ্রমিক ছিলেন না। তিনি আমাদের (শ^শুড়) বাড়িতেই থাকতেন। ’

এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ভোররাতে পারিবারিক বিষয় নিয়ে নির্মল কর্মকারের সঙ্গে তার স্ত্রী জলি বুনার্জির ঝগড়া হয়। এরই জের ধরে তিনি জলিকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন। এসময় জলিকে বাঁচাতে তাঁর মা লক্ষ্মী বুনার্জি ও পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিক এবং বন্তের মেয়ে শিউলী ভৌমিক এগিয়ে এলে নির্মল তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করেন। ঘটনার সময় কোনো মতে বেঁচে যায় ঘাতকের সৎ মেয়ে চন্দনা (৯)। চন্দনা দৌঁড়ে পালিয়ে গিয়ে চিৎকার দিলে আশাপাশের শ্রমিকরা বাড়ি ঘেরাও করেন। এ অবস্থায় নির্মল পালিয়ে যেতে পারেননি। ঘরের দরজা লাগিয়ে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।  দুপুরে পুলিশ ঘটনাস্থলে থেকে লাশ উদ্ধার করে বিকেলে থানায় নিয়ে আসে।

ঘটনার খবর পেয়ে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তানিয়া সুলতানা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই) নজরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) কাওছার দস্তগীর, থানার অফিসার ইনচার্জ কর্মকর্তা ইয়াছিনুল হক, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জসীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমদ বলেন, ‘পারিবারিক কলহের জেরে এই ঘটনাটি ঘটেছে। রাতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অনেকক্ষণ ঝগড়া হয়েছিল। এটা শুনেছি। এ থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় একজন গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৯ জানুয়ারি ২০২০/এজেএল/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন