আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শ্রীমঙ্গলে অতিবৃষ্টি: কমেছে চায়ের উৎপাদন, বাড়ছে চায়ের দাম

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-১৫ ১৭:৩২:৫৩

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি :: এবার অতিবৃষ্টি, খরায় ও উৎপাদন কম হওযায় বাজারে বেড়েছে চায়ের দাম। কিন্তু প্রতিটি নিলামে চায়ের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে বড় ধরনের সংকটের মুখে পড়েছে দেশের চা-শিল্প।  

গত বছর ২০১৯ সালের যে দেশে যে পরিমাণ চায়ের উৎপাদন হয়েছে তার অনেক কম উৎপাদন হয়েছে। ফলে চায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক উৎপাদন করা সম্ভব হবে না বলে জানান চা বাগান সংশ্লিষ্টরা।

চা ব্যবসায়ীরা জানান, করোনা প্রভাবের কারণে দেশে লকডাউন থাকায় এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চা ব্যবসায় মন্দা অবস্থা বিরাজ করছিল। বর্তমানে চায়ের বাজারে আগুন।

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২০ সালে চায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ কেজি। কিন্তু এ বছর জুলাই পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার কেজি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ চা বোর্ডের (বিটিবি) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ কোটি কেজি। কিন্তু উৎপাদন হয় সাড়ে ৯ কোটি কেজি। এর মধ্য দিয়ে চা-শিল্পের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা রেকর্ড করেছিল বাংলাদেশ।

দেশীয় বাগানে উৎপাদিত চা বিক্রি হয় চট্রগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলে দুটি নিলাম কেন্দ্রে। উৎপাদন কম হওয়ায় এবার নিলাম বাজারে চায়ের দাম বাড়ছে। তাতে খুচরা বাজারেও চায়ের দাম বাড়া অব্যাহত রয়েছে।

অন্যদিকে আবহাওয়ার কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি গোলাম শিবলী বলেন, ‍“চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের চেয়েও কম চায়ের উৎপাদন। এর প্রধান কারণ শুধু জুন মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। চায়ের জন্য উপযোগী পর্যাপ্ত সূর্যের তাপমাত্রা পাওয়া যায়নি। দিনের বেলা বৃষ্টি হলে চায়ের জন্য ক্ষতি। চায়ের জন্য দিনের বৃষ্টিপাতের চেয়ে রাতে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বড় উপকারী।”

দিনে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে চা-গাছগুলো তাদের সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে তাদের খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। ফলে চা-গাছ দ্রুত কুঁড়ি ছাড়তে ব্যাহত হয়।

চায়ের চাহিদার বড় অংশ টংদোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো। এখানে অধিক পরিমাণে চা ব্যবহার হয়। করোনার পর মার্চ থেকে টং দোকান ও হোটেল রেস্তোঁরাগুলো বন্ধ থাকায় চা ব্যবসা হয়নি। এখন সীমিত আকারে খুললেও ব্যবসা অনেক কমলেও বর্তমানে চায়ের চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে চায়ের মূল্য।

শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের চা ব্যবসায়ী মো. সেলিম আহমেদ জানান, কেজি প্রতি চায়ে সর্বনিম্ন ১৭০ টাকার চা পাতা ২২০ টাকা দামে বেড়েছে। আগামীতে চায়ের দাম আরও বাড়বে। শ্রীমঙ্গলের বাজারে ক্লোন টি (ছোট দানা) প্রতি কেজি ২৬০ টাকা থেকে বেড়ে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩৫০ টাকা থেকে ৩৮০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে। বিটি-২ গ্রেডের চা ৪০০ থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকাতে বিক্রয় হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে উন্নত চা বিটি-গোল্ড বা টি-গোল্ড ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকাতেই এবং গ্রীন-টি ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

ইস্পাহানি টি কোম্পানি শ্রীসমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, একমাত্র খরার কারণে শুধু মার্চ মাসেই পঞ্চাশ শতাংশ চা উৎপাদন কম হয়েছে।

তিনি জানান, অনেক চা বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই। আধুনিক পদ্ধতিতে সেচ দেয়ার পরও তার বাগানে বছর শেষে ১২ শতাংশ চা উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তবে সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাত চলতি বছরের জুন মাসের শেষ দিকে অবস্থার কিছুটা উন্নতির কথা তিনি বললেন।

শ্রীমঙ্গল নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পীযুষ কান্তি ভট্রাচার্য বলেন, “গত বছর আবহাওয়া ভাল ছিল রাতে বৃষ্টি, দিনে রৌদ থাকায় চা উৎপাদন ভাল হয়েছে। এবার তার তুলনায় অনেক কম। কারণ চা মৌসুমের প্রথম দিকে অধিক খরা, তারপর দিনে ও রাতের বেলা অতিবৃষ্টির কারণে সূর্যতাপ না পাওযায় চা উৎপাদন কমেছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতে করোনাকালীন সময়ে চা বাগান বন্ধ থাকায় চা উৎপাদন কম হয়েছে, যার ফলে চোরাইপথে চা আসা বন্ধ এবং আমদানী না থাকায় চায়ের দাম বাড়ার প্রধান কারণ।”

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে হোটেল মোটেল ও রেষ্টুরেন্ট খোলার কারণে চায়ের চাহিদা বাড়ায় চায়ের দাম বাড়ছে। করোনাকালীন সময়ে সবকিছু বন্ধ ছিল। যাহা বাসা-বাড়িতে চা পান করতো।’

দেশে চায়ের দাম বাড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের চা ব্যবসায়ী পীযুষ কান্তি দাস গুপ্ত ও শহীদ আহমেদ বলেন, “লকডাউন শিথিল হওয়াতে চাযের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন চা প্যাকেটজাত কোম্পানি তারা চা পাতা ক্রয় করে স্টক করার কারণে চায়ের দাম বাড়ার কারণ।”

তারা আরও বলেন, “ভারতীয় চা দেশে না আসায়, দেশে চায়ের বাজারে চায়ের জন্য মঙ্গল। একই কথা জানালেন পদ্মা টি হাউসের স্বত্বাধিকারী মেঘনাথ হাজরা।”

বিদেশী কোম্পানি, সরকারী ও ব্যক্তিমালিকাধীন ছোট বড় মিলিয়ে দেশে ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। তারমধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৯৩টি চা বাগান রয়েছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০/এসআই/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন