আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারেই বসবে আদালত

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৯-০৫ ১১:০৮:৫২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারেই বসবে আদালত।বিএনপি চেয়ারপারসন মামলাটিতে শুনানির কয়েকটি ধার্য দিনে হাজির না হওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের এই সিদ্ধান্ত এল।

মঙ্গলবার বিকালে আইন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘নিরাপত্তার কারণে’ এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।কারাগারে আদালত বসাতে সরকারের এই সিদ্ধান্তে তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের আইনজীবীরা।

কারাগারে আদালত বসানোকে ‘সংবিধান পরিপন্থি’ আখ্যায়িত করে বিএনপি বলেছে, তারা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’ দেবে।

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজার রায়ের পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত কারাগারে একমাত্র বন্দি হিসেবে রয়েছেন খালেদা। এখন সেখানেই বসবে আদালত, করবে দুদকের করা মামলাটির বিচার।

মঙ্গলবার দুপুরে দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলাটির বিচার কারাগারে করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

এতদিন মামলাটির শুনানি চলছিল কারাগারের কয়েকশ গজের মধ্যে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কারা অধিদপ্তরের মাঠে।ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান ওই মাঠে স্থাপিত বিশেষ এজলাসে মামলাটির শুনানি নিচ্ছিলেন।


দুর্নীতির এই মামলায় বুধবার আদালতে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে; তার আগের দিন এজলাস স্থানান্তরের প্রজ্ঞাপন এল।এতে বলা হয়, “বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে। সেজন্য নিরাপত্তাজনিত কারণে বিশেষ জজ আদালত-৫ নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এর প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হল।

“বিশেষ জজ আদালতে বিচারাধীন বিশেষ মামলা নং ১৮/২০১৭ এর বিচার কার্যক্রম পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের কক্ষ নং ৭ এর অস্থায়ী আদালতে অনুষ্ঠিত হইবে।”

গত ফেব্রুয়ারিতে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ের পর ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে ওই কারাগারের দোতলার একটি কক্ষে রাখা হয়েছে। এই ‘স্পেশাল জেলে’ সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ব্যক্তিগত এক গৃহকর্মীও রয়েছেন। এখন যেখানে বিচার হবে, তা কারা ভবনের নিচতলার একটি কক্ষ।বন্দি খালেদার শুনানির কয়েকটি ধার্য দিনে হাজির না হওয়ার কারণ হিসেবে তার অসুস্থতার কথা আদালতে জানানো হয়েছিল।

অন্যদিকে শুনানিতে মামলাকারী দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলে আসছিলেন, খালেদা জিয়া ‘অসুস্থতার ভান করছেন’।

খালেদার বিচার কারাগারে আদালত বসানোর তোড়জোড়ের সময় প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, “সরকার তো যা খুশি তাই করছে। এটা করা ঠিক হবে না। এটা করা উচিৎ হবে না।”

জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলার বিচারও হয়েছে ঢাকার মূল আদালত ভবনের বাইরে বকশীবাজারের মাঠের বিশেষ আদালতে, যাকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে আসছেন বিএনপি নেতারা।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়া জামিন পেয়েছেন। সর্বশেষ দিনের শুনানিতে তার জামিনের মেয়াদ ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন বিচারক আখতারুজ্জামান।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ অগাস্ট তেজগাঁও থানায় মামলাটি করেছিল দুদক।২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক হারুন-অর-রশীদ আদালতে অভিযোগপত্র দেন।

২০১৪ সালের ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের পর শুরু হয় বিচার। মামলার অন্য আসামিরা হলেন খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী এবং হারিছের তৎকালীন একান্ত সচিব (বর্তমানে বিআইডব্লিউটিএ এর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক) জিয়াউল ইসলাম মুন্না, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

দীর্ঘদিনেও বিচার শেষ না হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা খালেদার আইনজীবীদের সময়ক্ষেপণকে দায়ী করে আসছেন। অন্যদিকে বিএনপি নেতাদের দাবি, আওয়ামী লীগ সরকারের ইন্ধনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলে এই মামলাটি করা হয়েছে।

যে মামলায় খালেদার দণ্ড হয়েছে, সেই এতিমখানা ট্রাস্ট মামলাসহ দাতব্য ট্রাস্ট মামলায় খালেদার জামিন হলেও তার মুক্তি অন্য তিনটি মামলায় আটকে আছে।

বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন, ঢাকার একটি মানহানি মামলা, কুমিল্লার বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি এবং  বাসে আগুন দিয়ে আট যাত্রীকে পুড়িয়ে মারার মামলায় জামিন হলেই মুক্তি পাবেন খালেদা।

খালেদার অন্যতম আইনজীবী এ কে এম এহসানুর রহমান এর আগে বলেছিলেন, নিম্ন আদালতে রায় আসা এতিমখানা দুর্নীতি মামলা বাদে ৩৪টি মামলা রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে।

এর মধ্যে নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে হয় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা।

বাকি ৩০টি মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহ, হত্যা, ইতিহাস বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি, ভুয়া জন্মদিন পালনের মতো অভিযোগ রয়েছে।

২০১৪ সালের পর বিভিন্ন সময়ে পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেন।এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে ঢাকায়। এছাড়া কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে।

এহসান বলেন, এই ৩৪ মামলার মধ্যে ১৯টি রয়েছে অভিযোগ গঠন বা সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে। ১২টি মামলা এখনও তদন্তাধীন। তিনটি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৫ সেপ্টম্বর ২০১৮/ডেস্ক/আআ

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন