আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শমশেরনগরে রেলওয়ের সম্পত্তিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০১-১৬ ১৮:৫৬:২৯

জয়নাল আবেদীন, কমলগঞ্জ :: মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগরে রেলওয়ের সম্পত্তিতে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের জনগুরুত্বপূর্ণ শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বুধবার সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে।

শমশেরনগর রেলস্টেশন এলাকায় সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, শমশেরনগর রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন রেলওয়ের নিজস্ব সম্পত্তিতে কিছু অসাধু ব্যক্তি কোনো প্রকার অনুমতি ছাড়াই দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও কৃষি জমি লিজ নিয়ে পাকা বাসাবাড়ি তৈরি করেছে। এ নিয়ে সম্পতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদও প্রকাশ হওয়ায় বিষয়টি উর্ধতন নজরে আসলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলেও বুলডোজার ও পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় এক একর পরিমান জমিতে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বুলডোজার ও জনবল নিয়ে আগামী একমাসের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান আবার শুরু হবে। তবে যতক্ষণ না উচ্ছেদ শেষ হবে, ততক্ষণ অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে উচ্ছেদ অভিযানের কর্মকর্তা জানান। কৃষি লিজ নিয়ে পাকা গৃহ নির্মাণ, স্টেশনের প্লাটফর্ম ঘেষে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের অভিযোগে আংশিক উচ্ছেদ করা হয়। তবে উচ্ছেদ কার্যক্রমে গরিব নিরিহ লোকেরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

এ উচ্ছেদ অভিযানে বাংলাদেশ রেলওয়ের ভূসম্পত্তি বিভাগ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য (আরএমপি), শমশেরনগর ফাঁড়ির পুলিশ, শ্রীমঙ্গল ও কুলাউড়া জিআরপি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে কার্যক্রম শুরু হয়। এসময় কেউ কেউ তড়িঘড়ি মালামাল নিয়ে রাস্তার আশপাশে অবস্থান নেন। অভিযানকালে নবনির্মিত পাকা দেয়ালের তিনটি বসত ঘর, স্টেশনের রেলক্রসিং এলাকায় ছোট ছোট কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সিএনজি-অটোরিক্সা চালক সমিতির অফিস উচ্ছেদ করা হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কিছু লোক জানান, স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল রেলওয়ের ভূমি লিজ দেখিয়ে যুগযুগ ধরে দখল ও বাণিজ্য চালিয়ে আসছে। রেল স্টেশনের দু’পাশে পাকা দেয়ালের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। একটি সিন্ডিকেট চক্র রেলওয়ের ভূমিতে প্রতিষ্ঠান গড়ে জমজমাট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের ভানুগাছ, শ্রীমঙ্গল, কুলাউড়াসহ বিভিন্ন স্থানে রেলয়ের ভূমি দখলে নিয়ে এভাবে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে। তবে আকস্মিকভাবে উচ্ছেদ অভিযানে নিরিহ লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়ে শমশেরনগর ইউপি চেয়ারম্যান জুয়েল আহমদ বলেন, বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কৃষি লিজের নামে রেলওয়ের জমি অধিগ্রহণ করে প্রলোভন দিয়ে নিরিহ গরিব মানুষের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। শমশেরনগর রেলওয়ের জমিতে প্রায় শতাধিক গরিব পরিবার রয়েছে। এসব গরিব লোকেরা সহায় সম্বল হারিয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। তবে উচ্ছেদ অভিযানের পূর্বে নিরিহ গরিব লোকদের পুনর্বাসন এবং তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা উদ্ধারের প্রতি সংশ্লিষ্টদের কাছে তিনি দাবি জানান।

বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযানে রেলওয়ের ঢাকাস্থ সহকারী ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা অহিদুন নবী, কানুনগো আমিন উদ্দীন, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনী সিলেট এর মো. মাহতাব উদ্দীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রেলওয়ের কুলাউড়া অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিপূর্বে সরেজমিন পরিদর্শন করে এ বিষয়ে অভিযোগ এবং সংবাদপত্রে রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ঢাকা-সিলেট রেলপথে ডবল লাইন নির্মাণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে এই সেকশনের সবগুলো অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

অভিযান বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নজরুল ইসলাম বলেন, কৃষিজমি লিজ নিয়ে অবৈধভাবে বাসাবাড়ি স্থাপন, জমি নিয়ে মামলা এবং সংবাদ মাধ্যমে এ সম্পর্কিত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশের পর এই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে অভিযানের পূর্বে বসবাসরতদের মালামাল সরিয়ে নিতে জানানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অবৈধভাবে স্থাপিত উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। জনবল ও বোলডোজার পাওয়ার পর পর্যায়ক্রমে সবক’টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৬ জানুয়ারি ২০১৯/জেএ/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন