আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

অবরুদ্ধ কাশ্মীরের মুক্তি কোন পথে?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২৪ ১৮:০৪:০৩

সিলেটভিউ ডেস্ক :: কাশ্মীর জ্বলছে। ৭২ বছর ধরে জ্বলছে। লেলিহান শিখা উঁচিয়ে কখনও দাউ দাউ করে ওঠে আগুন, কখনও জ্বলে ছাইয়ের তলে গনগনিয়ে-কিন্তু নেভে না। কারণ নিভতে দেয়া হয় না। দুনিয়ার স্বর্গ বলে খ্যাত অঞ্চলটিতে দেড় কোটি মানুষ ভুগছে নরকযন্ত্রণায়।

সবুজ জমিনজুড়ে ছোপ ছোপ রক্ত, বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদের ঝাঁজ। লক্ষাধিক মানুষকে মারা হয়েছে গুলি করে, হাজার হাজার গুম, অসংখ্য নারী-শিশু পাশবিক নিগ্রহের শিকার। যারা মানুষ মারছে, পুড়িয়ে ছারখার করে দিচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি-তারা মানুষ চায় না, মাটি চায়। মাটির পূর্ণ দখল নিতেই তারা মানুষ মারছে, মানুষ তাড়াচ্ছে, বসতি পোড়াচ্ছে।

ভারত ভাগ হয় ১৯৪৭ সালে। কথা ছিল, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলো নিয়ে গঠিত হবে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তান। কাশ্মীর শত শত বছর ধরেই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ। ১৯৪১ সালে ইংরেজ-চালিত শেষ আদমশুমারি অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীরে মুসলিম ছিল ৭৫.৯৭ শতাংশ।

আর সবচেয়ে জনবহুল কাশ্মীর উপত্যকায় এ হার ৯৫ শতাংশ। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই জম্মু-কাশ্মীর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার, তা নইলে স্বাধীন হওয়ার কথা। কিন্তু ইংরেজ আর কিছু দুষ্ট রাজনীতিবীদের চক্রান্ত তা হতে দেয়নি।

ঔপজাতিক বিদ্রোহীদের হামলার মুখে কাশ্মীরের রাজা হরি সিং পালিয়ে গিয়ে ভারতের বিদায়ী লর্ড মাউন্টব্যাটেন ও প্রধানমন্ত্রী নেহরুর কাছে সৈন্য পাঠাবার অনুরোধ করেন।

তারা হরি সিংকে বলেন, কাশ্মীরকে ভারতের অংশ বলে মেনে নিলে সৈন্য পাঠানো হবে। দিশেহারা হরি সিং কাশ্মীরবাসীর ইচ্ছার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে গিয়ে ওই শর্তে দস্তখত করে বসেন। দস্তখত না বলে একে দাসখত বলাই ভালো। সাজানো এ ছুতা ভারতকে যুক্তি যোগায় কাশ্মীর দখলে। চুক্তি সইয়ের পর কাশ্মীরে প্রবেশ করে ভারতীয় সৈন্য। উলটো দিক থেকে ঢোকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অনিবার্য হয়ে ওঠে যুদ্ধ।

চার বছর যুদ্ধ চলার পর জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস হয়-দু'দেশের সৈন্যই ফিরে যাবে এবং গণভোট হবে কাশ্মীরে, গণরায় যেদিকে যাবে সে দেশের সঙ্গেই যুক্ত হবে কাশ্মীর। কিন্তু ভারত গণভোটের প্রস্তাবে রাজি হয়নি।

কারণ কাশ্মীরের মুসলিমরা কিছুতেই ভারতের অধীনে থাকতে চাইবে না, এ শংকা ছিল তাদের। এভাবেই কাশ্মীরে ভারত গণতান্ত্রিক মীমাংসার পথ বন্ধ করে জিইয়ে রেখেছে অশান্তির আগুন।

প্রতিবেশী দু'টি দেশের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়েছে চারবার। সম্প্রতি কেড়ে নিয়েছে রাজ্যটির স্বায়ত্তশাসনের সাংবিধানিক অধিকার। খুলে দিয়েছে অবাধ অনুপ্রবেশের দুয়ার। চূড়ান্ত করেছে সংখ্যাগুরু মুসলিমদের সংখ্যালঘুতে পর্যবসিত করার নীলনকশা।

বর্তমানে জম্মু-কাশ্মীরের ৫৫% ভারতের, ৩০% পাকিস্তানের এবং ১৫% রয়েছে চীনের নিয়ন্ত্রণে। ভারতের দখলে কাশ্মীর উপত্যকা, জম্মু, লাদাখ ও সিয়াচেন হিমবাহ-লোকবসতি ৭০%। পাকিস্তানের অধীনে আজাদ কাশ্মীর ও গিলগিট-বালতিস্তান-৩০% জনঅধ্যুষিত। চীনের দখলে জনশূন্য শাক্সগাম উপত্যকা ও আক্সাই চীন।

গুলি-আগুন-হত্যা-ধ্বংস-বিদ্রোহ-নিপীড়ন সব ভারতের দখলে-রাখা অংশে। কারণ জবরদখল। জম্মুর কিছু হিন্দু ছাড়া গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী ভারতকে কেউ চায় না। ভারতের অন্যায় দখলদারিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বিক্ষুব্ধ। এখন তো জনগণের ক্ষোভ প্রকাশের পথও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছে বিজেপি সরকার। গোটা কাশ্মীরকেই বানিয়ে রেখেছে কারাগার, বরং তার চেয়েও খারাপ।

মোবাইল ফোন, ল্যান্ড ফোন, ইন্টারনেট বন্ধ। হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বন্ধ। ঘর থেকে বেরুতে পারছে না মানুষ। খাবার ফুরিয়ে গেছে, চিকিৎসার অভাবে প্রসূতি মায়েরা ছটফট করছে। রাস্তায় রাস্তায় সেনা টহল, একটু পরপর ব্যারিকেড। বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন অবরুদ্ধ কাশ্মীর আতঙ্কে কাঁপছে। ছিটেফোঁটা বাদে, খবরও জানা যাচ্ছে না।

অনুমান, সামরিক-আধা সামরিক সাত লাখ সশস্ত্র ভারতীয় সৈন্য মোতায়েন রয়েছে সেখানে। কাশ্মীরই এখন বিশ্বের সর্বোচ্চ সামরিকায়িত অঞ্চল। ভূমি ও জনসংখ্যার তুলনায় কোথাও এত বিপুল সৈন্যসমাবেশ নজিরবিহীন।

বিবিসির প্রতিনিধি শুভজ্যোতি ঘোষ শ্রীনগর পৌঁছার পরদিন সামান্য সময়ের জন্য যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন বাইরের সঙ্গে। বলেছেন-‘শ্রীনগরে পা রাখার পর ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে, কিন্তু মনে হচ্ছে যেন মৃত্যু-উপত্যকায় এসে পৌঁছেছি। রাস্তায় রাস্তায় একশ’ গজ পরপরই সেনা চৌকি আর কাঁটাতারের ব্যারিকেড। রাস্তায় যত না সাধারণ মানুষ, তার চেয়ে বহু গুণ বেশি সেনা আর আধা-সেনা।’ পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক।

কী চায় আরএসএস-শিবসেনার পৃষ্ঠপোষক উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি? অযোধ্যায়-গুজরাটে মুসলিম নিধনে নেতৃত্ব দেয়া মোদি কি কাশ্মীরে আরও বড় গণহত্যার পরিকল্পনা করছেন?

কাশ্মীর আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত না হলেও কখনোই ঠিক ‘ভারতীয়’ ছিল না। ভূ-প্রকৃতি, ঐতিহ্য, জনতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যে অঞ্চলটি ভারত থেকে একেবারেই আলাদা। শত শত বছর ধরে স্বাধীন রাজাদের দ্বারা শাসিত কাশ্মীর ভারতভাগের সময় চেয়েছিল পাকিস্তানে যুক্ত হতে, কিন্তু পারেনি। তারপর দুই দেশ তিন-তিনটে যুদ্ধে জড়াল, কাশ্মীরের ভাগ্যের ফয়সালা তবু হল না।

কাশ্মীর ভারতীয় হতে চায় না, যেমন কখনও চায়নি-এখন চায় না পাকিস্তানি হতেও, কেননা তা সম্ভব নয়।

আবহমানকালের স্বাধীন রাজ্য কাশ্মীর এখন চায় স্বাধীন রাষ্ট্র হতে। কিন্তু সেও কি সম্ভব? প্রতিবেশী চীন না হয় চুপ থাকল, সহমর্মী পাকিস্তান হয়ত মেনে নিল-কিন্তু দখলদার ভারত কি কাশ্মীরের স্বাধীনতার স্বপ্ন সত্যি হতে দেবে? বিলকুল না।

কারণ কাশ্মীর প্রতিরক্ষানীতি ও অর্থনীতির দিক থেকে ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সমান গুরুত্বপূর্ণ পাকিস্তানের জন্যও, চীনেরও রয়েছে তাতে লুব্ধদৃষ্টি।

এভাবে কাশ্মীরকে তিন দিক থেকে টানছে তিনটি পরমাণু শক্তিধর দেশ। এ টানাটানি এদের আবারও টেনে নিতে পারে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের দিকে। প্রশ্ন হল, কেন কাশ্মীর এত গুরুত্বপূর্ণ?

মধ্য এশিয়ায় ভারতের বাণিজ্যবহরের যাত্রাপথ কাশ্মীর। কাশ্মীরের উত্তর সীমান্ত পাঞ্জাবসহ পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম প্রদেশগুলোতে ঢোকার সরাসরি প্রবেশপথ। এ ছাড়াও জম্মু-কাশ্মীর সীমান্ত বহুরাষ্ট্রিক- যা উত্তরদিকে মধ্য-এশীয় প্রজাতন্ত্র, পূর্বে চীন এবং পশ্চিমে আফগানিস্তানের সঙ্গে যুক্ত।

অঞ্চলটি চীন, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও নিকটবর্তী সাবেক সোভিয়েতশাসিত তাজিকিস্তানের মতো অনেকগুলো আঞ্চলিক পরাশক্তির দিকে ভারতের জানলা খুলে দিয়েছে। ফলে বাণিজ্য, ভূ-রাজনীতি ও নিরাপত্তার প্রশ্নে জম্মু-কাশ্মীর ভারতের অন্য যে-কোনো রাজ্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

কাশ্মীরে রয়েছে প্রকাণ্ড সব হিমবাহ। হিমালয় থেকে নেমে আসা ঝিলম, চেনাব, সুতলেজ, রবি, বীস, সিন্ধু প্রভৃতি বরফগলা নদ-নদী ভারতের এক বিলিয়ন মানুষকে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। পাকিস্তানও কৃষিতে প্রধানত এই অঞ্চল থেকে প্রবাহিত পানির ওপর নির্ভরশীল।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং সেই অনুপাতে প্রবৃদ্ধ বিদ্যুৎ-চাহিদা মেটাতে ভারত আরও জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এই অঞ্চলের দিকে নজর দিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান আশঙ্কা করছে যে, ভারত সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে।

এভাবে কাশ্মীর এ বিবদমান দু’টো দেশের জন্যই বড় নাজুক জায়গা, যাতে একের একক আধিপত্য অন্যের অস্তিত্বের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে।

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তান সিন্ধু পানিচুক্তি স্বাক্ষর করে। এর ফলে ভারত পূর্বপ্রান্তের বিপাশা, ইরাবতী ও শতদ্রু নদীর ওপর এবং পাকিস্তান পশ্চিম দিকের সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে।

ভারত এ চুক্তি মেনে না চললেও-না মানার নজির একের পর এক নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ-একে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে ভুল করে না। দু’দেশের মধ্যে কোনোকিছু নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলেই ভারত পানি আটকে রাখার হুমকি দেয়। যেমন উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, রক্ত আর পানি একসঙ্গে বইতে পারে না।

অন্যদিকে পাকিস্তান মনে করে, ভারত কর্তৃক সিন্ধু পানিচুক্তি প্রত্যাহার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এই দ্বিপক্ষীয় উত্তেজনায় তৃতীয় পক্ষ হয়ে ইতিমধ্যেই যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে আছে প্রকৃতি।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে এ সব নদী-নালার উৎস কাশ্মীরের হিমবাহগুলো গলে যাচ্ছে দ্রুত। এক হিসাবে ১৭৪ গিগাটন পানি ঝরিয়েছে হিমালয়ান হিমবাহ (১০০ কোটি টনে এক গিগাটন), এ বর্ধমান গলনহার ভারত-পাকিস্তানে মারাত্মক বন্যার কারণ।

পানির বর্তমান এ প্লাবন অর্থনীতির অনিবার্য খরার পূর্বাভাস। বৈশ্বিক ক্রম-উষ্ণায়ন এক সময় ভারতকে ঠেলে দেবে দীর্ঘ বিদ্যুৎ-ঘাটতিতে, আর পাকিস্তানকে মুখোমুখি করবে অনিবার্য কৃষি-বিপর্যয়ের। তবে তৃতীয় পক্ষের আক্রমণের আগেই বিপুল পানির উৎস, ভারতের জন্য দুনিয়ায় বেরুবার সদর দরোজা এবং পর্যটনের অমিত সম্ভাবনার কাশ্মীরের দখল নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় চতুর্থ যুদ্ধের সম্ভাবনা খুব একটা দূরে বলে মনে হয় না।

‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ’ (আরএসএস) হল ভারতের হিন্দু-সাম্প্রদায়িক জঙ্গি সংগঠন। এর লক্ষ্য সমগ্র ভারতে একচ্ছত্র রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠা। সেই লক্ষ্য অর্জনে ভারতের সংখ্যালঘু বিভিন্ন ধর্মীয়গোষ্ঠী, বিশেষ করে মুসলিমদের হত্যা ও উচ্ছেদ করা আরএসএসের অন্যতম প্রধান কর্মসূচি।

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। স্বাধীনতার চার মাসের মাথায় আরএসএস সদস্য নাথুরাম গডসে গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার কারণ সে আদালতে দেয়া তার জবানবন্দিতে বলে গেছে।

তার ভাষায়, মুসলিমরা এক হাজার বছর ভারত শাসনের নামে হিন্দুদের ওপর অত্যাচার করে গেছে। অখণ্ড ভারত স্বাধীন হলে এ সব অত্যাচারের শোধ নেয়া যেত। কিন্তু গান্ধী মুসলিমদের জন্য আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের সুযোগ দিয়ে ভারতকে খণ্ডিত করেছেন। এমনই কট্টর সাম্প্রদায়িক ও সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শের জন্য ইংরেজ আমলে আরএসএস নিষিদ্ধ ছিল, গান্ধী হত্যা ও বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরেও একে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়।

আরএসএসের দৃষ্টিতে নাথুরাম বিরাট বীর। মধ্যপ্রদেশে মহাত্মা গান্ধীর এই স্বীকৃত খুনির নামে এখন মন্দির হচ্ছে।

উপমহাদেশের রাজনীতির জন্য ভয়ানক উদ্বেগের খবর হল, বর্তমান ভারত সরকারের প্রধান তিন কর্তাই আরএসএসের সদস্য ছিলেন। এরা হলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তিনজনেরই চোখ এখন কাশ্মীরে।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যকে তারা শুরুতেই করেছে নৈরাজ্য, অর্থাৎ কেন্দ্রশাসিত।

জম্মু-কাশ্মীর এখন আর রাজ্য নয়। নগদ ফল, ভারতে মুসলিমপ্রধান কোনো রাজ্য রইল না। রইল যে মুসলিম জনগণ, ধারা ৩৭০ বাতিল করার পর তারা সম্পূর্ণ অরক্ষিত। এখন হিন্দুরা গিয়ে তাদের হিন্দু বানাবে, রাজি না হলে হত্যা করবে, বাড়ি ও জমি দখল করবে, মেয়েদের জোর করে বিয়ে করবে, যা খুশি তা-ই করতে পারবে। বিজেপি নেতাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন বক্তব্যে এমনটিই স্পষ্ট হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীরকে নৈরাজ্যকরণের পর এবার বিজেপি তথা আরএসএস নেতাদের লক্ষ্য পাকিস্তানশাসিত আজাদ কাশ্মীর দখল করা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সম্প্রতি সংসদে বলেছেন, পাক-অধিকৃত আজাদ কাশ্মীরের জন্য তিনি প্রাণ দিয়ে দেবেন। তার সুরে সুর মিলিয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো আলোচনা যদি হতে হয়, তা হবে আজাদ কাশ্মীর নিয়ে। জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের কীসের কথা?

অন্যদিকে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং বলেছেন, ভারতীয় নদ-নদীর পানি পাকিস্তানে যাওয়া বন্ধ করতে তিনি কাজ শুরু করেছেন। এ ছাড়াও প্রতিরক্ষামন্ত্রী আগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার না করার নীতি থেকেও ভারতের সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

কাশ্মীরে স্থানীয় নেতাদের বন্দি, জরুরি অবস্থা জারি ও সৈন্যসংখ্যা বৃদ্ধির পর ভারত সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের এ সব মন্তব্য কি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের আরেকটি আগ্রাসী যুদ্ধের সুস্পষ্ট পূর্বাভাস বহন করে না?

এমতাবস্থায় কাশ্মীরের মজলুম মুসলিমদের ভাগ্যে আরও খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে বলে মনে হয়। মুক্তি ও স্বাধীনতা তাদের সাধ্য ও সামর্থ্যরে বাইরে।

দুনিয়ার মুসলিম দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসমূহের চাপে চীন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আমেরিকার মতো পরাশক্তিগুলো যদি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবি মেনে নিতে ভারতকে বাধ্য করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাহলেই কেবল মুক্ত ও স্বাধীন হতে পারে কাশ্মীর। দীর্ঘকাল ধরে চলা কাশ্মীর সংকটের স্থায়ী সমাধানের এ ছাড়া আর কোনো পথ নেই।


সৌজন্যে : যুগান্তর

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৪ আগস্ট ২০১৯/জিএসি

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন