আজ শনিবার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং

স্পেনে হারানো ঐতিহ্যের খোঁজে আন্দালুসের মুসলিমরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৫-৩০ ১৮:২৬:৫৯

সিলেটভিউ ডেস্ক :: স্পেনের হারিয়ে যাওয়া মুসলিম ঐতিহ্য পুনরায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন সেখানকার মুসলিমরা। মুসলিম শাসকদের পতনের দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পর সেখানের ইসলামী ঐতিহ্যও প্রায় হারিয়ে যায়। তবে আশাপাশের বিভিন্ন দেশের ছড়িয়ে থাকা স্পেনিশ মুসলিম নিজেদের ঐতিহ্য এখনও ধরে রেখেছেন। দক্ষিণ স্পেনের গ্রানাডা সিটির গ্রেট মসজিদের তত্ত্বাবধানের ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের পরিচালক আবদুল কাদির শ্যালির এমনটি জানান।

তুরস্ক ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আনাদোলু এজেন্সিকে শ্যালির জানান, তিনি ১৯৮০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা-মা উভয়ে মুসলিম। আমেরিকার নাগরিক তাঁর বাবা তুরস্কের কোনয়া শহর ভ্রমণ করে ১৯৭০ সালের দিকে ইসলাম গ্রহণ করেন। অতঃপর নিজ দেশে ফিরে ম্যাক্সিকো বংশোদ্ভূত মুসলিম নারী তাঁর মায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাঁকে বিয়ে করেন।

শ্যালির জানান, আন্দালুসের অন্যতম শহর গ্রানাডায় তিনি সপরিবারে বসবাস করেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে তিনি এখানে আসেন। এর আগে তাঁরা ইংল্যান্ড ও আলবেনিয়াও বসবাস করেন। গত চার বছর আগে আন্দালুসিয়ার ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হোন তিনি।

গ্রেট মসজিদের পাশে অবস্থিত ঐতিহাসিক আল হামরা প্রাসাদের প্রতি নিজের মুগ্ধতা প্রকাশ করেন শ্যারল বলেন, ‘আল হামরা প্রাসাদ আন্দালুসে মুসলিম ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতীক। মুসলিমরা ৭১১ থেকে ১৪৯২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৮ শ বছর আন্দালুস শাসন করেন। সব সময় দেখার সুযোগ মিললেও যত বারই প্রাসাদের ওপর নজর বুলান, ততবার তিনি পুলক অনুভব করেন।

আল হামরা দর্শকদের কান্না : শ্যালর আরো জানান, গ্রানাডা ও আল হামরা প্রাসাদ দেখতে আসা মুসলিম দর্শকদের ওপর এর প্রভাব অনেক বেশি। অনেক দর্শনার্থী ইসলামী সংস্কৃতি-ঐতিহ্য কল্পনা করে তা দেখেই কান্না করে ফেলেন।

বিশ্বের যেকোনো স্থানের দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। ইতিহাস ঐতিহ্যের অমর স্থাপত্য ও বিশ্বব্যাপী এর প্রভাব দেখে তাঁরা আবেগাল্পুত হন। এসব এক সময় মুসলিম শাসনামলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। মুসলিম ঐতিহ্যের এসব ভূমি এখন আর কেবলই হারানো স্মৃতির স্থাপনা।

শ্যালর আরো জানান, আল হামরা প্রাসাদের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট কমবেশি অনেকেই জানেন। তবে বিষয়টি স্পেনিশদের মধ্যে তেমন স্পষ্ট ধারণা নেই। কারণ পাঁচ শ বছর আগে এখানকার ইসলাম ও মুসলিম সম্পৃক্ত সব স্মৃতিচিহ্ন ক্যাথলিক সম্রাটরা মুছে ফেলার ব্যাবস্থা করেন।

তিনি আরো জানান, ১৪৯২ সালে শাসকরা মরিস্কো মুসলিমদের সব গ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলে। স্থাপত্যবিদ্যা, শিল্পকলা, কৃষিবিজ্ঞানসহ পবিত্র কোরআনের কপিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই গ্রানাডার পাইরামবলা চত্বরে পোড়ানো হয়। বিশ্বের ইতিহাসে এটি আরেকটি কালো অধ্যায়। গ্রানডায় বসবাসকারী মুসলিমদের সংরক্ষণাগারও পুড়িয়ে ফেলা হয়। সেখানকার অসংখ্য মসজিদ ও মাদরাসাও জ্বালিয়ে ফেলা হয়।

এরপর দীর্ঘকাল আন্দালুস ও স্পেনে ইসলামের সব চিহ্ন মুছে ফেলা হয়। আন্দালুসে ইসলামের হারানো ঐতিহ্য পুনরায় ফিরিয়ে আনতে বর্তমান মুসলিম প্রজন্ম কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেদের দৈনন্দিন কার্যাবলিতে মুসলিম ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে চান তাঁরা। বর্তমান জীবনাচার ও স্থিতিশীলতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে তাঁরা পুড়িয়ে ফেলা ইতিহাস-ঐতিহ্য পুনপ্রতিষ্ঠা করতে চান তাঁরা।

বর্তমানে স্পেনে বসবাসরত মুসলিমদের অধিকাংশ জীবিকার তাগিদে অভিবাসী হিসেবে এখানে থাকেন বলে জানান শ্যালর। মুসলিমদের নতুন প্রজন্মের সামনে ইসলামী শিক্ষা তুলে ধরা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মুসলিম পরিবারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম ইসলাম শেখা থেকে বঞ্চিত হয়। কারণ ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় স্পেনের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলামকে বেশ ধীরে ধীরে গ্রহণ করছে। তাছাড়া স্পেনিশ সমাজে মুসলিমদের একীভূত হতেও বেশ বিলম্ব হয়।

শ্যালর স্পেনে বসবাসরত দ্বিতীয় মুসলিম প্রজন্মের একজন। আন্দালুস থেকে মুসলিমদের বিতারণের পর থেকে ইসলামের সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু মুছে ফেলা হয়। মূলত স্পেনের সবক্ষেত্রে সরকার ইসলামী ঐতিহ্য ও চিন্তা-বিশ্বাস দমনের নীতি অনুসরণ করছে। তবে তা সবকিছু মুছে ফেলা সহজেই সম্ভব নয়।

শ্যালর বলেন, স্পেনের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইসলাম বিষয়ক কয়েকটি বিষয়ে পরিবর্তন আনতে চায়, যাতে সামাজিকভাবে মুসলিমদের গ্রহণ করা যায়। কিন্তু একথা অনস্বীকার্য অনেক বিষয় কখনো পরিবর্তন করা যায় না। মূলত এটিই দ্বন্দ্বের প্রধান কারণ। অবশ্য সবাই তা উপলব্ধি করেন না। বাস্তবে এর অনেক বেশি প্রভাব।

তবে শ্যালর আশা প্রকাশ করে বলেন, এক সময় স্পেনের সবক্ষেত্রে ইসলাম ওতপ্রোতভাবে সম্পৃক্ত হবে। এমনকি দৈনন্দিন জীবনের পরতে পরতে ইসলাম মিশে যাবে। যেমনটি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির ক্ষেত্রে হয়েছে। তবে বিষয়টি সময়সাপেক্ষ এবং এর জন্য ধৈর্যের প্রয়োজন।



সৌজন্যে : আনাদোলু এজেন্সি
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-১২

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন