আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

৫ অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণে তৈরি অ্যান্টিবডি, ২০ মিনিটেই ধরবে করোনাকে!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৩-৩১ ১৭:৪৪:৫৬

সিলেটভিউ ডেস্ক :: করোনার ভয়াল আঘাত ভেঙেচুরে তছনছ করে দিচ্ছে বিশ্ব। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবার খুঁটি। একে রুখার উপায় অজানা। বিজ্ঞানীরা নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কার্যকর ওষুধ ও প্রতিষেধক আবিষ্কারর। অনেকেই সাফল্যের বাণী শুনালেও এখনও চূড়ান্ত সফলতা নেই। তবে এবার আতঙ্কের মাঝেও দেখা দিল আশার আলো। ভরসার কথা শুনিয়েছে সানফ্রান্সিসকোর একদল বিজ্ঞানী। তারা ৫টি অ্যান্টিবায়োটিক মিলিয়ে একটি নতুন অ্যান্টিবডি আবিষ্কার করেছেন। যেটা মাত্র ২০ মিনিটেই করোনার বিরুদ্ধে কাজ করবে বলে দাবি এই বিজ্ঞানী দলের।

নেটফ্লিক্স ডকুমেন্টারি প্যান্ডেমিকের অন্যতম সদস্য জ্যাকব গ্লানভিলি ও তার দল একটি অ্যান্টিবডি থেরাপি খুঁজে বের করার জন্য কাজ করে চলেছেন। সোমবার তিনি প্রতিষেধক আসন্ন বলে একটি টুইট করেছেন।

সেখানে ডা. গ্লানভিল বলেছেন, 'আমি এই প্রতিবেদন করে খুশি যে আমার দলটি পাঁচটি অ্যান্টিবডি সফলভাবে নিয়েছে যা ২০০২ সালে সার্স ভাইরাসকে প্রতিরোধে সফল হয়েছিল। আমরা এগুলি আমাদের পরীক্ষাগারে উন্নত করেছি, এবং নতুন একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি যেটা খুব জোরেশোরে সার্স-কোভি -২ [কোভিড -১৯] ভাইরাসকেও দক্ষতার সাথে থামাতে পারবে।

তারা উপযুক্ত একটি ওষুধ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যা মানবদেহে ট্রায়ালের পর করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যাবে বলে আশা করছেন ডা. গ্লানভিল।

'নতুন ভাইরাসটি পুরানো সার্সের চাচাতো ভাই। সুতরাং আমরা যা করেছি তা হল আমরা সেই অ্যান্টিবডিগুলির কয়েক মিলিয়ন সংস্করণ তৈরি করেছি। আমরা তাদের কিছুটা পরিবর্তন করেছি এবং পরিবর্তিত সংস্করণগুলির সেই মিশ্রণটিতে আমরা এমন কিছু পেয়েছি যেটা ভাইরাসটি প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

এখন আমরা জানি যে, নতুন কোভিড-১৯ এর মতো ভাইরাসকে কিভাবে প্রতিরোধ করতে হয়। এটি ভাইরাসটি মানবদেহের কোষগুলিতে প্রবেশের জন্য যে স্পটটি ব্যবহার করে সেটিকে ব্লক করে দিতে পারলেই এটাকে আটকানো যাবে।

এই মুহুর্তে আমরা জানি যে, করোনাভাইরাসের দুর্বল স্পটটি হচ্ছে এর চর্বি দিয়ে তৈরি খোলস। আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপটি হল, আমরা অ্যান্টিবডিগুলিকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর কাছে প্রেরণ করব এবং তারা সরাসরি এটি ভাইরাসগুলিতে রাখবে এবং দেখবে যে এটি কোষগুলিকে সংক্রামিত করার ক্ষমতাকে বাধা দেয় কি-না।

ডা. গ্লানভিলি বলেছিলেন যে, সামরিক বাহিনী ভাইরাসটি নিয়ে সরাসরি কাজ করতে চায় না। তারা কোভিড -১৯ বা সার্সের মতো ভাইরাসগুলি তাদের পরীক্ষাগারে চায় না। তবে এটি আমাদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ। আপনার তৈরি ওষুধটি যখন সামরিক বাহিনী দ্বারা অনুমোদিত হবে তখন সেটার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যায়। সামরিক বাহিনী যখন স্বাধীনভাবে আপনার কাজ পরীক্ষা করতে চান তখন এরচেয়ে ভালো কিছু আর হতে পারে না।

আমাদের তৈরি অ্যান্টিবডিগুলি আকর্ষণীয়, কারণ আপনি যখন হাসপাতালে থাকবেন তখনই আপনি রোগীদের অ্যান্টিভাইরালের মতো এটা দিতে পারেন। এমনকি ডাক্তারদেরও দিতে পারেন, অসুস্থ হওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য আপনি বয়স্ক লোকদেরও এটা দিতে পারেন।

এটি স্বল্পমেয়াদী ভ্যাকসিনের মতো নয়। এটি গ্রহণের কিছু সময় পরেই তাৎক্ষণিকভাবে কাজ শুরু করে। একটি ভ্যাকসিন কার্যকর হতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ সময় নিতে পারে, যেখানে এটি ২০ মিনিটের মধ্যে কার্যকর হবে। আপনি কোভিড -১৯ এর অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অসুস্থ একজন রোগীকে এটি দিতে পারেন, শট দেওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই তাদের দেহ অ্যান্টিবডিগুলি ছড়িয়ে পড়বে। এই অ্যান্টিবডিগুলি সমস্ত ভাইরাসের চারপাশে ছড়িয়ে থাকবে এবং এটি প্রতিরোধ দেয়াল তৈরি করবে যাতে এটি আর সংক্রামক না হয়।

তবে ভ্যাকসিনের তুলনায় এর অসুবিধা রয়েছে জানিয়ে  ডা. গ্লানভিলে বলেছিলেন, 'কোনও ভ্যাকসিন আপনাকে এক বছর বা একাধিক বছর পর্যন্ত সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু অ্যান্টিবডিগুলি কেবল ৮ থেকে ১০ সপ্তাহের জন্য আপনাকে সুরক্ষা দেবে।

সেনাবাহিনী কোভিড -১৯ এর বিরুদ্ধে আমাদের তৈরি অ্যান্টিবডিগুলি পরীক্ষা করবে এবং ওষুধটি মানুষের পক্ষে নিরাপদ কি-না তা নিশ্চিত করার জন্য আরেকটি ল্যাবরেটরি পরীক্ষা করা হবে।

ডা. গ্লানভিলে আরও বলেন, আমরা ওষুধ তৈরির জন্য জিএমপি নামক অত্যন্ত কঠোর উৎপাদন মান মেনে চলা একটি কম্পনির সঙ্গে কাজ করি এবং এতে একাধিক মাস সময় লাগতে পারে। একবার যখন এই উপাদানটি প্রস্তুত হয়ে যায় তখন আমরা একটি মানবিক পরীক্ষায় যাই। এটি এমন একটি ট্রায়াল যেখানে আপনি এটি হাসপাতালে উপসর্গের আক্রান্ত এমন ৪০০ থেকে ৬০০ ব্যক্তির ওপর একটি সিরিজ ডোজ প্রদান করবেন এবং তারপরে আপনি পরবর্তী পাঁচ থেকে ১০ দিন তাদের প্রতি নজর রাখবেন যে ওষুধটি সঠিকভাবে কাজ করছে কি-না।

তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করার জন্য আমি ও আমার সহকর্মীরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। আশা করি এটি বেশি সময় নেবে না। আমরা সার্স অ্যান্টিবডিগুলি তৈরির সময় ট্রায়ালে শূকরের বাচ্চা ব্যবহার করেছিলাম। এ ক্ষেত্রেও তেমনটি করা হতে পারে। আমাদের টেকনোলজিগুলি খু্বই উন্নতমানের ও শক্তিশালী। আমরা অবশ্যই সফল হবো।

পরবর্তী পদক্ষেপ হল, এটি বড় আকারে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাওয়া। এরজন্য আমাদের বাণিজ্যিক অংশীদার জিএমপি ম্যানুফেকচার। তারা এটার জন্য সাধারণত ১২ মাস সময় লাগবে বলছে। তবে আমরা এত দিন অপেক্ষা করতে পারি না। সুতরাং, আমরা আরও দুটি অংশীদারের সাথে কাজ করেছি, যাতে কয়েক মাসের মধ্যে বাজারে আনা যায়।'

সৌজন্যে : আরএনজেড, কালের কণ্ঠ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৩১ মার্চ ২০২০/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন