আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ব্রিগেডে ৬৮ মিনিটের ভাষণে পানি খেলেন, মুখও মুছলেন মোদি

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-০৭ ২০:১৫:৫৭

সিলেটভিউ ডেস্ক :: কলকাতার বিগ্রেড মাঠে বিজেপির সমাবেশ শুরু। দুপুর ২টা ৩৩ মিনিট। গলা কখনো খাদে। কখনো চড়ায়। চোখ কখনো ডানে। কখনো বাঁয়ে। দু’হাতে হাজারো মুদ্রা। কখনো হাত উপরে তুলে নমস্কারের ভঙ্গিমা। কখনো হাতে হাতে তালি। কখনো বাজাচ্ছেন পোডিয়ামের পিঠ। হিন্দির ভাঁজে ভাঁজে মেশাচ্ছেন বাংলা বাক্য। কখনো নরম। কখনো গরম। কখনো আক্রমণে ঝাঁঝালো। কখনো মুহূর্তের নীরবতা। পরমুহূর্তে আবার সুর সপ্তমে।

রোববার (৭ মার্চ) ব্রিগেডে ৬৮ মিনিট ভাষণ দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মোবাইলের অ্যাপ তখন জানান দিচ্ছে, কলকাতার তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। তাপ এতোটাই যে, মোদিকে বেশ কয়েকবার মুছতে হলো গাল-কপাল। ছোট্ট পানির গ্লাসেও চুমুক দিলেন কয়েকবার।

দিল্লি থেকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বিমান কলকাতার মাটি ছুঁয়েছিলো দুপুর ১টা ২৩ মিনিটে। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে সোজা রেসকোর্সের মাঠ। ব্রিগেডের আকাশে যখন মোদির হেলিকপ্টার ভাসছে, তখন সমবেত জনতা ‘মোদি... মোদি... মোদি...’ চিৎকারে উল্লসিত। হেলিপ্যাড থেকে কালো টয়োটা ফরচুনার মোদিকে সোজা পৌঁছে দেয় ব্রিগেডের হ্যাঙ্গার মঞ্চের ঠিক পাশে। তখন ২টা ২৬ মিনিট।

মিনিট সাতেকের মধ্যে মঞ্চে উঠে জনতাকে দু’হাত জড়ো করে প্রণাম করলেন মোদি। বললেন, শ’য়ে শ’য়ে মিটিং করেছি। এতো বড় জনসমাগম আগে দেখিনি। ভালো লাগছে। হেলিকপ্টার থেকে দেখছিলাম। ময়দানে কোনো খালি জায়গা নজরে পড়ছিলো না। সব রাস্তা লোকে ভর্তি। অনেকে পৌঁছাতেও পারবেন না।

ভিড়ের বহর দেখে মোদির আরো মন্তব্য- মনে হচ্ছে আজ ২ মে (যে দিন বাংলার বিধানসভা ভোটের ফলপ্রকাশ)।

তার আগেও একবার জনতাকে প্রণাম করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সাদা কুর্তা-পাজামা, হাল্কা আকাশি মাস্ক, গলায় পদ্মছাপ গেরুয়া-সবুজ উত্তরীয়, বুকের কাছে পদ্ম ব্যাজ, চোখে রিমলেস চশমা- মোদি ভাষণ দিতে উঠেই প্রথমে প্রণাম করেছিলেন ব্রিগেড-জনতাকে। পোডিয়ামে ওঠার আগে মাস্ক খুলে নিয়েছিলেন। ভাষণ শুরু করেছিলেন গম্ভীর স্বরে। গলা একেবারে খাদে নামিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন, ‘ভারত মাতা কি...’। জনতা ‘জয়’ধ্বনি দিতেই তিনি দু’হাত উপরে তুলে ‘বন্দে... বন্দে...’ বলতে বলতে জনতার কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছিলেন ‘মাতরম’ আওয়াজ।

তারপর কয়েক সেকেন্ডের নীরবতা। মুহূর্তেই গলা চড়াইয়ে তুলে বললেন, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে আমার সাদর প্রণাম।

নিজে প্রণাম করলেও মোদি কিন্তু প্রণাম নেননি। মঞ্চে ওঠার পর পরই মোদিকে উত্তরীয় পরিয়েছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। প্রধানমন্ত্রী তার দু’হাত জড়িয়ে ধরেন। মিঠুন প্রণাম করতে গেলে তিনি মাঝপথেই আটকে দেন। ধুতি-পাঞ্জাবি পরা মিঠুন ঝুঁকলেও পরমুহূর্তে সোজা হয়ে যান।

মঞ্চে উঠেই একদিক থেকে অন্যদিকে হাত নাড়তে নাড়তে হেঁটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু ভাষণ শুরু হতেই তার শরীর এবং চোখ ক্রমাগত ঘুরছিলো ব্রিগেড-জনতার ডাইনে-বাঁয়ে। সম্ভবত মঞ্চের একপাশে পাশে রাখা টেলি প্রম্পটার দেখে ভাষণ দেওয়ার কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় কখনোই মঞ্চের সোজাসুজি থাকা জনতার দিকে তাকাতে দেখা যায়নি।

বক্তব্য শুরুর মিনিট ১৮ পর মঞ্চে-থাকা কারো কাছ থেকে পানি চাইলেন। মুখের কাছে ডান হাতের বুড়ো আঙুল নিয়ে গিয়ে ইশারায় বোঝালেন, পানি খাবেন। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তারপর থেকে কয়েকবার তাকে চুমুক দিতে দেখা গিয়েছে পানির গ্লাসে। ছোট্ট সাদা তোয়ালেতে বেশ কয়েকবার মুখ এবং গাল মুছতেও দেখা গিয়েছে।

মোদির বক্তব্য মূলত বাঁধা ছিলো দু’টি শব্দে- ‘আসল পরিবর্তন’। ওই শব্দ বন্ধের ব্যাখ্যায় নিজের ভাষণের তিনটি ভাগকে অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে জুড়েছেন মোদি। প্রথম ভাগে তিনি ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ভাগে ‘আক্রমণাত্মক’। শেষ দুই ভাগে প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণ মূলত বিরোধী দল এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে।

‘বাংলা চায় উন্নতি’, ‘বাংলা চায় শান্তি’, ‘বাংলা চায় প্রগতি’, ‘বাংলা চায় সোনার বাংলা’র মতো বাক্য প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরেছেন হিন্দি-ঘেঁষা বাংলায়। শেষের দিকে আবারো বললেন, ভয় পাবেন না। নির্ভয়ে বিজেপিকে ভোট করুন। বাংলাকে ভয় মুক্ত করুন। বাংলা উন্নতি চায়। বাংলার জয়। ভারতের জয়।

বিকেল ৩টা ৪০ মিনিট। মোদি ফিরলেন তার ‘বন্দে...’ স্লোগানে। সঙ্গে জনতার সঙ্গত ‘মাতরম...’। দ্রুত লয়ে স্লোগান শেষ করে মঞ্চ ছাড়লেন মোদি। ব্রিগেড ময়দানের চারদিক থেকে ওঠা ধুলো ততোক্ষণে ঝাপসা করে দিয়েছে মঞ্চের মোদিকে। মাঠ ফাঁকা হতে শুরু করেছে।




সিলেটভিউ২৪ডটকম/ পূর্বপশ্চিমবিডি /জিএসি-২০

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন