আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ছোটখাটো মানুষ হলেও শামীমের ক্ষমতার দাপট ‘আকাশসমান’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৯-২১ ১৭:১৮:৩২

সিলেটভিউ ডেস্ক :: ছয়জন অস্ত্রধারী দেহরক্ষী প্রটেকশন দিচ্ছেন। সবার হাতেই শটগান। গায়ে বিশেষ সিকিউরিটির পোশাক। তাঁদের একেকজনের উচ্চতা প্রায় ছয় ফুট। যাকে মাঝখানে রেখে তাঁরা পাহারা দিচ্ছেন তিনি উচ্চতায় পাঁচ ফুটের কিছু বেশি। ছোটখাটো মানুষ হলেও তাঁর ক্ষমতার দাপট আকাশসমান। তিনি যখন চলেন তখন সঙ্গে চলে নিরাপত্তা বলয়।

এই মহাক্ষমতাধর ব্যক্তির নাম এস এম গোলাম কিবরিয়া ওরফে শামীম। নিজের নাম সংক্ষেপ করে বলতেন জি কে শামীম। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জি কে বিল্ডার্সের মালিক তিনি। নিজেকে পরিচয় দিতেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সমবায়বিষয়ক সম্পাদক বলে।

তিনি চলাফেরা করতেন গডফাদারের মতো। সঙ্গে তিনটি মোটরসাইকেলে ছয়জন দেহরক্ষী। বহরে থাকত অন্তত তিনটি গাড়ি। সাইরেন বাজাতে বাজাতে রাস্তা অতিক্রম করতেন। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গে দেহরক্ষীরা তাঁকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখতেন। রাজধানীর নিকেতন এলাকায় তিনি প্রবেশ করলেই সবাই তাঁর উপস্থিতি টের পেতেন।

রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবেই পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে এই শামীমই ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয় কিংবা যুবলীগের পার্টি অফিস, বিয়ে বাড়ি কিংবা বন্ধুর বাড়ি, যেখানেই তিনি যান, সঙ্গে থাকে অস্ত্রধারী প্রটোকল বাহিনী। ভারী অস্ত্র নিয়ে ছয়জন নিরাপত্তারক্ষী আগে-পিছে পাহারা দিয়ে তাঁকে নিয়ে যান। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতারও হয়েছিলেন জি কে শামীম।

বাসাবো এলাকায় পাঁচটি বাড়ি এবং একাধিক প্লট রয়েছে শমীমের। বাসাবোর কদমতলায় ১৭ নম্বরের পাঁচতলা বাড়িটি জি কে শামীমের। এই বাড়িটি ম্যানেজার হিসেবে দেখাশোনা করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. ইসমাইল হোসেন সর্দার। শামীম কয়েক বছর বাসাবোর ওই বাড়িতে বসবাস করলেও এখন থাকছেন বনানীর ওল্ড ডিওএইচএসে নিজের ফ্ল্যাটে। এবং নিজের কার্যালয় বানিয়ে বসেন নিকেতন এলাকায় একটি ভবনে। বাসাবোতে আরো রয়েছে তিনটি ভবন এবং ডেমরা ও দক্ষিণগাঁও ছাড়াও সোনারগাঁ উপজেলা, বান্দরবান ও গাজীপুরে কয়েক শ বিঘা জমি কিনেছেন তিনি।

বাসাবো এলাকায় জি কে শামীমের বিষয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চান না। আর খুলবেনই বা কোন সাহসে, যখন দেখেন শামীম চলছেন অস্ত্রধারী ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। যাঁর গাড়ির আগে-পিছে থাকে ক্যাডারদের গাড়ি। জি কে শামীমের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি গৃহায়ণ ও গণপূর্তের ঠিকাদাররাও।

তাঁর নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন এলাকার সাধারণ মানুষ। বৌদ্ধ মন্দিরের পাশেই একটি চায়ের দোকানে বসে ষাটোর্ধ্ব সিরাজুল ইসলাম চা খাচ্ছিলেন। জি কে শামীমের বাসাটা কোন দিকে জানতে চাইলে একটু এগিয়ে দেখিয়ে দিলেন তিনি। কিন্তু বাসার দারোয়ান জানালেন, বাসাবোর বাড়িতে তিনি কয়েক বছর ধরে থাকেন না, বসবাস করেন বনানীর ডিওএইচএসে এবং অফিসে বসেন নিকেতনে। স্থানীয় ৮ জনের কাছে শামীমের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কেউ কথা না বলেই চলে যান।

তবে থানা আওয়ামী লীগের সাবেক একজন নেতা—যিনি বর্তমানে নিষ্ক্রিয় রাজনীতিতে—তিনি নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেখুন মুখ খুললে তো জীবনটাই নাই হইয়া যাইবো, আগে-পিছনে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে চলে, কার বাপের সাধ্য আছে ওর বিষয়ে মুখ খোলার। মুখ খুললেই তো মাথার খুলি উইড়া যাইবো।

উল্লেখ্য, শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) র‍্যাব সদস্যরা রাজধানী নিকেতনে তাঁর কার্যালয়ে হানা দিয়ে তাঁকে ও তাঁর সাত দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করেন। এরপর সেখান থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা, ১৬৫ কোটি টাকার স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) কাগজপত্র (তাঁর মায়ের নামে ১৪০ কোটি), ৯ হাজার ইউএস ডলার, ৭৫২ সিঙ্গাপুরি ডলার, একটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং মদের বোতল জব্দ করা হয়েছে। র‍্যাব বলছে, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই অভিযান।

সৌজন্যে : পূর্বপশ্চিম
সিলেটভিউ২৪ডটকম/২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন