আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শিশু গৃহকর্মীর লাশ রেখে পালানোর সময় স্বামী-স্ত্রী ধরা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-২৮ ১৯:২৪:৫৯

সিলেটভিউ ডেস্ক :: পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতার আশায় সাত বছরের মেয়ে মরিয়মকে প্রতিবেশী নাদরাতুন নাইমার স্বামীর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে পাঠান কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার শাহেদল ইউনিয়নের বীর পাইশকা গ্রামের দিনমজুর সিরাজুল ইসলাম। মাত্র দুই মাস আগে মরিয়মকে স্বামীর কর্মস্থল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে নিয়ে যান নাইমা। তবে দুই মাস যেতে না যেতেই লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো ছোট্ট মরিয়মকে। তাইতো কান্না থামছে না স্বজনদের।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে সাত বছর বয়সী গৃহকর্মী মরিয়মকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে মরিয়ম ও তার ম্বামী এনাম এলাহী শুভকে আটক করেছে পুলিশ। কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় শিশুটিকে হত্যার পর বুধবার (২৮ অক্টোবর) ভোরে হোসেনপুরে তার গ্রামের বাড়িতে মরদেহ রেখে পালানোর সময় নাইমা ও তার স্বামী শুভকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। নির্মম এ ঘটনায় হতবিহবল এলাকাবাসী। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে স্বজন ও এলাকাবাসী।

পুলিশ জানায়, বীর পাইশকা গ্রামের নূরুল ইসলামের মেয়ে নাদরাতুন নাইমা দুই মাস আগে মরিয়মকে গৃহকর্মী হিসেবে তার স্বামীর কর্মস্থল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুরে নিয়ে যান। এরপর থেকে শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি। বুধবার ভোরে গৃহকর্তা শুভ ও তার স্ত্রী একটি প্রাইভেটকারে মরিয়মের মরদেহ হোসেনপুরে নিয়ে আসে। এ সময় মেয়েটির শরীরে অসংখ্য নির্যাতনের চিহ্ন দেখতে পায় স্বজনরা। মেয়েটির সারা শরীরে আগুনের ছ্যাকাসহ অসংখ্য ক্ষত চিহ্ন রয়েছে।

স্বজনদের অভিযোগ, নাইমা মেয়েটিকে অমানুষিক নির্যাতনে হত্যা করেছে। তার সমস্ত শরীরে পোড়া ও ছ্যাকা দেয়ার অসংখ্য ক্ষত রয়েছে। হাস-পা ও পিঠের কিছু স্থানে মাংস উঠে গেছে। মাথা থেতলানো। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শিশু মরিয়ম ছিল চতুর্থ।

মরিয়মের বাবা সিরাজুল ইসলাম ও মা কুলসুম বেগম জানান, বাড়িতে শিশুদের দেখাশুনা করবে বলে দুই মাস আগে মরিয়মকে কুমিল্লায় নিয়ে যান নায়মা ও তার স্বামী শুভ। মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার পর আর কোনো খবর পাননি তারা। মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে তাদেরকে ফোন করে জানানো হয় মরিয়ম পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছে।

এ খবর শুনে মরিয়মের বাবা কুমিল্লা যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে বুধবার ভোরে একটি প্রাইভেটকারে করে মরিয়মের মরদেহ পাইকশা গ্রামে নিয়ে আসেন শুভ ও তার স্ত্রী। গাড়ি থেকে মরদেহ নামানোর পর তারা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মেয়েটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে গ্রামবাসী তাদের আটক করে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে হোসেনপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূর ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে।

জানা গেছে, অভিযুক্ত নাইমার স্বামী এলাহী শুভর গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ভাদুগড় গ্রামে। তিনি কুমিল্লার গৌরীপুরে একটি বেসরকারি কোম্পানির বিক্রয় বিভাগে চাকরি করেন। স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই থাকেন।

হোসেনপুর থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. নূর ইসলাম জানান, মেয়েটিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার শরীরের অন্তত ৪০টি স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। ঘটনাস্থল যেহেতু কুমিল্লার দাউদকান্দি তাই সেখানে মামলা হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৮ অক্টোবর ২০২০ /জাগো নিউজ /জিএসি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন