আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ঢাকা টেস্ট নিয়ে যত ভাবনা..

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-১০ ২০:২৮:৩০

। বদরুদ্দোজা বদর ।

বাংলাদেশ শ্রীলংকার কাছে ২১৫  রানে হেরে গেছে ঢাকা টেস্টে। আড়াই দিনেই দু'দলের দুই ইনিংসের খেলা শেষ মিরপুরের হোম অফ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে । ফলাফল এরকম হতেই পারে কিন্তু ম্যাচের প্রথম দিনেই যদি সেটা অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায় তাহলে ম্যাচটি ঘিরে আমাদের অনেক কিছুই  ভাবতে হবে।

ঢাকা টেস্টে টস ছিল খুবই ভাইটাল। মিরপুরের ক্রিকেট গ্রাউন্ডের উইকেটটি যে স্পিন সহায়ক হবে সেটা আগেই জানা হয়ে গিয়েছিল। শ্রীলংকা সেখানে এগিয়ে যায় ব্যাটিংয়ের ডিসিশন নিয়ে। কিন্তু তাদের জন্য বিস্ময় হয়ে আবির্ভূত হন একজন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। দীর্ঘ চার বছর যাকে শুধু অবহেলাই করা হয়েছে। এমনকি রিকল পেয়েও চিটাগাং টেস্টে তার জায়গা হয়নি বেস্ট ইলেভেনে। ঢাকা টেস্টে সুযোগ পেয়েই নিজের প্রতিভার উজ্জ্বলতা দেখিয়ে দিলেন রাজ্জাক। শ্রীলংকান ইনিংসের ১৪ রানেই ওপেনার কারুনারাত্নেকে স্টাম্পিং এর ফাঁদে ফেলে উইকেটটি তুলে নেন তিনি।৯৬ রানে গুনাতিলেকা ও চান্দিমালের উইকেট দু'টি নিয়ে হ্যাট্রিকের আশা জাগিয়ে তুলেন রাজ্জাক। ফার্স্ট সেশনে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলংকা যেখানে ৩টিই রাজ্জাকের। লাঞ্চ ব্রেকের পরপরই বিপজ্জনক হয়ে উঠা কুশাল মেন্ডিসকে ৬৮ রানে বোল্ড করে দিয়ে খেলায় বাংলাদেশের একচেটিয়া রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন টাইগার স্পিনার। তাইজুল এবং মুস্তাফিজ নিজেদের সেরাটা উপহার দেন। বোলারদের দাপটে শেষ পর্যন্ত শ্রীলংকা ২২২ রানে অল আউট হয়ে যায়।

বড় একটি লিড নেয়ার লক্ষ্য নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ওপেন করেন তামিম ও ইমরুল। স্পিন উইকেট  কিন্তু পেসার লাকমালের কাছে বোকার মত কট এন্ড বোল্ড হয়ে যান তামিম। মমিনুল যেভাবে রান আউট হন সেটাকে আনাড়িপনাই শুধু বলা যায়। মুশফিক লাকমালের বল না খেলে বার বার  ছেড়ে দিচ্ছিলেন যার একটি ইনসুইংগারে বোল্ড হয়ে যান তিনি । এটা দায়িত্বশীল ব্যাটিং নয়। ইমরুলও এলবিডব্লিউ হয়ে যান পেরেরার কাছে। দিনশেষে বাংলাদেশ ৪ উইকেট হারিয়ে  ৫৬ রান। ব্যাটসম্যানরা আরও দায়িত্বশীল হলে এরকম ক্রাইসিসে হয়তো পড়তে হতোনা টাইগারদের। বাংলাদেশের ইনিংস যে আর বড় হচ্ছে না সেটা ডে ওয়ানেই বুঝতে অসুবিধা হয় না ক্রিকেট বোদ্ধাদের। মাহমুদউল্লাহ ও লিটন পরদিন ডিফেন্ড করবেন এই আশা যারা করেছিলেন সেটা আর হয়ে উঠে না যখন লাকমালের কাছে বোল্ড হয়ে যান লিটন ।

ডেব্যুটেন্ট অফ স্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়ার ঘূর্ণিতে প্রথমে  বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ । পরে সাব্বির ক্যাচ দেন । ১০৭ থেকে ১১০ রানে যেতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ১১২ রানের লিড নিয়ে নেয় শ্রীলংকা।

সেকেন্ড ইনিংসে আবারো খুব ভালো বোলিং করেন টাইগার বোলাররা । বিশেষ করে মুস্তাফিজ ছিলেন অসাধারণ। স্পিন উইকেটে তার কাটার দিয়ে লংকানদের বেঁধে রাখেন কম রানে। মিরাজ, তাইজুল আর রাজ্জাক মিলে ২২৬ রানে শেষ করে দেন শ্রীলংকার ইনিংস। আজকের ফার্স্ট সেশন সহ প্রায় তিন দিন খেলার বাকী।

জিততে হলে ৩৩৯ রান করতে হবে। দেখেশুনে খেলতে পারলে সেটা সম্ভব আবার না পারলেও সম্মানজনক একটা হার কাম্য ছিল। কিন্ত আবারো ব্যাটসম্যানরা চরমভাবে ব্যর্থতার প্রমাণ রাখেন উইকেটে। ফার্স্ট ইনিংসের মত আবারো আনাড়িপনার উদাহরণ হিসেবে আউট হন তামিম। ইমরুল, মমিনুল ও মুশফিক কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু ফার্স্ট ইনিংসে যার ঝুলিতে কোন উইকেটই ছিল না সেই রংগানা হেরাথের শিকার হয়ে যান তিনজনই। লিটন ও মাহমুদউল্লাহ যাওয়া আসা করেন আর ১২৩ রানেই অল আউট বাংলাদেশ। লো স্কোরিং ম্যাচে বিশাল এক জয় শ্রীলংকার।

ঢাকা টেস্ট নিয়ে আমাদের ভাবতেই হচ্ছে। উইকেট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। বিশেষ করে লংকান স্পিনার পেরেরার মন্তব্য উল্লেখ করার মত। তিনি বলেছেন 'আমাদের ব্যাটসম্যানরা স্পিনে ভালো খেলে আবার আমাদের রয়েছে অভিজ্ঞ কয়েকজন স্পিনার, সেখানে আমাদেরকে এ রকম উইকেটে খেলতে দিচ্ছেন আপনারা'।

আমরা বরাবরই বলে আসছি স্পোর্টিং উইকেটের কথা। চিটাগাং টেস্টে ব্যাটিং উইকেট বানিয়ে লাভটা  কি  হয়েছিল? হারতে হারতে ড্র করতে পেরেছিল টাইগাররা। মিরপুরের ফলাফল তো আমরা দেখলাম।

দল গঠন নিয়েও নানা কথাবার্তা। মোসাদ্দেককে বাদ দিয়ে কেন সাব্বির? আবার টেস্ট স্কোয়াডে থাকা সত্ত্বেও কেন মোসাদ্দেক ও তাইজুল প্রিমিয়ার লীগ খেলতে গেলেন?

এসব ভাবনাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ঘিরে। এই টেস্টে আমরা হারলেও আব্দুর রাজ্জাককে ফিরে পেয়েছি। মুস্তাফিজ তার ছন্দে ফিরতে পেরেছে। আমাদের তো এগিয়ে যেতে হবেই।

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন