আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

বড়লেখায় মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৭-১১-১৪ ০০:০০:৩৩

বড়লেখা প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজরের বড়লেখায় একটি মসজিদে তালা লাগিয়ে দেয়াকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। রবিবার (১২ নভেম্বর) ভোররাতের যেকোনো এক সময় উপজেলার সুজানগর ইউনিয়নের বড়থল জামে মসজিদের তিনটি প্রবেশ গেটে তালা লাগিয়ে দেয়ার এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তালা ভেঙে দেয়। এ ঘটনায় এলাকায় দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। এক পক্ষ অন্য পক্ষকের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে। থানায় পাল্টা-পাল্টি অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার (১২ নভেম্বর) ভোররাতে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মুসল্লিরা মসজিদের গেটে তালা দেখেন। এতে মুসল্লিদের মধ্যে চরম উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে ভোররাত সাড়ে ৬টায় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে গেটের তালা ভেঙ্গে মসজিদ খুলে দেয়। এর আগে মুসল্লিরা মসজিদের বাইরে ফজরের নামাজ আদায় করেন। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী ঘটনাস্থলে যান। এদিকে এ ঘটনায় মসজিদের মোতায়াল্লি কাজী ফয়েজ উদ্দিন দায়ী করছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদ আহমদকে। অন্যদিকে ইউপি সদস্য শহিদ আহমদ দায়ী করছেন মসজিদের মোতায়াল্লি মাওলানা কাজী ফয়েজ উদ্দিনকে। একে অপরকে পাল্টা-পাল্টি দোষারোপ আর মসজিদে তালা দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জলমহালের ইজারাদারের সাথে মৌখিক অংশীদার নিয়ে কাজী ফয়েজ উদ্দিন ও শহিদ আহমদের মধ্যে বিরোধ চলছিলো। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য শহিদ আহমদ গংদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করা হয়। এ অভিযোগে মসজিদের মোতায়াল্লিসহ কমিটির নেতৃবৃন্দ ও গ্রামবাসীর অনেকেই স্বাক্ষর করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিপক্ষের ইউপি সদস্য শহিদ আহমদ শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদের মাইক কেড়ে নিয়ে নিয়ে তার বিরুদ্ধের লিখিত অভিযোগে মসজিদের মোতায়াল্লি কেন স্বাক্ষর করলেন তা জানতে চান। তার স্বাক্ষরের কারণেই অন্যরা স্বাক্ষর করেছে দাবী করে ইউপি সদস্য শহিদ আহমদ দুইদিনের মধ্যে এর সুষ্ঠু বিচার নাকরলে মসজিদে তালা ঝুলিয়ে দেবেন বলে হুমকি প্রদান করেন। এরপর রবিবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে মুসল্লিরা মসজিদের প্রবেশের তিনটি গেটে তালা ঝুলতে দেখেন।

এ ব্যাপারে বড়থল জামে মসজিদের মোতায়াল্লি কাজী ফয়েজ উদ্দিন সোমবার রাতে বলেন, ‘শহিদ মেম্বারসহ আমাদের গ্রামের চারজন লোক মৎস্যজীবী নন। তাঁরা গ্রামের সরকারি বিলে মাছ ধরতে বাধা ও স্থানীয়দের হুমকি দেন। তারা নাকি এখানে ফিসারি করবেন। এ ঘটনায় গণস্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। এতে শুক্রবার সকালে শহিদ মেম্বার স্থানীয় একজনকে স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়ে গালাগালি করেন। আমাকেও খারাপ ভাষায় গালাগালি করেন। পরে মসজিদের মাইক নিয়ে শহিদ মেম্বার গণস্বাক্ষরের বিষয়ে সমাধান না হলে মসজিদে তালা দেওয়া ও মসজিদ ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে রবিবার ভোররাতে মসজিদে তালা দেওয়া পাই। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তালা ভেঙে দেয়। থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। মুসল্লিদের মাঝে এ ঘটনায় ক্ষোভ বিরাজ করছে।’

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. শহিদ আহমদ সোমবার রাতে বলেন, ‘নিজ দক্ষিণভাগের রেনু মিয়া বিলের ইজারাদার। এর আগে প্রতিবছর কাজী ফয়েজসহ কয়েকজন বিলের অন্যান্য ইজারাদারের সাথে শরিক হয়ে বিলের মাছ ধরেন। এ বছর নতুন ইজারাদার সহযোগিতা চান। মৌখিকভাবে আমাদের গ্রামের ১৮জনকে শরিক রাখা হয়। এছাড়া চারজন কেয়ারটেকার রাখা হয়। এ ঘটনার খবর পেয়ে কাজী ফয়েজ রেনু মিয়ার কাছে যান। রেনু মিয়া আমাদের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন। এতে তিনি (কাজী ফয়েজ) ক্ষিপ্ত হন। পরে তিনি পঞ্চায়েতের মিটিং বলে এলাকার লোকজনের নিকট হতে স্বাক্ষর নেন। এতে অনেক প্রবাসীর স্বাক্ষর আছে। যারা জানেন না। দেশেও নেই। এটা নিয়ে আমাদের উপর চাঁদাবাজি মামলা করা হয়। কাজী ফয়েজ জামায়াতের নেতা। শুক্রবার সকালে প্রতিবাদ করায় তিনি জামাতের লোকজন (আকই মিয়া, তাজ উদ্দিন শেখকে) গংদের নিয়ে আমার উপর হামলার চেষ্টা করেন। যার বিচার চেয়ে জুম্মার নামাজ পরে এলাকাবাসীকে জানাই। এছাড়া শুক্রবার রাতে থানায় জিডি করি। পরে আমাকে ফাঁসানোর জন্য তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য রবিবার বিকেলে থানায় আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

সুজানগর ইউপি চেয়ারম্যান নছিব আলী সোমবার রাতে বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। রবিবার ভোররাতে মুয়াজ্জিনের ফোন পেয়ে মসজিদে যাই। মসজিদের প্রবেশের তিনটি গেটে তালা দেওয়া হয়। তখন বিষয়টি ওসি সাহেবকে জানাই। পুলিশ ভোর সাড়ে ছয়টায় এসে স্থানীয়দের নিয়ে তালা ভেঙে দেয়। এর আগে মসজিদের আশপাশে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। উত্তেজিত জনতা থানায় ওসি সাহেবের কাছে গিয়ে নালিশ করেন।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন সোমবার রাতে বলেন, ‘মসজিদে তালা দেওয়ার ঘটনায় এখানে দুইটি পক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। তালা কারা দিয়েছে কেউ দেখেনি। চোখে দেখা কোনও সাক্ষীও নাই। শুধু পূর্বের হুমকি ধামকি নিয়ে একপক্ষ আরেক পক্ষকে ধারণা থেকে দোষ দিচ্ছে। থানায় একটি কাজে গিয়ে ঘটনাটি জানতে পারি। এখন আমরা সবাইকে নিয়ে বসে সম্মানজনক সমাধানের উদ্যোগ নেব।’

বড়লেখা থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সহিদুর রহমান সোমবার রাতে বলেন, মসজিদে তালা দেয়া জঘন্য অপরাধ। খবর পেয়েই পুলিশ তালা ভেঙ্গে দিয়েছে। মসজিদের মোতায়াল্লি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ নভেম্বর ২০১৭/এজেএল/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন