আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শখের বসে শুরু, সিলেটের সালমান আজ ব্যাডমিন্টনে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-১২ ০০:২৭:৩৩

দিব্য জ্যোতি সী :: মো. সালমান খান। সিলেট নগরীর রায়নগর আলমটুলা এলাকার মো. ফরহাদ খান এবং রহিমা বেগমের কনিষ্ঠপুত্র। অনেকটা শখের বসেই ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু করে আজ তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। সিলেট জেলা দলের খেলোয়াড় সালমান গত বুধবার পাবনায় অনুষ্ঠিত রুচি ফি ম শামসুল আরেফিন স্মৃতি ৩৫তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপের এককে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এরআগে গত শনিবার পাবনার শহীদ অ্যাডভোকেট আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে শুরু হয় ৩৫তম জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপ। এই টুর্ণামেন্টে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা তুখোড় খোলয়ারদের হারিয়ে সিলেটের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন সালমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেটে ফিরেই এই প্রতিবেদককে সাক্ষাৎকার দেন কৃতি শাটলার সালমান খান। বলেন কিভাবে ব্যাডমিন্টনে এই অবস্থানে আসা এবং বিভিন্ন স্বপ্ন ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা।

৬ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সালমান। ছোট বেলা থেকেই শখ ছিল ব্যাডমিন্টন খেলার। এলাকায় খেলতেন বন্ধুবান্ধবদের সাথে। ২০১৩ সালে সিলেট দি এইডেড হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণের ভর্তি হন সিলেট ব্যাডমিন্টন একাডেমিতে। সেখান থেকেই ব্যাডমিন্টনে দিনে দিনে এগিয়ে চলা সালমানের। পেশাদারভাবে ব্যাডমিন্টন শুরুর পর থেকেই সালমানের স্বপ্ন ছিল জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।

২০১৪ সালে সিলেটে অনুষ্ঠিত জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম অংশ নেন তিনি। এ আসরে তৃতীয় রাউন্ডেই বিদায় নিতে হয় তাকে। এরপর ২০১৬ সালে ঢাকায় জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে অংশ নেন সালমান। এই আসরে তিনি জাতীয় চ্যাম্পিয়ন এনায়েত উল্লাহ খানকে হারালেও বিদায় নিতে হয় ফের তৃতীয় রাউন্ড থেকে। তবে এতেই হাল ছাড়েননি সালমান। ২০১৬ সালেই বাংলাদেশ সামার ওপেনে অংশ নেন। এই টুর্ণামেন্টে তিনি ৩য় স্থান অর্জন করেন। পরের বার ২০১৭ সালে ইনডেক্স সামার কাপে অংশ নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হন সালমান। আর এবছরের শুরুতেই জাতীয় র‌্যাঙ্কিং এ শীর্ষে থাকা মিনহাজকে হারিয়ে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজের স্বপ্নপুরণের পাশাপাশি সিলেটবাসীকে এনে দিয়েছেন গৌরব।

আলাপকালে সালমান বলেন- অনেকদিনের স্বপ্ন ছিল জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার। সকলের দোয়ায় আর সিলেট ব্যাডমিন্টন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা শিব্বির আহমদের সার্বিক সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনায় আজ আমি এখানে। ব্যাডমিন্টনের বাইওে আমার আর কোন চিন্তা নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই যাই প্র্যাকটিসে। বাসায় ফিরে খাওয়া দাওয়া, বিশ্রাম, পড়ালেখা সেরে আবারো প্র্যাকটিসে।

ভবিষ্যতের স্বপ্ন সম্পর্কে তিনি বলেন- জীবনের বড় একটি ইচ্ছা পুরণ হয়েছে। এখন স্বপ্ন কৃতি শাটলার এবং টানা ৫ বারের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন পরশের রেকর্ড ভাঙা। আর, অল ইংল্যান্ড ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশীপে খেলা।

দেশের বিভিন্ন বড় বড় টুর্ণামেন্ট ছাড়াও সালমান খেলেছেন মালয়েশিয়া, ভারত, নেপালে অনুষ্ঠিত বহু আন্তর্জাতিক টুর্ণামেন্টে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে নেপাল আন্তর্জাতিক ওপেনে তিনি হারিয়েছেন ওয়ার্ল্ড র‌্যাঙ্কিংয়ে ১৯৮ এ থাকা ভারতীয় শাটলার অরুণ কুমারকে হারান।

ব্যাডমিন্টনে সালমানের এগিয়ে যাওয়ার পথে তিনি বাবা-মায়ের পাশাপাশি সবসময় সহযোগীতা পেয়ে যাচ্ছেন বড় ভাই ব্যবসায়ী মো. তালহা খানের। পরিবার ও তার কোচ শিব্বির আহমদ ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি সহযোগিতা ও দিকনির্দেশনা পেয়েছেন সিলেটের প্রবীন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় আহমদ জুলকার নাইনের কাছ থেকে।

একজন জাতীয় তারকা হিসেবে তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন- ব্যাডমিন্টন ফেডারেশন থেকে যেসব সুবিধা তারা পান তা মোটেই পর্যাপ্ত নয়। জাতীয় দলের হয়ে খেললেও নেই নির্ধারিত কোন বেতন-ভাতা। কিন্তু, যারা জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলে তাদের বেতন-বাতা অনেক বেশী। এছাড়া, সবচেয়ে বেশী সমস্যা স্পন্সরের। পরিবারের টাকা আর আউটডোরে খেলে যা উপার্জন করি সেগুলো দিয়েই আমরা প্র্যাকটিস চালিয়ে যাই।

ভবিষ্যতে প্রয়োজিনয়তার কথা জানিয়ে তিনি বলেন- দেশের বাইরে গিয়ে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে হলে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক মানের কোচিং। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাডমিন্টন কোচদের দিয়ে আমাদের প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করলে এবং বিভিন্ন দেশে ট্যুরের ব্যবস্থা করলে আমরাও দেশকে ভালো কিছু দিতে পারব।

খেলাধুলার সাথে পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছেন সালমান। ২০১৫ সালে সিলেটের একটি বেসরকারী কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এখন সিলেট সরকারী কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ডিগ্রী ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত আছেন।

সালমানের এই সাফল্যের ব্যাপাওে তার কোচ এবং সিলেট ব্যাডমিন্টন একাডেমীর প্রতিষ্ঠাতা শিব্বির আহমদ বলেন- সালমানের এই অর্জন আপনাআপনি হয়নি। এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের পরিশ্রম এবং প্র্যাকটিস। আমার দেখা অত্যন্ত ন¤্র ও ভদ্র খেলোয়াড় সালমান বন্ধুবান্ধবের সাথে আড্ডা- সামাজিকতা বাদ দিয়ে প্রতিদিনই প্র্যাকটিসে এসেছে। যার ফলেই আজ তার এই সাফল্য অর্জন। সালমানের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে সিলেট জেলা ক্রিড়া সংস্থা সবসময় পাশে ছিল বলেও জানান তিনি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন