আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে রাজনীতির ময়দানে বাড়ছে উত্তাপ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০২-১৪ ০০:১১:৩৬

রফিকুল ইসলাম কামাল :: দুটি বড় নির্বাচনের বছর, তারওপর জাতীয় নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচারণা সিলেট থেকেই শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন আর প্রচারণা-এ দুইয়ে মিলে ক্রমেই উত্তাপ বাড়ছে সিলেটের রাজনীতির ময়দানে। রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সিলেট সফর, খালেদা জিয়ার সাজা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টায় কথার বাণ-এসব রাজনীতির উত্তাপকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আগামী তিন-চার মাসের মধ্যে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার কথা। অন্যদিকে বছরের শেষদিকে আছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ দুই নির্বাচনের জন্য মাঠ দখল নিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে তৎপর রাজনৈতিক দলগুলো। বিশেষ করে সিলেট থেকে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে জাতীয় নির্বাচনের ডামাডোল।

গেল ৩০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফর করেন। তিনি আলিয়া মাদরাসা মাঠে জনসভায় সিলেট থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলো বলে স্পষ্ট ঘোষণা দেন। তাঁর সফরের একদিন পরেই সিলেটে আসেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইম মুহম্মদ এরশাদ। হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার জিয়ারত শেষে তিনিও সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দেন।

এ দুই শীর্ষ নেতার সিলেট সফরের রেশ কাটতে না কাটতেই আসেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। অবশ্য তাঁর সিলেট সফরের প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন। ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণার আগে ৫ ফেব্রুয়ারি সড়কপথে সিলেটে এসে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন।

এদিকে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট সফর করেন ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম (চরমোনাই পীর)। তিনি সিলেট থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর ঘোষণা দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন।

তীর্থভূমি সিলেটে রাজনৈতিক শীর্ষ নেতাদের আনাগোনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠতে থাকে এখানকার রাজনৈতিক ময়দান। সে উত্তাপের আগুনে যেন ঘি ঢালে বিএনপিপ্রধান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় সাজার বিষয়টি। গেল ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে কারাদ- দেয়ার প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল সিলেট বিএনপি। তাদেরকে ঠেকাতে মাঠে ছিল আওয়ামী লীগও। উভয় দলের যুদ্ধংদেহী মনোভাবে সেদিন রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সিলেটের রাজপথ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ, গোলাগুলি আতঙ্ক ছড়ায় পুরো সিলেটে।

খালেদা জিয়াকে সাজা দেয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করছে সিলেট বিএনপি। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান, অনশন প্রভৃতি নানা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে সক্রিয় দলটি।

সবমিলিয়ে সিলেটের রাজনীতির ময়দানে উত্তাপ সামনের দিনগুলোতে আরো বাড়বে বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের। তবে রাজনীতির উত্তাপে সহনশীলতা যাতে বজায় থাকে এবং শান্তিপূর্ণভাবেই যাতে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের কর্মসূচি পালন করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। একইসাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা প্রদান না করে, সেটি নিশ্চিত করার কথাও বলছেন তাঁরা।

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ে বিএনপি শক্তিশালী ও একত্রিত হয়েছে। তাদের মধ্যে যে বিভাজন ছিল, সেটা মিটে গেছে; একসাথে তারা আন্দোলন করছে। আমরা চাই, যে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন শান্তিপূর্ণভাবে হয়, অহিংস আন্দোলন যেন হয়। বিএনপি এখন পর্যন্ত অহিংস আন্দোলনই করছে, এটা ভালো উদ্যোগ। বিএনপির আন্দোলনে ক্ষমতাসীন দলের মহড়া বা হামলা কাম্য নয়। আন্দোলনে সহিংসতা হলে তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই দেখবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কোনো কর্মসূচিতে পুলিশের বাধা প্রত্যাশিত হতে পারে না। উপর মহলের নির্দেশে পুলিশ বাধা দেয়। তবে এগুলো করা ঠিক হবে না। জনগণ সব দেখছে, হিসাব করছে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন