আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

শাবির সদর-অন্দর-১: হাত বাড়ালেই মিলে মাদক!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৮-০৭-০৭ ০০:০১:৪২

জুবায়ের মাহমুদ, শাবি :: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রথমবারের মত বাবা-মাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরতে এসেছে রুপক (ছদ্মনাম)। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাস দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে টেরই পেলেন না তারা। সন্ধ্যায় ফেরার পথেই ক্যাম্পাসেরই বেশকিছু জায়গা থেকেই পেলেন উৎকট গন্ধ, যেখানে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে আড্ডা দিচ্ছেন। কারোরই বুঝতে বাকি রইলো না এটা কিসের গন্ধ! গাঁজার গন্ধে বাবা-মার মনে যখন ছেলের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা, তখন ছেলের মনে অস্বস্তি। দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য এটি। দেশব্যাপী মাদকের করালগ্রাস স্পর্শ করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকেও।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ায় প্রতিনিয়তই বাড়ছে পুরুষ মাদকসেবীদের সংখ্যা। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নারী মাদকসেবীদের সংখ্যাও। ক্যাম্পাসের ১৩টি পয়েন্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রী হলে শিক্ষার্থীদের নিয়মিত মাদক সেবন এখন স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। মাদকের টাকা যোগাতে এদের দ্বারা আবাসিক হলগুলোতে চুরি ও ছিনতাই বৃদ্ধি পেলেও এ ব্যাপারে কোন ধরনের মনিটরিং নেই।

সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে দুই আবাসিক ছাত্রী হল, ছাত্রীদের আবাসনের জন্য ভাড়া করা আমির ও ফজল কমপ্লেক্স, সামাদ হাউজ, ছাত্রদের তিনটি হলের ছাদ ও চিহ্নিত বেশ কয়েকটি কক্ষে, বঙ্গবন্ধু হল ও মুজতবা আলী হলের মধ্যবর্তী টিলায়, গাজী কালুর মাজার, ছাত্রী হলের পাশ্ববর্তী টিলা, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটরিয়ার ছাদসহ শিক্ষা ভবন ‘ই’ এর পাশে, মেডিক্যাল সেন্টারের পাশে, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের নবনির্মিত গ্যালারি, মুক্তমঞ্চের পিছনে, বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কেন্দ্রীয় মিলনায়তনের পার্শ্ববর্তী জায়গাগুলোতে রাতভর চলে গাঁজাসহ বিভিন্ন মাদকের আসর।

এছাড়াও আবাসিক হলগুলোর ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অধিকাংশ কক্ষেই মাদক সেবনের পাশাপাশি চলে জুয়ার আসর। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে সুরমার আরব আলী মেস, চাচার মেসসহ বিভিন্ন মেসে প্রতিদিনই চলে মাদক ও ইয়াবা সেবন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন করে ক্যাম্পাসে সিগারেট নিষিদ্ধ করলেও টংগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে সিগারেট। শিক্ষার্থীদের সাথে প্রকাশ্যে দেদারসে সিগারেট টানতে দেখা যায় শিক্ষকদেরকেও।

মূলত মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ার পেছনে বহিরাগত মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় শিক্ষার্থী, সহায়ক কর্মচারী ও নিরাপত্তা প্রহরী ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
 
সূত্র জানায়, সিলেটের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত মাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এবং সিলেট নগরীর বিভিন্ন জায়গায় অনেকটা প্রকাশ্যেই বেচাকেনা হচ্ছে। পাঠানটুলার নানীবাড়ি, তারাপুর চা বাগান, বিশ্ববিদ্যালয় গেইট, কদমতলী রেলওয়ে স্টেশন, বাগবাড়ি, আখালিয়া, নয়াবাজার, টুকের বাজারের ধনপুর, দক্ষিণ সুরমা, শিবের বাজার প্রভৃতি এলাকায় মাদকদ্রব্য বেচাকেনা। এছাড়া লাক্কাতুরা, তারাপুর ও কালাগুল চা বাগানের কিছু শ্রমিক নেতারা মাদকদ্রব্য বেচাকেনা করে থাকেন।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের কালো ছায়া ভবিষ্যত প্রজন্মকে নেতৃত্বদানকারী যুব সমাজের ভবিষ্যতকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। মাদকের সহজ্যলভ্যতায় যুব অবক্ষয় বৃদ্ধির সাথে সাথে অনেক শিক্ষার্থীকে পড়াশোনা শেষ না করেই চলে যেতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে আমার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। ক্যাম্পাসের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গাগুলোতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করাসহ হলের বাইরে ও হলগুলোতে যারা মাদক সেবন করে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। মাদকের ব্যাপারে কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবে না।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৭ জুলাই ২০১৮/জুমা/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন