আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে কোর্ট হাজতেই মাদক পাচ্ছে হাজতিরা!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২২ ০০:১৩:০৯

রফিকুল ইসলাম কামাল :: আকবর আলী। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতি নম্বর-১৯৪/১৯। হাজিরা দিতে গেল মঙ্গলবার সিলেটের অতিরিক্ত দায়রা জজ চতুর্থ আদালতে আনা হয় আকবর আলীকে। হাজিরা দিয়ে ফের কারাগারে ফিরিয়ে নেয়ার সময় কারাফটকে তল্লাশিতে তার পকেটে ইয়াবা থাকার বিষয়টি ধরা পড়ে। বাইরে থাকা সহযোগীরা হাজতিদের মাধ্যমে কারা অভ্যন্তরে মাদকের প্রবেশ ঘটানোর চেষ্টা করে। এর ফলে কোর্ট হাজতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে ওঠছে প্রশ্ন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাদক মামলায় গ্রেফতারকৃত হাজতিদের আদালতে হাজিরা দিতে কারাগার থেকে নিয়ে আসে পুলিশ। এরপর কোর্ট হাজতেই এসব হাজতিদের কাছে একটি চক্র ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেয়। হাজতিরা কৌশলে মাদকদ্রব্য নিয়ে ফিরে যায় কারাগারে। এমনকি জুতার সোলের (তলায়) মধ্যে গাঁজা ঢুকিয়ে তা কারাগারের ভেতর পাচারের চেষ্টাও করা হয়েছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে কারা অভ্যন্তরে মাদক নিতে পারলে তা চড়া দামে অন্য হাজতিদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়াও কোর্ট হাজতে আনা হাজতিরা অনেক সময়ই মোবাইল ফোনে কথা বলা এবং বাইরে থেকে আনা খাবার গ্রহণ করে বলেও অভিযোগ আছে। কোর্ট হাজত থেকে হাজতির পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

আদালত চত্বরে সিসি ক্যামেরা থাকা স্বত্ত্বেও হাজতিরা কি করে মাদক হাতে পায়, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। এক্ষেত্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন ওঠছে।

এ প্রসঙ্গে সিলেট জেলা কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মুজিবুর রহমান বলেন, ‘কোর্ট হাজতের সামনে সিসি ক্যামেরা সবসময়ই পর্যবেক্ষণ করা হয়। যদি পুলিশের কোনোও গাফিলতি থাকে, তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

আদালত ও পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি থাকা হাজতি আকবর আলীকে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজিরা দিতে নিয়ে আসা হয়। কোর্ট হাজতে থাকা অবস্থায় তার এক চাচাতো ভাই তাকে ১০০ পিস ইয়াবা পৌঁছে দেয়। সেই ইয়াবা কারা অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়ার সময় কারাফটকে তল্লাশিতে আকবর আলীর কাছ থেকে ইয়াবা বড়িগুলো উদ্ধার করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে আরেকটি মামলা করা হয়।

এ প্রসঙ্গে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার আবু সায়েম বলেন, ‘আদালতে হাজিরা দিয়ে আকবর আলীকে পুনরায় কারাগারে নেয়ার সময় কারাফটকে তল্লাশিতে তার কাছ থেকে ১০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জালালাবাদ থানায় মামলা হয়েছে।’

জানা গেছে, নতুন করে দায়েরকৃত মামলায়ও আকবর আলীকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আকবর আলী আদালতে লিখিত জবানবন্দিও দিয়েছেন। সেখানে তিনি কি করে মাদক হাতে পেলেন, তার বর্ণণা দিয়েছেন।

সিলেট জেলা কোর্ট পুলিশের ইন্সপেক্টর মুজিবুর রহমান বলেন, ‘আকবর আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মঙ্গলবার সে কারাগার থেকে অতিরিক্ত দায়রা জজ চতুর্থ আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিল। কারাগারে ফেরত নেয়ার সময় তার কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। সে কি করে ইয়াবা পেল, তা গুরুত্বের সাথে খতিয়ে দেখছে পুলিশ।’

শুধু এ আকবর আলীতেই সীমাবদ্ধ নয়, এর আগেও একাধিকবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। গেল বছরের ৬ সেপ্টেম্বর জাকির হোসেন নামের এক হাজতির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬০ গ্রাম গাঁজা। একই বছরের মে মাসে নবু মিয়া নামের এক কয়েদির জুতার সোল থেকে গাঁজা উদ্ধার করা হয়। ২০১৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর কোর্ট হাজত থেকে পালিয়ে যান মাদক মামলার আসামি এনাম আহমদ। একই বছরের ২৫ এপ্রিল সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের হাজতি রুবেল আহমদের পেটের ভেতর থেকে ১৫০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আদালতে হাজিরা দিয়ে ফেরার সময় ইয়াবা বড়িগুলো সাথে করে নিয়েছিল সে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোর্ট হাজতে যেসব পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন, তাদের অসতর্কতা ও গাফিলতির কারণেই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেট শাখার সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘এগুলো চরম অনৈতিক ঘটনা। যারা কোর্ট হাজতে দায়িত্ব পালন করেন, তাদের গাফিলতির কারণেই এগুলো ঘটছে। এক্ষেত্রে কোন চক্র জড়িত, তা সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি আমরা।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ মার্চ ২০১৯/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন