আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

কাজিরবাজার ব্রিজ: ইট-পাথরের পার্কে বসন্তের বিকেল

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৩-২৩ ০০:০৫:৩২

এ এস রিয়াদ :: সিলেট নগরবাসীর জন্য ঘোরাঘুরির জায়গা তেমন একটা নেই বললেই চলে। যা আছে তার মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সেলফি ব্রিজ হিসাবে খ্যাত সিলেটের কাজিরবাজার ব্রিজ। শহরের যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ দুর করতে এই ব্রিজটি এখন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

উদ্বোধনের পর থেকেই ব্রিজটি সিলেট নগরবাসীর জন্য আকর্ষনীয় একটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। নানা কারণে ইদানিং লোক-সমাগম কম হলেও এর আকর্ষণ কিন্তু এখনো প্রবল।

প্রায় প্রতিদিনই বিকেলের অবসরে লোকজন কাজিরবাজার ব্রিজে এলেও শুক্রবার ভীড় হয় বেশী।

এই বসন্তে ব্রিজে বসে সুরমার শীতল হাওয়ায় দমবন্ধ অবস্থা কাটাতে যাচ্ছেন অনেকেই। চটপটি ফুচকা আর চা-পান সিগারেট ও শরবৎ ওয়ালাদের উৎপাত এখন নেই বললেই চলে। সপ্তাহ দু'য়েক আগে তাদের উচ্ছেদ করেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। তবে পর্যটকের ভীড় কিন্তু মোটেও কমেনি।

শুক্রবার ( ২২ মার্চ) বিকালে দেখা যায় ব্রিজের এখানে-অখানে অনেক মানুষ। কেউ পরিবার নিয়ে, কেউ বন্ধুদের সাথে। দু'য়েকটা বিশেষ 'জুটি'কেও হাতধরে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়। বিকালটা আনন্দে কাটানোর ইচ্ছা নিয়েই তারা ব্রিজে ভীড় করছেন, মুখ দেখেই তা বুঝা যায়।

এই ব্রিজ-বিলাসীরা আবার সব বয়সী। অফিসের সারাদিনের ক্লান্তি দুর করতে আসেন কোন কর্মকর্তা, বা সাপ্তাহিক ছুটির বিকেলটা উপভোগ করেন মধ্যবয়সী কোন চাকরিজীবী, কর্মক্লান্ত শ্রমজীবী গৃহিনী বা ব্যাবসায়ী।

কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুন-তরুণীরা যেমন আসছেন, তেমনি আসছেন স্কুলের শিক্ষার্থীরাও।

মাঝে মাঝে গিটার হাতে উদাসী নগর বাউলদের দেখাও মিলছে এই ব্রিজে। আসছেন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তারাও।

কয়েকদিন আগে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও বর্তমানে রংপুরের জেলা প্রশাসক এনামুল হাবিবকে সপরিবারে এই ব্রিজে সেলফি তোলে ফেসবুকে পোষ্ট দিতে দেখা গেছে।

এই ব্রিজ অনেকের রুটি রুজির উৎসও। ক'দিন আগেও চটপটি-ফুচকাওয়ালাদের যন্ত্রনায় হাটাচলা দায় অবস্থা থাকলেও এখন তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তা কতদিনের জন্য তা বলা যাচ্ছেনা। কারণ, একটি রাজনৈতিক মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় তারা বারবার ফিরে আসে এখানে।

তবে সাউথ সুরমা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র মো, মাসুদ রানাকে এখানে পান-সিগারেট ফেরি করতে দেখা যায়।

আলাপচারিতার সূত্রে জানা যায়, বাবা মারা যাওয়ার পর মা আর ছোট ভাই বোনের দায়িত্ব বর্তেছে তার ছোট্ট কাধে। ‘মা বাসায় বাসায় কাম করে আর আমি ব্যবসা করে আমার ভাই বোনরে স্কুল করাই।‘ ‘কালকে থাইকা থাকতে পারমু না কারণ আমার পরীক্ষা।'

মাঝে মাঝে আবার দেখা যায় সিলেট সাইক্লিং কমিটির সদস্যদের মাউন্টেন বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়াতে।

কাজিরবাজার ব্রিজ শুধুই সেলফি ব্রিজই নয়, যেন আধ্যাত্মিক নগরীর ইট-পাথরের পার্ক!

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৩ মার্চ ২০১৯/আরএস/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন