আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

উপাধ্যক্ষ শহীদকে হত্যা-ষড়যন্ত্রের চিঠি, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক লুলু

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৬-২০ ০০:২৫:০৩

শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজার-৪ আসনে টানা ছয়বারের এমপি উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদকে হত্যা-ষড়যন্ত্রের চিঠি নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য লুলুকে রাতে আটক করেছে পুলিশ।

কমলগঞ্জ উপজেলার দরগাহ পুর গ্রামের বাসিন্দা তাজুল ইসলাম লুলু আটকের ৮ ঘন্টা আগে সংবাদ সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছিলেন।

বুধবার রাত পৌণে নয়টারদিকে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা পুলিশ  শহর থেকেই তাকে আটক করে বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা।

শ্রীমঙ্গল থানার উপ পরিদর্শক অনিক বড়ুুয়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মৌলভীবাজার থানা থেকে তাকে শ্রীমঙ্গল থানায় নিয়ে আসেন।

শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ মো.আব্দুস ছালেক মুঠো ফোনে বলেন, ‘যেহেতু তাজুল ইসলাম লুলু নিজেকে নির্দোষ দাবী করে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন বক্তব্য তুলে ধরেছেন, তাই তাকে চিঠির বিষয়বস্তু নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। একারণে তাকে থানায় নেয়া হয়েছে।

এদিকে তাজুল ইসলাম লুলু বুধবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘জীবন ও জীবিকার তাগিদে ছোট একটি ব্যবসা পরিচালনা করছেন ও তার সাথে কারো  পূর্ব শত্রুতা বা বিরোধ নেই।

লিখিত বক্তব্যে বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদকে হত্যার চিঠির ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তার নাম ব্যবহার করা ও তাকে আইএসআই\'র সংগঠক বলার প্রতিবাদে তিনি এই সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

ইতিমধ্যে হত্যার হুমকির বিষয়টি কয়েকটি মুদ্রণ,অনলাইনসহ সোস্যাল মিডিয়াতে তাকে ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

তাজুল জানান, ওই উড়োচিঠি তাঁকে ফাঁসানোর জন্য তাঁর শত্রু পক্ষ এই ষড়যন্ত্র করছে। তাজুল উড়োচিঠির বিষয়ে প্রকৃত সত্য ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানান।

তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন,‘ওই সংবাদে আমাকে ও আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার হিজামা এন্ড রুকিয়া সেন্টারকে জড়িয়ে একটি চিঠির বরাত দিয়ে আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা আমার প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন মৌলভীবাজার-৪ (কমলগঞ্জ-শ্রীমঙ্গল) আসনের সংসদ সদস্য ড. উপাধ্যক্ষ মো.আব্দুস শহীদ মহোদয়কে একটি চিঠিতে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে মর্মে জানানো হয়।

সেই চিঠিতে হত্যার ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে আমাকেও হত্যার পরিকল্পনার স্থান হিসেবে আমার প্রতিষ্ঠান মৌলভীবাজার হিজামা এন্ড রুকিয়াহ সেন্টার এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক একটি উড়োচিঠি। তার ধারণা ফাঁসানোর জন্য আমার শত্রু পক্ষ এই ষড়যন্ত্র করছে। তবে তিনি কারো নাম বলেননি। দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য সার্বজনীন ব্যক্তিত্ব আব্দুস শহীদ এমপি আমারও পরম শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি।

তিনি ব্যক্তিতগতভাবে আমার একজন শুভাকাঙ্খি। কিন্তু ওই চিঠিতে তাকে বলা হয়েছে আইএসআই এর সংগঠক। তিনি এর তীব্র নিন্দা ও জোর প্রতিবাদ জানিয়ে এধরনের নিকৃষ্ট কর্মকান্ডের সাথে তিনি বা তার পরিবারের কোন সম্পর্ক কখনও ছিলনা ও বর্তমানেও নেই।

চিঠির ভেতরে তার নাম ব্যবহার করে একজন সংসদ সদস্যকে হত্যার হুমকি প্রদানের পর তিনি সামাজিকভাবে ও আইনগতভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করছে। এতে করে তিনিও তার পরিবার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। তিনি তদন্তের বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থাকে সহযোগিতাও করছেন বলে জানান।

তাজুল সাংবাদিকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ওই চিঠির যিনি প্রেরক খামের উপরে লিখা আছে- ‘সুজন মিয়া, কদমতলী, সিলেট। ওই চিঠিতে হাতে লিখা রয়েছে সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তার প্রশ্ন হচ্ছে সুজন মিয়া নামের জনৈক ব্যক্তি হত্যার ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জেনেছেন, তিনি হাতে লিখে ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি না পাঠিয়ে মুঠোফোনে আথবা সরাসরি মাননীয় সংসদ সদস্যকে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি জানাতে পারতেন’।

তিনি বলেন,‘যারা আমাকে বিশ্বব্যাপী চরম নিন্দিত,ঘৃনিত ও মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর ও বির্তকিত আইএসআই এর সংগঠক বানিয়ে সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করতে চাচ্ছেন তাদের চিহ্নিত করে প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটনের দাবী করেন ও পাশাপাশি তার প্রিয় ব্যক্তি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ ও তাকে নিয়ে এরকম ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ জানান ও সংসদ সদস্যের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন’।

সংবাদ সম্মেলনে তার সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন, তাজুলের নানা খন্দকার সৈয়দ আব্দুস সালাম ও ছোট ভাই লোকমান আহমদ। উপাধ্যক্ষ ড.মো.আব্দুস শহীদকে হত্যার পরিকল্পনার তথ্যসম্বলিত ডাকযোগে আসা হাতের লেখা একটি চিঠি’র বিষয়বস্তু নিয়ে ভবিষতের জন্য শ্রীমঙ্গল থানায় সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ থানায় পৃথক আরও দুটি জিডি করা হয়েছে।

অন্যদিকে চিঠিতে উল্লেখকৃত হত্যার ষড়যন্ত্রের অর্থের যোগান দাতা কমলগঞ্জের বিকাশের এজেন্ট ফজলুর রহমান পুলিশের ভয়ে কমলগঞ্জ এলাকা ছেড়ে  গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে গেছে। পুলিশ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো.আব্দুস ছালেক ও কমলগঞ্জ থানার ওসি মো.আরিফুর রহমান।

এদিকে আব্দুস শহীদের হাতে এ চিঠি আসার পর গত রবিবার রাতে উপাধ্যক্ষ ড.মো.আব্দুস শহীদ এম.পি’র ব্যক্তিগত সহকারী পিএ ইমাম হোসেন এই জিডি লিপিবদ্ধ করেন। শ্রীমঙ্গল থানার সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে (নং ৮৯৯, ১৬/০৫/১৯)। উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি জাতীয় সংসদের অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বর্তমান সভাপতি ও সাবেক চিফ হুইপ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২০ জুন ২০১৯/আইএ/এক

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন