আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে দিশাহীন জাতীয় পার্টিতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

সিলেটে রাজনীতির হালচাল-শেষ পর্ব

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২২ ০০:১১:৫৬

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক :: সিলেটকে একসময় নিজেদের দুর্গ মনে করতো জাতীয় পার্টি। কিন্তু দলটির সেই সোনালী দিন আর নেই। বর্তমানে সিলেটে জাতীয় পার্টির রাজনীতি অনেকটাই দিশাহীন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। সিলেটে দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রম ক্রমেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে বলেও অভিমত তাদের। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে যেখানে দুটিতেই জাতীয় পার্টির সাংসদ ছিল, সেখানে সর্বশেষ একাদশ জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনও পায়নি দলটি। সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্বে যারা ছিলেন, তারাও এখন রাজনৈতিক কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয়। এরকম অবস্থায় নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর আশায় সিলেট জাতীয় পার্টি।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে সিলেট জেলা ও মহানগর জাতীয় পার্টিতে আহবায়ক কমিটি গঠিত হয়। জেলা শাখায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী এটিইউ তাজ রহমানকে আহবায়ক ও ওসমান আলীকে সদস্যসচিব করে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। মহানগরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়াকে আহবায়ক ও এডভোকেট আব্দুল হাই কাইয়ুমকে সদস্যসচিক করা হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত নতুন কমিটি দূরে থাক, সম্মেলনই করতে পারেনি উভয় শাখার আহবায়ক কমিটি। এমনকি জেলা ও মহানগর শাখার অধীনস্থ সকল ইউনিটেও সম্মেলন হয়নি এখনও পর্যন্ত।

জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনের মধ্যে সিলেট-২ ও সিলেট-৫ আসনে জাতীয় পার্টির দুই নেতা যথাক্রমে ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া ও সেলিম উদ্দিন এমপি নির্বাচিত হন। সেলিম জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ছিলেন। এ দুই এমপি নিজ নিজ এলাকায় কিছুটা তৎপর ছিলেন। অন্যদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যাশায় থাকা কয়েকজন নেতাও তৎপর ছিলেন দলীয় রাজনীতিতে। এর ফলে ওই সময়ে সিলেটে কিছুটা গতি ছিল জাতীয় পার্টিতে। কিন্তু সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে মহাজোটসঙ্গী জাতীয় পার্টিকে সিলেটে একটি আসনেও ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। তবে সেলিম-ইয়াহইয়াসহ ছয় নেতা ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জামানত হারান।

এ নির্বাচনের পর থেকে সিলেটে একেবারেই ঝিমিয়ে পড়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম। গেল কয়েক মাসে সিলেটে দলটির কোনো কর্মসূচি প্রত্যক্ষ করা যায়নি। এমনকি জেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক তাজ রহমান ও মহানগর শাখার আহবায়ক ইয়াহইয়া চৌধুরী, সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন কাউকেই রাজনীতির মাঠে দেখা যাচ্ছে না। এ তিন নেতাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী হওয়ায় সেখানেই বেশি সময় থাকছেন তারা। দেশে এলেও ঢাকা ঘুরে ফিরে যান তারা।

জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সিলেটে জাপার রাজনীতি প্রবাসীদের দখলে। কেন্দ্র থেকে অনেক সময় কেন্দ্রীয় পদবিসহ জেলা-মহানগর কমিটি আনেন প্রবাসীরা। এক্ষেত্রে চলে টাকার খেলা। এর ফলে দলের দুঃসময়ের ত্যাগীরা কোণঠাসা হয়ে দূরে সরে যান রাজনীতি থেকে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ, প্রবাসীরা নেতৃত্বে আসার কারণেই একসময়কার দুর্গ সিলেটে জাপার রাজনীতি এখন নিঃশেষ হওয়ার পথে।

দলীয় সূত্র জানিয়েছে, কয়েকদিন আগে জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব ওসমান আলীর নেতৃত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে জেলা জাপার শীর্ষ কোনো পদে কোনো প্রবাসীকে জায়গা দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে চাপিয়ে দিলেও প্রবাসী নেতৃত্ব মানা হবে না বলেও সিদ্ধান্ত নেন নেতারা।

এদিকে, সিলেট বিভাগে জাতীয় পার্টিকে সংগঠিত করতে একটি আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটিতে আহবায়কে করা হয়েছে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজর জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে, সদস্য সচিব হয়েছেন কাজী মামুনুর রশীদ। এছাড়া সদস্যরা হলেন- এ টি ইউ তাজ রহমান, যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয় ও পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির সদস্যসচিব ওসমান আলী সিলেটভিউকে বলেন, ‘সিলেটে এখনও ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলে মনে করছি আমরা। প্রবাসী নেতারা হাওয়া হয়ে যাওয়ায় জাপার প্রবীণ, ত্যাগীরা এখন রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চিন্তা করছেন। তারা এলে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে, দল আরো শক্তিশালী হবে। আমরা সাংগঠনিকভাবে এগিয়ে যেতে কর্মসূচি ঠিক করছি।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২২ আগস্ট ২০১৯/শাদিআচৌ/আরআই-কে

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন