আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

লন্ডন প্রবাসীর দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ, জায়গা দখল ও হত্যার হুমকী

সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-২৫ ১৮:২১:৫৬

সিলেট :: সিলেটে এক লন্ডন প্রবাসীর দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তার ভায়রা ভাই লেইছ ও তার বাহিনী। শুধু টাকা আত্মসাৎ করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, বর্তমানে ঐ প্রবাসী ও তার পরিবারের লোকদের কাছে চাঁদা দাবি করে, প্রাণে হত্যার হুমকী ও গোয়াইনঘাটে ৬০ একর ভূমি, মৎস্য খামার দখল করার জন্য গুন্ডা বাহিনী নিয়ে করছেন নানা ফন্দি ফিকির।

রবিবার সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সিলেট নগরীর জালালাবাদ এলাকার বাসিন্দা মরহুম মখদ্দছ আলীর ছেলে লন্ডন প্রবাসী ও ব্রিটিশ নাগরিক দবির আহমদ লিখিত এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ইতিপূর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়, সিলেটের ডিআইজি, সিলেটের পুলিশ সুপার, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, গোয়াইনঘাট থানা, গোয়াইনঘাট ফতেহপুর ইউপি চেয়ারম্যান বরাবরেও দরখাস্ত দাখিল দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও ধমছে না লেইছ ও তার বাহিনী। প্রবাসে থেকে অনেক দুখে কষ্টে আমার রোজঘারকৃত টাকা দিয়ে দেশে বিনিয়োগ করেন। দেশ ও মাতৃভূমির ভালবাসায়, আর দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে গোয়ানঘাট থানার ফতেহপুরে ১৯৯৫-২০০২ ইং পর্যন্ত প্রায় প্রায় ৬৫ একর ভূমি খরিদ করে তম্মধ্যে ৩৫ একর ভূমিতে ৩০টি পুকুর খনন করে “শাহজালাল মৎস্য খামার” নামে প্রকল্প করেন। আর অবশিষ্ট ভূমিতে সেগুন, বেলজিয়াম, আকাশী, মেহগুণি, রেনডি, চাম সহ প্রায় ২০ প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়। ভাই ফয়েজ আহমদ তা রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। যার ফলে ফয়েজ আহমদ মৎস্য উৎপাদনের জন্য ২০০২ সালে জাতিয় পুরস্কার অর্জন করেন। দীর্ঘ দিন মৎস চাষ করে তার ভাই অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাস্ত হয়ে যান। ফলে ২০১০ সালে তাদের ঘনিষ্ট আত্মীয় ও আমার ভায়রা ভাই এসএমপি’র শাহপরাণ (রহ.) থানার শাহজালাল উপশহর বি-ব্লকের, ২০ নম্বর রোডের, ২২ নং বাসার বাসিন্দা মৃত এম এ খালিকের ছেলে ফয়জুল ইসলাম লেইছকে প্রতি বৎসরে ৫ লক্ষ টাকা ভাড়া সাব্যস্থক্রমে ৫ বছরের জন্য কোন চুক্তিনামা না করে, মৌখিকভাবে সরল বিশ্বাসে ৫ বৎসরের জন্য ভাড়া দেন। একবছরের মধ্যে ভাড়ার টাকা পরিশোধ করার শর্ত থাকলেও দিচ্ছি- দিমু বলে অদ্যাবদি তা পরিশোধ করেননি। লেইছ তাকে না জানিয়ে গোপনে গাছপালা কেটে বিক্রি, পুকুরের মাছ বিক্রি ও বিভিন্ন লোকের কাছে জায়গা বন্দক ও ভাড়া দিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। এসকল কিছুরও কোন হদিস এখনও পর্যন্ত তিনি পাননি। চলতি বছর ১০ জুলাই প্রবাস থেকে নিজ মাতৃভ’মিতে আসার পর ভায়রা ভাই ফয়জুল ইসলাম লেইছের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে টাকা ও জায়গার বিষয়ে আলাপ করতে চান। তখন লেইছ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। এ সময় সে তার জায়গা গন্ডা বাহিনী নিয়ে জবর দখল করে রাখবে বলে। যদি জায়গা পেতে হয় তাহলে তাকে এক কোটি টাকা চাঁদা দিতে হবে। তা না হলে জায়গাও দখল করবেন, আর তাকে ও তার পরিবারের লোকদেরকে প্রাণে হত্যা করবে। তার সাথে বর্তমান সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতাদের গভীর সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই এই সকল নেতাদের সাথে নিয়ে জায়গা দখল করবে সে। এরপর থেকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ঐ প্রবাসীর ব্যাবহৃত ফোনে অনেকেই সরকারদলীয় নেতা বা সন্ত্রাসী পরিচয়ে ফোন দিয়ে নিয়মিত হুমকী প্রদান করছে। 

দবির আহমদ তার বক্তব্যে আরও জানান, ফয়জুল ইসলাম লেইছ তার গন্ডা বাহিনী নিয়ে গত ১৫ জুলাই ও ১৬ জুলাই তার মালিকানাধীন মৎস্য খামার দখলের চেষ্টা করেন। এসময় তিনি ও তার ভাইদের নাম ধরে ধরে প্রাকাশ্য দিবালোকে জনসম্মুখে আমাদেরকে প্রাণে হত্যা করার হুমকী প্রদান করেন। আর বলেন যে “বাংলাদেশে জীবত এসেছিস, কিন্তু লন্ডনে আর জীবত ফিরতে দিবো না”। লেইছ আরো বলেন যে, তোমরা হলে বাংলাদেশের জন্য আবাদী, আর ব্রিটিশের গোলাম। এদেশে তোদের কোন অস্তিত্ত রাখতে দিব না বলেও হুমকী প্রদান করেন।

তিনি জানান, ফয়জুল ইসলাম লেইছ ও তার বাহিনীর সদস্য এসএমপি’র কোতয়ালি থানার সুবিদবাজার আ/এ বাসা নং ২৫ সাগরদিঘিরপাড় এর মৃত আব্দুল মছব্বিরের ছেলে কামরুজ্জামান শিপন (৪০), গোয়াইনঘাট ফতেহপুর ইউনিয়নের রামনগর গ্রামের মৃত শামসুল হকের ছেলে বাববুল মিয়া (৪১), দক্ষিণ রামনগরের ছমির মিয়া (৩৫), গোয়াইনঘাট ছলিতাবাড়ির জাকির (৫০) ও হোসেন আলী (৪৫) সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১৫ জনের অব্যাহত হুমকী ও জায়গা দখলের চেষ্টা সহ দাঙ্গা হাঙ্গামা হওয়ার আশঙ্কা দেখে ফয়েজ আহমদ গত ১৬ জুলাই অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত গোয়াইনঘাট বিবিধ মোকদ্দমা নম্বর ৫১/২০১৯ দায়ের করা হয়। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে ফৌজধারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারার বিধান মতে ঐ জায়গার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আর জায়গা যে অস্থায় আছে, সেভাবে থাকার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের আদেশ দেয়ার পর লেইছ বাহিনী আরো হিংস্র হয়ে উঠে। লেইছ বাহিনী নানা ধরণের ভয়ভীতি প্রর্দশন ও হুমকী প্রদান করে। এ ব্যাপারে এসএমপি’র বিমান বন্দর থানায় ২৬ জুলই সাধারণ ডায়রি নম্বর ১১০৯/১৯ করা হয়। ২৫ জুলাই জায়গা দখল চেষ্টা ও প্রাণে হত্যার হুমকীর দেয়ায় গোয়াইনঘাট থানায় সাধরণ ডায়রি নম্বর ৯৮০ করা হয়। লেইছ বাহিনীর অব্যাহত হুমকীর কারণে প্রবাসী দবির বর্তমানে বাসা থেকে বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। ঐ প্রবাসীকে কোথাও পেলে খুন সহ যে কোন ধরণের বড় ক্ষতি করতে পারে লেইছ বাহিনী।

সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী তাকে ও তার পরিবারের লোকদেরকে রক্ষা এবং আমার সহায় সম্পত্তি দখল হতে না দেয়া ও পাওনা টাকা উদ্ধারের জন্য প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। আর লেইছ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্ব মহলের কাছে জোর দাবি জানান।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ আগস্ট ২০১৯/এসজেডপিসি/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন