আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সেলিনা মোমেনের ডাকে হাজারো নারীর জমায়েত

জাতির জনকের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে সভা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-০৮-৩০ ২২:২৮:৪৯

নিজস্ব প্রতিবেদক :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল চারদিকে। হাতে নৌকা প্রতীকের লিফলেট নিয়ে তিনি ছুটছেন শহর থেকে গ্রামে। সাথে গুটি কয়েক নারী। বাড়ি বাড়ি গিয়ে নারীদের কাছে ভোট চাইছেন সিলেট-১ আসনের মহাজোট প্রার্থী ড. এ কে আবদুল মোমেনর পক্ষে, নৌকা প্রতীকের পক্ষে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়, কমে আসে সূর্যের তাপ। চারদিক আবছা করে আঁধার নামে, তবুও ফুরায় না তার প্রচারণা।

পাঠক বলছিলাম, সেলিনা মোমেনের কথা। বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের স্ত্রীর কথা। একজন বঙ্গবন্ধুপ্রেমীর কথা।

স্বামী নির্বাচনে প্রার্থী হলে স্ত্রী প্রচারণায় অংশ নেবেন। ভোটারের দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন- এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনে স্বামী পাশ বা ফেল যাই করুন না কেন পরবর্তী পাঁচ বছর আর দেখা মেলে না প্রার্থীদের স্ত্রীর। কিন্তু এই চিরাচরিত নিয়মের মাঝেও ব্যতিক্রম সেলিনা মোমেন।

নির্বাচনের সময় সেলিনা মোমেন বিভিন্ন স্থানে গিয়ে নারীদের নানা সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আশ^স্থ করেছিলেন, ফলাফল যাই হোক তিনি তাদের পাশে থাকবেন। কথা রেখেছেন তিনি। ড. মোমেন এমপি ও পরবর্তীতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পর কথা দিয়ে আসা সেইসব নারীদের ভুলেননি সেলিনা মোমেন। ব্যক্তিগত ও সরকারী অর্থায়নে তিনি তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে চলছেন।

সিলেট-১ আসনভূক্ত এলাকার অনেক গরীব, অসহায়, দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত নারীদের হাতে তুলে দিয়েছেন অনুদান। সরকারি অনুদানের টাকা আর ঢেউটিনও তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। পানি সংকট সমাধানে নিজের অর্থায়নে বসিয়ে দিয়েছেন গভীর নলকূপ। গরীব-দু:খীদের সাহায্য করার মানসিকতা ও তাদের দুর্দশা লাঘবের ঐকান্তিক চেষ্টার কারণে তিনি সিলেট নগর ও সদর উপজেলার অনেক মানুষের কাছে মহিয়সী নারী হিসেবে পরিচিতিও পেয়েছেন।

এই মহিয়সীকে সিলেটের সাধারণ নারীরা কতটুকু আপন ভাবেন তার প্রমাণ পাওয়া গেছে শুক্রবার বিকেলে হাফিজ কমপ্লেক্সের আলোচনা সভায়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদত বার্ষিকী আর শোকের মাস আগস্ট উপলক্ষে সেখানে আলোচনা সভা আর দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন সেলিনা মোমেন।

বিকের পাঁচটায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা দুইটা থেকে সিলেট নগর ও সদরের বিভিন্ন স্থান থেকে নারীরা আসা শুরু করেন। বিকেল পাঁচটায় যখন সভা শুরু হয় তখন হাফিজ কমপ্লেক্সের ভেতরে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাইরে। ওই সভায় ছিলেন জেলা ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীরাও।

সভাপতির বক্তৃতা দিতে গিয়েও নিজের মনের বিশালতার পরিচয় দেন সেলিনা মোমেন। বলছিলেন, সভার ব্যানার তৈরির সময় তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তার পদবী কি দেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, তার পদবী তিনি বঙ্গবন্ধুপ্রেমী, আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খি। আর সবচেয়ে বড় পরিচয় সভায় যেসব নারী আসবেন তাদেরই একজন তিনি। দলীয় পদবী তার কাছে মোটেই মূখ্য নয়।

আলোচনা সভার প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। তিনিও তার বক্তৃতায় স্পষ্ট করেছেন তার নির্বাচন, রাজনীতি ও কাজে সেলিনা মোমেনের ভূমিকা কতটুকু। বলেছেন, সেলিনা মোমেন পাশে না থাকলে নির্বাচনের সময় নারীদের কাছে তার বার্তা নিয়ে পৌঁছানো হয়তো সম্ভব হতো না। আর নারীরা তাদের সমর্থন তার পক্ষে না দিলে নির্বাচনে তার বিজয় হয়তো অনেক কষ্টসাধ্য হতো।

তিনি আরও বলেন, সেলিনা মোমেনের সাথে নারীদের সম্পর্ক নেত্রী আর কর্মীর নয়। ওয়ান টু ওয়ান সম্পর্ক। সেলিনা খুঁজে খুঁজে দু:স্থ, অসহায়দের বের করে তাদেরকে কিভাবে সাহায্য করা যায় সেটা ভাবেন। কবি নজরুলের বিখ্যাত সেই কবিতার কয়েক লাইন উচ্চারণ করেন ড. মোমেন, ‘কোন কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে, বিজয়ীলক্ষ্মী নারী’। এই কবিতা দিয়েই মোমেন বুঝাতে চান তার কর্মের মধ্যে সেলিনা মোমেনের অবদান কতটুকু।

এছাড়াও সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে ওই সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, নির্বাচনের আগেই তিনি সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে কিছু পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল সিলেট-ঢাকা ছয় লেনের মহাসড়ক। তিনি জানান, নানা বাধাবিপত্তির পরও এই প্রকল্প নিয়ে তিনি আশাবাদী এবং শিগগিরই এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। সিলেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিয়ে তার বিশেষ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে ড. মোমেন বলেন, ইতোমধ্যে সিলেট-১ আসনভূক্ত এলাকার ৬০টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ২৫০ শয্যার জেলা হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরুর কথা তুলে ধরেন তিনি। এছাড়া সিলেট মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হয়েছে বলে জানান মোমেন।

সেলিনা মোমেনের সভাপতিত্বে ও মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, সিটি কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সালমা বাসিত, সাধারণ সম্পাদক নাজনীন হোসেন, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসমা কামরান, মারিয়াম চৌধুরী মাম্মী, সামসুননেহার মিনু, সিটি কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ, তৌফিক বক্স লিপন, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আফসর আহমদ প্রমুখ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৩০ আগস্ট ২০১৯/ শাদিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন