আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সরকারী বরাদ্ধের টাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তার পকেটে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০১৯-১১-১৪ ১৫:২৭:৩৪

ওসমানীনগর প্রতিনিধি :: প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে সিলেটের ওসমানীনগরে সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ সরকারী বরাদ্ধের টাকা উত্তলন করে আত্মসাৎ করার পায়তারা করে যাচ্ছেন এক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা।

উপজেলার গোয়ালাবাজার ক্লাস্টারে অর্ন্তভূক্ত প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষককে একটি প্রশিক্ষণ করিয়ে দুটি প্রশিক্ষণের স্বাক্ষর নিয়ে একটি প্রশিক্ষণের পুরো টাকাটাই গত ৫ মাস ধরে নিজের পকেটে রখেছেন তিনি।

জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারী-মার্চ ও এপ্রিল-জুনের দুটি সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের টাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানি ও দিলীপময় দাস চেকের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। অবিভক্ত বালাগঞ্জ শিক্ষা অফিসের ওসমানীনগরে কর্মরত ওই দুই শিক্ষা কর্মকর্তার নামে চারটি চেকের মাধ্যমে ওই টাকা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে দিলীপময় দাস তার দায়িত্বে থাকা সাব ক্লাস্টার সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ করালেও সানাউল হক সানির দায়িত্ব থাকা গোয়ালাবাজার সাব ক্লাস্টারের এপ্রিল-জুনের সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ হয়নি। এপ্রিল-জুনের সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের স্বাক্ষর শীট বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে কৌশলে শিক্ষকদের স্বাক্ষর আদায় করে নেন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানী। পরবর্তীতে প্রশিক্ষণ করিয়ে ভাতার টাকা শিক্ষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রতিও দেন। কিন্তু বিগত ৫ মাসেও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানি প্রশিক্ষণের কোন আয়োজন না করে দেড় শতাধিক শিক্ষকের প্রাপ্ত টাকা হাতিয়ে নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারী-মাচের্র প্রথম ধাপের সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

উপজেলার ৬শতাধিক শিক্ষকের একদিনের সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ উপকরণ খাতে প্রতি শিক্ষকের জন্য ৬০টাকা বরাদ্ধ থাকলেও মাত্র ২০ টাকা খরচ করে (১টি কলম ও ১টি খাতা) বাকি ৪০ টাকা হারে আতœসাৎ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এদিকে, কদিন আগে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানির নানা অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তার অনুগত গুটি কয়েক শিক্ষকদের দিয়ে ও নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা মন্তব্য করেন।

অভিযোগ উঠেছে, কয়েকজন শিক্ষক বিদ্যালয়ে না গিয়ে ওই কর্মকর্তার অফিসে বসে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানাতে চাঁপ দিচ্ছেন উপজেলায় কর্মরত আরো একাধিক শিক্ষককে।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে গোয়ালাবাজার ক্লাস্টারের একাধিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা সানী ওসমানীনগরে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষকদের হয়রানীসহ নানা অনিয়মের জন্ম দিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৫ মাস আগে সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষন শীটে আমাদের স্বাক্ষর নিলেও এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণের আয়োজন করেননি। এবং শিক্ষকদের বরাদ্দকৃত কোন টাকাও পাইনি। গত সপ্তাহে সানী স্যারের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর আমরা সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে কারো কাছে মুখ না খোলে তার পক্ষে কথা বলার জন্য তার অনুগত শিক্ষকদের দিয়ে আমাদের চাপ দিচ্ছেন। এছাড়া জুন মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া জানুয়ারী টু মাচের্র সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণে ৬০ টাকা বরাদ্দের স্থলে ১০ টাকা দামের কলম ও ১০ টাকা দামের একটি খাতা দিয়ে বাকি ৪০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা প্রতিবাদী হলে তিনি অফিসিয়াল খরচের অজুহাত দেখান।

অভিবক্ত বালাগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) আব্দুর রকিব ভূঁইয়া বলেন, জানুযারী-মার্চ এবং এপ্রিল-জুন দুটি সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষনের জন্য আসা বরাদ্দের টাকা বিল দাখিল সাপাক্ষে জুন মাসে শেষের দিকে ওসমানীনগরে কর্মরত দুই সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের নামে চেকের মাধ্যমে প্রদান করেছি। তারা যথা সময়ে টাকাগুলো উত্তোলনও করেছেন। তবে কি কারণে সহকারী শিক্ষা কর্মর্তা সানাউল হক সানী  প্রশিক্ষণ না করিয়ে বরাদ্দের টাকা তার কাছে রেখেছেন তা আমার জানা নেই। এমনটি হলে উধ্ধর্তন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবেন।

গোয়ালাবাজার ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সানাউল হক সানী সরকারী বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, শুধু মাত্র গোয়ালাবাজার ক্লাস্টার ছাড়া অন্য সবকটি ক্লাস্টাররের শিক্ষকদের সাব-ক্লাস্টার প্রশিক্ষণ হয়ে গেছে শুধু এটাও শিগ্রই হয়ে যাবে। কিন্তু বিগত ৫ মাস আগে প্রশিক্ষণের বরাদ্ধের টাকা উত্তোলন করে নিজের কাছে রাখার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও তিনি জনবল সংকটের অযুহাত দেখিয়ে ফোনের লাইন কেটে দেন।

সার্বিক বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (চলতি দাায়িত্ব) আব্দুল মুমিন মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি নতুন এসেছি বিষয়গুলো আমার জানায়নি। এরকম হয়ে থাকলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৪ নভেম্বর ২০১৯/আরপি/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন