আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং
মো. রেজাউল হক ডালিম :: ১৩ ফেব্রুয়ারি আর ১লা ফাল্গুন এটাই ছিলো গতানুগতিক বসন্ত বরণের দিন। সংশোধিত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বদলে গেছে সেই দিন। আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি, দিনটি পয়লা ফাল্গুন।
অনেকেই জানেন না এই পরিবর্তনের খবর। দীর্ঘদিন ধরে ইংরেজি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারিকে পয়লা ফাল্গুন হিসেবে সিলেটে যারা বসন্তবরণের উৎসব পালন করে আসছেন, তাদের অনেকেই আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সকাল বের হয়েছেন বাসন্তি সাজে। শুধু তাই নয়, সিলেটের বিভিন্ন স্থানে বসন্ত উৎসব পালনেরও খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়াও সিলেটে অনেকের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সকাল থেকে এই বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ে। গত বছর এই দিনের মেমোরি শেয়ার করেন অনেকেই। অনেককে দেখা যায় পয়লা ফাল্গুনের শুভেচ্ছা জানাতে।
জানা গেছে, সিলেটে আজ বসন্তবরণ উৎসবের আয়োজন করে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । সেখানে বসন্তের গান ও নৃত্য পরিবেশন করেন শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে বাসন্তি সাজে ভিড় জমান মদিনা মার্কেট ও আশপাশ এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ও শিশুরা। এছাড়াও লিডিং ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আয়োজন করা হয় বসন্ত উৎসবের।
রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বসন্তের উৎসবে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে আসা নগরীর মদিনা মার্কেটের বাসিন্দা আবিদ রহমান বলেন, এসে শুনি আজ পয়লা ফাল্গুন না। তিনি বলেন, ‘সেই ছোটবেলা থেকে জানি ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন। আজ এসে শুনি দিনটি নাকি বদলে গেছে। বদলে যাওয়ার বিষয়টি যদি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হতো তবে হয়তো এমন বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’
এই বিভ্রান্তির বিষয়ে এমসি কলেজের শিক্ষার্থী ও নগরীর শিবগঞ্জের বাসিন্দা নাজমুস সাকিব এ প্রতিবেদককে বলেন, বাংলা ক্যালেন্ডার এবং পঞ্জিকাতে দুই ধরনের তথ্য দেওয়ায় এই বিশেষ দিনটি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেট মইনউদ্দিন আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক ও ‘বহুস্বর’র সম্পাদক, লেখক-সাংবাদিক আলমগীর হোসেন এ বিষয়ে বলেন, বাংলা একাডেমি প্রয়োজনবশতঃ এই পরিবর্তনটা করেছেন। তবে যেকোনও পরিবর্তনের পর সেই বিষয়ে যথাযথভাবে প্রচার এবং সচেতনতার কাজটি করা খুব জরুরি। তা না-হলে এক ধরনের কনফিউশন থেকে যায়। যেটা আজকে হয়েছে।’
বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মুঠোফোনে সিলেটভিউ২৪ডটকমকে বিষয়টির বিস্তারিত তুলে ধরে বলেন, এই পরিবর্তনটা সঙ্গতঃ কারণেই হয়েছে। বাংলা একাডেমি কর্তৃক বাংলা মাসের তারিখ বিন্যাসের ক্ষেত্রে প্রথম ৬ মাস ৩১ দিনের দেয়া হয়। বাকি ৬ মাসের মধ্যে ফাল্গুন ব্যতিত আর বাকি ৫ মাস ৩০ দিনের দেয়া হয়, আর ফাল্গুন মাস ২৯ দিনে। কিন্তু এ বছর (২০২০ সালে) ইংরেজি ফেব্রুয়ারি মাস \'লিপ-ইয়ার\' (অধিবর্ষ) অর্থাৎ ২৯ দিনে হওয়ার কারণে বর্তমান বাংলা বছরের ফাল্গুন মাসও একদিন বেড়ে ৩০ দিনের হয়ে গেছে। তাই এই এক দিনের গড়মিল।
তবে যথেষ্ট প্রচারণার অভাব ছিলো এ কথাটি তিনিও মেনে নিয়ে বললেন- হ্যা, বাংলা একাডেমির উদ্যোগে এ বিষয়ে আরো প্রচারণার প্রয়োজন ছিলো। আজ এ নিয়ে অন্ততঃ অসংখ্য ফোনকল আমাকে রিসিভ করতে হয়েছে। আপনাদের সিলেট থেকেও অনেকে ফোন দিয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আমিও অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সবাইকে যথেষ্ট সময় নিয়ে বুঝিয়ে বলেছি।’
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ২৮ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদের সভায় ২০২০ সালের সরকারি ছুটির তালিকা অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর ৩০ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছুটির তালিকা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, পয়লা ফাল্গুন ১৩ ফেব্রুয়ারি নয়, উদযাপিত হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/আরএইচডি/পিডি