আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

‘মন এবং আত্মার পরিশুদ্ধতার জন্য শিক্ষার প্রয়োজন’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৩ ১১:২৫:২৯

সিলেট :: তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেছেন, ‘যেই আত্মা পরিশুদ্ধ, সেই আত্মা সফল। নিজের কথা চিন্তা না করে ভবিষৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করতে হবে। চলার পথ না জানতে পারেন তাহলে পথচলা সুগম হবে না। এর জন্য প্রয়োজন শিক্ষা। একই সাথে মন এবং আত্মার পরিশুদ্ধতার জন্যও শিক্ষার প্রয়োজন।’

শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সোলেমান হলে তার প্রকাশিত গ্রন্থ ‘শিক্ষা’র মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের শহীদ সুলেমান হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেট-এর সভাপতি প্রফেসর ডা. এনায়েত উল্যাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক আরো বলেন, ‘শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষাই তাদের জীবনের গোড়াপত্তন। এ সময়ে যা শেখাবেন তারা তাই শিখবে। ভবিষ্যৎ ভালো হবে। পড়ার ক্ষেত্রে চিন্তা সহকারে পড়তে হবে। কারণ চিন্তা করে পড়লে তা স্বচ্ছ হয়। অবচেতন মনকে খুলে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের মানুষ করতে না পারলে ভবিষ্যতে কোন কাজেই আসবে না। সম্পত্তি রেখে গেলেও কাজ হবে না। কর্মফল মঙ্গল করতে হলে শিক্ষার প্রয়োজন।’

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন-সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি অব পুলিশ মো: কামরুল আহসান বিপিএম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চীফ কার্ডিওলিস্ট ডা. ফজিলাতুন্নেছা মালিক, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা. হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি, দৈনিক উত্তরপূর্বের নির্বাহী সম্পাদক তাপস দাস পুরকায়স্থ, দৈনিক সিলেটের ডাক-এর নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল হামিদ মানিক, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ, সিলেট সংলাপের সম্পাদক মুহাম্মদ ফয়জুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন-ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মহাসচিব ডা: আব্দুল আউয়াল রিজভী।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেটের পাবলিসিটি সেক্রেটারি ও সাংবাদিক আবু তালেব মুরাদের উপস্থাপনায় শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন মাওলানা হাবিবুর রহমান আবদাল। বই পরিচিতি তুলে ধরেন মাসিক গোলাপকুঁড়ি সম্পাদক মুহাম্মদ মুনতাসির আলী। ধন্যবাদ বক্তব্য রাখেন-দৈনিক সিলেটের ডাক-এর চিফ রিপোর্টার মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম।

বই নিয়ে আলোচনায় সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি অব পুলিশ মো: কামরুল আহসান বিপিএম বলেন, ‘জীবন্ত কিংবদন্তী, চেতনার বাতিঘর হচ্ছেন অধ্যাপক মালিক। এই বইটি নিবিড়ভাবে পাঠ করতে হবে। এখানে লেখক একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক; তিনি চিকিৎসাসেবার মধ্যেই নিজের জীবনকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি একজন সাহসী বীর। তিনি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন সেগুলো সাধারণ মানুষও সাহসী হবে না। জীবিত থাকা অবস্থায় জ্ঞানের চর্চা করে যেতে হবে। তার বইটিতে সৃষ্টিকর্তার প্রতি বিভিন্ন ধর্মের যে একাগ্রতা এসব বিষয়ও তুলে ধরেছেন। এ বইটি একটি অত্যাবশ্যকীয় বই হওয়া উচিত।’
দৈনিক সিলেটের ডাক-এর নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল হামিদ মানিক বলেন, ‘ অধ্যাপক মালিকের সবগুলো বইয়ের মূল লক্ষ্য এক। একটি আলোকিত সুন্দর জীবন গড়তে হলে কি করতে হবে না হবে; তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকেই বইয়ে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। কল্পকাহিনী কিংবা কল্পনার জগতে থাকিয়ে মাধুর্যের মাধ্যমে পাঠককে মুগ্ধ করার ইচ্ছা থেকে নয়; তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক গুণ থেকেই তিনি সাধনা চালিয়ে যাচ্ছেন। জীবন এবং জীবন সম্পর্কে তার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে-সেই অভিজ্ঞতা এবং উপলব্দির আলোকেই পাঠকদের আলোকের পথে নিয়ে যেতেই তিনি লিখে যাচ্ছেন। এ বইয়ে তিনি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। এজন্য তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয় ; অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।’

অধ্যাপক মালিকের মেয়ে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের চীফ কার্ডিওলিস্ট ডা. ফজিলাতুন্নেছা মালিক তার শৈশবের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘বাবা যে কত বড় শিক্ষানুরাগী তার প্রমাণ আমি নিজেই। যখন মেয়েদের কোন রকম শিক্ষা দিয়ে বিয়ে দেওয়া হতো ; তখন তিনি আমাকে পড়িয়েছেন। আমি একজন চিকিৎসক হতে পেরেছি। আমি মেয়ে বলে কোন বিভেদ করেননি। আমার বাবা সত্যিকার অর্থে শিক্ষানুরাগী বলেই ছেলে-মেয়ে সবাইকে শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। তিনি বই কিনে দিতেন। আমি বিদেশ গেলে তার জন্য বই আনি। তিনি তা অনেক খুশি হয়ে পড়েন। আমার খুব আনন্দ হয়।’

সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা. হায়াতুল ইসলাম আকঞ্জি বলেন, ‘এ বইয়ের আলোচনা করার-যোগ্যতা আমার নেই। ছোট একটি বই। কিন্তু এই বই নিয়ে গবেষণা করা যায়। এমফিল করা যায়। শিক্ষা বইয়ে তিনি কথাগুলোতে সহজে প্রাঞ্জল ভাষায় তার বইতে রচনা করেছেন।’

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সল মাহমুদ বলেন, ‘বইটিতে সর্ব ধর্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। ’

সিলেট সংলাপের সম্পাদক ফয়জুর রহমান জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিককে গণ সংবর্ধনা প্রদানের বিষয়টি উত্থাপন করেন।

বই পরিচিতিতে গোলাপকুঁড়ি সম্পাদক মুনতাসির আলী বলেন, ‘লেখক বইটিকে উৎসর্গ করেছেন চারটি প্রজন্মকে। ১২৪ পৃষ্টার বইয়টি তিনটি ভাগে রয়েছে। লেখক কোরআন, বাইবেল, বেদ থেকেই অনেক উদ্ধৃতি তুলে ধরেছেন। একই সাথে লেখক তার অভিজ্ঞতা, উপলব্ধি, প্রজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে সমাজের উন্নয়নে শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে পারিবারিক মূল্যবোধ, সামাজিক বিষয়গুলোও উপস্থাপন করেছেন। তিনি সেখানে বিদ্যা ও শিক্ষার পার্থক্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টাও করেছেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০/প্রেবি/ডিজেএস

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন