আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে নতুন সরকারি হওয়া কলেজে অন্যরকম ‘বিড়ম্বনা’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০২-২৬ ০০:২৭:০৫

পিংকু ধর :: বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সংশ্লিষ্টদের। বিশেষ করে শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের দাবি ও নানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণের ঘোষণা দেয়া হয়। এ ঘোষণা শুরুর দিকে আনন্দে ভাসিয়েছিল বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ আনন্দ ‘মধুর বেদনা’ হিসেবে পরিণত হয়েছে।

সরকারিকরণের নানা শর্তের বেড়াজালে পড়ে এসব কলেজের শিক্ষকদের এখন সুযোগ-সুবিধাভোগের ক্ষেত্রে দীর্ঘশ^াস ফেলতে হচ্ছে। একইসাথে সরকারিকরণের দীর্ঘসূত্রতার রেশ কাটতে আরো কয়েক বছর লাগবে এমন বাস্তবতা মেনেই দিন পার করছেন কলেজ শিক্ষকরা।

২০১৮ সালের আগস্ট মাসে সিলেটের ১০টি কলেজসহ ২৭১টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সিলেট জেলার আওতায় সরকারিকরণের ঘোষনা আওতায় কলেজগুলো হল- মদন মোহন কলেজ, গোয়ালাবাজার আদর্শ মহিলা ডিগ্রি কলেজ, বিশ্বনাথ ডিগ্রি কলেজ, দক্ষিণ সুরমা ডিগ্রি কলেজ, ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজ, ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ, কানাইঘাট ডিগ্রি কলেজ, গোয়াইনঘাট ডিগ্রি কলেজ ও ইমরান আহমদ মহিলা কলেজ। সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্মীকরণ বিধিমালা-২০১৮’ এর আলোকে এসব কলেজ সরকারিকরণ করেন।

‘নতুন করে আর কোনো শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া যাবে না’- সরকারিকরণের আদেশের এমন এক শর্তে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অনেক বিষয়ে পাঠদানের জন্য শিক্ষক নেই কয়েকটি কলেজে। অবসর, পদত্যাগ কিংবা মৃত্যুর কারণে খালি হওয়া পদের কারণে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। কয়েকটি কলেজে এ সংকট ‘চরম’ বলে জানা গেছে। সরকারি হওয়া এসব কলেজের মধ্যে কয়েকজন শিক্ষক হতাশা নিয়ে কর্মজীবন শেষ করেছেন। কলেজ সরকারি করা হলেও এখন পর্যন্ত জনবল আত্তীকরণ করা হয়নি। ফলে কয়েকজন শিক্ষক অবসরে গেছেন কিন্তু সরকারি হওয়ার সুযোগ পেয়েও আর্থিক সুবিধা লাভ করতে পারেননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয়করণের জন্য বেশ-কিছু কলেজের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। কিছু কলেজের যাচাই-বাছাই কাজ শেষ হয়েছে। এখন পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের ডেকে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আরো জানা গেছে, এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। ফলে সেখানেও দীর্ঘদিন লেগে যাবে এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের আত্তীকরণ প্রক্রিয়া আরো বিলম্বিত হবে।

এ ব্যাপারে নতুন সরকারি হওয়া বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ লিয়াকত শাহ ফরিদী জানান, নানা কারণে শূন্য হওয়া পদগুলোর ফলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এসব পদে নতুন করে নিয়োগ দেয়ারও সুযোগ নেই। অনেকে আবার পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন না।

জাতীয়করণকৃত শিক্ষকদের সংগঠন সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির (সকশিস) সিলেট বিভাগীয় সভাপতি শাহেদ আহমদ বলেন, আমরা এখন নিজেদের অবস্থান নিয়ে এক ধরণের মধুর সমস্যায় রয়েছি। সেটা হচ্ছে আমরা সরকারি না কি বেসরকারি? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকবে মুজিববর্ষের মধ্যেই যেন আমাদের পদায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।

এ ব্যাপারে মাউশির সিলেট অঞ্চলের পরিচালক অধ্যাপক হারুন অর রশীদ বলেন, সরকারিকরণের চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার সবকিছু ভালো করে দেখতে হয়। ফলে একটু সময় লাগছে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষে কাছ থেকে আশার বাণী শোনা গেলেও বাস্তবতা অন্যরকম সে বিষয়টি মেনে নিচ্ছেন এসব কলেজের শিক্ষকরা। তারা জানিয়েছেন, ভালো মানের হওয়ার ফলেই এসব কলেজ সরকারি করা হয়েছে। বর্তমানে এসব কলেজ সরকারি হলেও শিক্ষকরা এখনও বেসরকারি। তাদের আত্তীকরণ প্রক্রিয়া বিভিন্ন কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। তবে সরকার চাইলে এসব প্রক্রিয়া দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা সম্ভব, এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০/পিডি/ডিজেএস

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন