আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা: বিশ্বনাথে কিডনী রোগে শিশুর মৃত্যু নমুনা সংগ্রহ, আইসোলেশনে ৬ পরিবার

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৪-০৯ ১৭:৫৮:১৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, বিশ্বনাথ :: সিলেটের বিশ্বনাথে প্রায় ৭ মাস ধরে কিডনী রোগে আক্রান্ত থাকা গালিব শাহরিয়ার (১০) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

সে উপজেলার ধীতপুর গ্রামের আবদুল আওয়ালের ভাগিনা ও সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার জলসি গ্রামের নেওয়াজ শরিফের পুত্র। তার মা ফাতেহা বেগম একজন ওমান প্রবাসী।

বুধবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশু গালিব।

গালিবের মৃত্যু করোনার কারণে হয়েছে বলে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হলে গালিবের শরীরের করোনা ছিলো কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে সংগ্রহ করা হয়েছে নমুনা। আইসোলেশনে রাখা হয়েছে গালিবের মামার পরিবারসহ আশপাশের আরো ৫টি পরিবারের সদস্যদেরকে। সংগ্রহ করা গালিবে নমুনার ফলাফল না আসা পর্যন্ত ওই ৬ পরিবারের সদস্যদেরকে

আইসোলেশনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার সকালে নমুনা সংগ্রহের পর দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমদ, থানার এসআই সঞ্জয় চন্দ্র দেব, বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক ও স্থানীয় মেম্বার শাহনেওয়াজ চৌধুরী সেলিমের উপস্থিতিতে জানাযার নামাজ শেষে গালিব শাহরিয়ারের লাশ দাফন করা হয়।

জানাযার নামাজের ইমামতি করেন উপজেলার জানাইয়া জুম্মা বাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সিরাজুল ইসলাম।

জানাযায় নামাজে উপজেলা জামে মসজিদের সহকারী (ছানী) ইমাম মাওলানা লায়েক আহমদ, পূর্ব চান্দশীরকাপন গ্রামস্থ সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষক আবদুল জলিল, মরহুমের মামা আবদুল আওয়াল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭ বছর পূর্বে গালিবের বাবা-মায়ের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরপর থেকে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বিশ্বনাথ উপজেলার ধীতপুর গ্রামস্থ বাবার বাড়িতে নিয়ে বসবাস করছেন গালিবের মা। ৭ মাস পূর্বে কিডনী রোগে আক্রান্ত হয় গালিব। অভাব অনটনের সংসারে নিয়মিত না হলেও নিজেদের সামর্থ অনুযায়ী গালিবের চিকিৎসা চালিয়ে যান তার মামা। প্রায় দুই মাস পূর্বে গালিব ও তার বোনকে বাড়িতে রেখে তাদের মা ফাতেহা বেগম ওমান চলে যান।

মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) সকালে গালিবের শরীর ফুলে গেলে ও পায়ে পানি জমাট হলে স্থানীয় ডাক্তারের পরামর্শে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় বুধবার দিবাগত রাত ১১.৪৫ মিনিটের দিকে সে মৃত্যুবরণ করে। এরপর লাশ নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন তার মামা।

গালিবের লাশ বাড়িতে আনার পর থেকেই এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয় ‘করোনায়’ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে গালিব। খবর পেয়ে বুধবার রাত থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অবস্থান নেন গালিবের মামার বাড়িতে। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তারা গালিব ও তার মামার নমুনা সংগ্রহের পর দুপুরে বাড়ির পাশ্ববর্তী কবরস্থানে স্থানে লাশ দাফন করা হয়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্বনাথ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছয়ফুল হক জানান, জনমনে থাকা আতংক দূর করতে ও গালিব করোনায় আক্রান্ত ছিল কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে পরিবার সূত্রে জানা গেছে গালিব দীর্ঘদিন ধরে কিডনী রোগে আক্রান্ত ছিল।

গালিবের মামা আবদুল আওয়াল জানান, প্রায় ৭ মাস পূর্বে সে (গালিব) কিডনী রোগে আক্রান্ত হয়। মঙ্গলবার তার শরীর ফুলে গেলে ডাক্তাররের পরামর্শে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা গেলে লাশ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তবে গালিবের শরীরে জ্বর বা কাশি ছিলো না।

মৃত গালিব ও তার পরিচর্যাকারীর (মামার) নমুনা সংগ্রহ করার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ আবদুর রহমান মুসা বলেন, নমুমা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।

এব্যাপারে সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজিব আহমদ, পরবর্তি নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গালিবের মামার ও আশপাশের আরো ৫টি পরিবারের সদস্যকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আর সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/০৯ এপ্রিল ২০২০/পিবিএ/এসডি

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন