আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনা: সিলেটে মাত্র ৩০ হাজারে তৈরি হলো ‘ভেন্টিলেটর’!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৬-০৫ ০০:২১:৩২

ছবি: ৩০ হাজার টাকার ভেন্টিলেটর। ইনসেটে মিজান আজিজ।

রফিকুল ইসলাম কামাল :: করোনাকালে ‘ভেন্টিলেটর’ অত্যন্ত জরুরি হয়ে ধরা দিয়েছে চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে। করোনাক্রান্ত রোগীর ফুসফুস যখন বিকল হয়ে পড়ে, তখন রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কাজ চালাতে ব্যবহার করা হয় ভেন্টিলেটর। কিন্তু সিলেটসহ সারা দেশেই ভেন্টিলেটরের সংকট রয়েছে। উচ্চমূল্যের কারণে এটি ক্রয় করা কিংবা আমদানি করাও সহজ নয়। এরকম অবস্থায় মাত্র ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ভেন্টিলেটর তৈরি হয়েছে সিলেটে।

সিলেটের ‘আস্থা ফাউন্ডেশন’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট এই স্বল্পমূল্যের ভেন্টিলেটর তৈরি করেছেন। তাঁকে সহযোগিতা করেছেন দুজন চিকিৎসক, একজন আইসিইউ এক্সপার্ট ও একজন বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার।

৩০ হাজার টাকার মধ্যে ভেন্টিলেটর তৈরির বিষয়টি সিলেটভিউকে জানিয়েছেন মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট। কিছুদিন আগে তিনি স্বল্পমূল্যে ‘জীবাণুনাশক টানেল’ তৈরি করে সাড়া জাগিয়েছিলেন।

মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট সিলেটভিউকে জানান, দেশে ভেন্টিলেটরের সংকটের বিষয়টি তাঁকে ভাবায়। এটি কিভাবে স্বল্পমূল্যে সিলেটেই তৈরি করা যায়, তা নিয়ে তিনি চিন্তা করেন। এ চিন্তা থেকেই ভেন্টিলেটর তৈরির দিকে এগিয়েছেন তিনি।

বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তিপণ্য তৈরি করা মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা যখন জীবাণুনাশক টানেল তৈরি করি, তখন থেকেই স্বল্পমূল্যে ভেন্টিলেটর তৈরির ভাবনা শুরু হয়। একেকটি ভেন্টিলেটর আমদানি করতে ১১ থেকে ২৪ লাখ টাকার মতো খরচ হয়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আমদানি করাও সহজ নয়। আমরা গুগলের মাধ্যমে অনুসন্ধান (সার্চ) করতে শুরু করি। দেখলাম যে, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাকগাইভেলেটর নামের প্রতিষ্ঠান দুর্যোগকালে স্বল্পমূল্যে বিভিন্ন যন্ত্র বানায়। তাদের বানানো ভেন্টিলেটর দেখে আমরা কাজ শুরু করি এবং সফলতা পাই।’

তিনি জানান, এ ভেন্টিলেটর বানাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার, পিভিসি পাইপ, অক্সিমিটার, রেগুলেটর, ব্যাটারি, মোটর প্রভৃতি জিনিসপত্র লেগেছে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা।

তবে মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট এও জানালেন, তাদের তৈরিকৃত ভেন্টিলেটর যদি হাসপাতালে ব্যবহার করা হয়, তবে সেখানকার বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। ফলে ব্যাটারির প্রায় ৫ হাজার টাকা খরচ কমে আসবে। এছাড়া হাসপাতালে যদি সেন্ট্রাল (কেন্দ্রীয়) অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা থাকে, তখন আর অক্সিজেন সিলিন্ডারও ব্যবহার করতে হবে না। ফলে ভেন্টিলেটর তৈরি বাবদ খরচ নেমে আসবে ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার মধ্যে।

দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি এ ভেন্টিলেটর দিয়ে একজন রোগীকে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সেবা দেওয়া সম্ভব বলেও জানিয়েছেন তিনি।

মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট আরো জানান, এ ভেন্টিলেটর তৈরি করতে মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শিব্বির আহমদ শিবলি, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগের সাবেক প্রধান হেলাল উদ্দিন আহমদ, রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এক্সপার্ট সুমন প্রধান, সিলেট হার্ট ফাউন্ডেশনের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল মিয়া সর্বোতভাবে সহযোগিতা করেছেন।

ভেন্টিলেটর প্রসঙ্গে হার্ট ফাউন্ডেশনের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার জুয়েল মিয়া বলেন, ‘ইকুইপমেন্ট স্বল্পতার কারণে দুর্যোগ মুহুর্তে সবাইকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া সম্ভব হয় না। এ দিক চিন্তা করেই এ ভেন্টিলেটর অল্প টাকায় তৈরি করা হয়েছে। অক্সিজেন সোর্স ও ব্যাটারি ব্যাকআপসহ ৩০ হাজার টাকায় এটি প্রস্তুত করা সম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘এ ভেন্টিলেটর দিয়ে প্রতি মিনিটে একজন রোগীকে সর্বোচ্চ ১৫ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে।’

এ বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ার জানান, ভেন্টিলেটরে রেসপিরেশন রেইট (রক্তে অক্সিজেনের তারতম্য) নিয়ন্ত্রণের জন্য তাঁরা মোটর ব্যবহার করেছেন। এটি ১২ থেকে ২০ এর মধ্যে যেকোনো রেইটে সেটআপ করা যাবে। এছাড়া টাইডাল ভলিউম (ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ) নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রেসপিরেটরের (বিশেষায়িত ফিল্টারযুক্ত কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র) মাধ্যমে।

রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এক্সপার্ট সুমন প্রধান বলেন, ‘এটি একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন। এটি দিয়ে ৬ থেকে ৮ ঘন্টা সঠিক পরিমাণ অক্সিজেন সবরাহ করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব।’

৩০ হাজার টাকার মধ্যে তৈরিকৃত ভেন্টিলেটরটি পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে সফলতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন মিজান আজিজ চৌধুরী সুইট। তবে সরকারি পর্যায়ে কারো সাথে এটি নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে কয়েক দিনের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক দুলাল এটি দেখতে আসার কথা রয়েছে।

মিজান আজিজ সিলেটভিউকে বলেন, এ ভেন্টিলেটর নিয়ে তাদের বাণিজ্যিক কোনো চিন্তা নেই। যে কেউ চাইলে তাদের পদ্ধতি ব্যবহার করে এ ধরনের ভেন্টিলেটর তৈরি করে চিকিৎসাসেবায় কাজে লাগাতে পারেন। তাদের কাছে সাহায্য চাইলে তারা সাহায্য করবেন।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/৫ জুন ২০২০/আরআই-কে

@

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন