আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

নগরে জলে বন্দি মানুষ, পরিত্রাণ কোন পথে?

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৭-১২ ১৪:৫৩:৫৬

মো. রেজাউল হক ডালিম :: লায়লার কণ্ঠে গাওয়া গানে ‘জলে বন্দি মাছ’র কথা বললেও আদতে সিলেট নগরে এখন জলে বন্দি মানুষ। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নগরে উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দিলেও অপরিকল্পিত কর্মযজ্ঞ, তাই প্রতি বছর পোহাতে হচ্ছে জলাবদ্ধতার চরম ভোগান্তি- এমন অভিযোগ নগরবাসীর।

তবে সিটি করপোশন কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে তাদের করার কিছুই নেই বলেন জানালেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি নদী খনন না করে তবে প্রতিবছর বৃষ্টি ও উজানি ঢলে সুরমাপার উপচে নগরে পানি ঢুকবে। সুরমাপারে বাঁধের বিষয়টিও তাদের এখতিয়ারে নেই বলে জানালেন ওই কর্মকর্তা। 

শুক্রবার দিবাগত রাত থেকেই থেমে থেমে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে সিলেটে। সেই সাথে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ফুলেফেঁপে ওঠেছে সুরমা নদী। ফলে সিলেট নগরের বেশ কিছু এলাকায় মানুষের ঘরে ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে পানি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জমেছে হাটুসমান পানি।  শনিবার রাত ও আজ রোববার (১২ জুলাই) সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকায় এ চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।




জলাবদ্ধতা যেন নগরবাসীর নিয়তির সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গেছে। টানা এক বেলা বৃষ্টি দিলেই ঘরে জমে যায় হাটু থেকে কোমরসমান পানি। আজ সিলেট নগরের বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তালতলা, ছড়ারপাড়, মাছিমপুর, শেখঘাট, কাজিরবাজার, জল্লারপার, পুরানলেন, মদীনা মার্কেট, আখালিয়া, শিবগঞ্জ, মিরাবাজার ও শাহজালাল উপশহরের বিভিন্ন স্থানসহ নগরের বেশ কয়েটি এলাকায় বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং সড়কে উঠেছে পানি। ঘরে পানি ঢুকে যাওয়া রান্না-বান্নাসহ দৈনন্দিন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে নগরবাসীর।

দেখা গেছে, নিচে এক/দুই হাত পানি রেখেও খাটের উপরে সন্তানদের নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে অনেক পিতা-মাতাকে। এই পানির সঙ্গে সাপ-বিচ্ছুও ঘরে ঢুকার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। ড্রেন ও ছড়ার দূষিত ময়লা পানি ঘরে ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকছে। এ পানিতে ‍দুর্গন্ধও আছে। ফলে এ পানি থেকে নানা রোগ হতে পারে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। এছাড়াও পানির কারণে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে পারছেন না অনেকে। ভুক্তভোগী নগরবাসীর প্রশ্ন- এ যাতনার শেষ কোথায়? পরিত্রাণ কোন পথে?

নগরবাসীর এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর মোবাইল ফোনে কল দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিসিক’র প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান সিলেটভিউ-কে বলেন, নগরের জলবদ্ধতা নিরসনে সিসিক তার যতটুকুট করার করেছে। এখন পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ যদি সুরমা নদী খনন না করেন তবে প্রতিবছরই এ সমস্যা দেখা দেবে, এর সমাধান হবে না।




নদীপারে বাঁধের ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, এই বিষয়টিও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের অধীনে। বিগত ১৫ বছর ধরে তারা সুরমা নদী খনন ও নগরের সাইটে নদীর দু’ধারে ব্লক দিয়ে বাধ তৈরির আশ্বাস দিয়ে আসলেও তা পূর্ণ করেননি। তাই নগরে জলবাদ্ধতা সমস্যারও সমাধান হচ্ছে না।

নগরের ভেতরের কোনা খাল-ছড়া অপরিচ্ছন্ন নয় বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান সরকার সিলেটভিউ-কে বলেন, এটা ঠিক যে- সুরমা নদী খনন হলে হয়তো পানি নগরে মানুষের বাসা-বাড়িতে ঢুকবে না। তবে এটি বড় প্রকল্প। তবে প্রক্রিয়াধীন। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে সম্পন্ন করতে দেরি হচ্ছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ১২ জুলাই, ২০২০ / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন