আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং
নিজস্ব প্রতিবেদক :: ঈদের আগের দিন সিলেটের ওসমানীনগরে খুন হওয়া প্রবাসী মহিলা রহিমা বেগমের লাশ উদ্ধারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে হত্যাকন্ডের রহস্য উদঘাটন ও হত্যাকারী আটক করেছে পুলিশ। হত্যাকারী আব্দুল জলিল কালু (৩৯)-কে শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারস্থ হেলাল ভিলা (করনসী রোড) থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
পুলিশ বলছে, ঈদ উপলক্ষে প্রবাসী মহিলার কাছে টাকা ধার চেয়ে না পেয়ে রহিমা বেগমকে গলা কেটে হত্যা করে লাশ বাথরুমে রেখে পালিয়ে যায় আব্দুল জলিল কালু। শুক্রবার রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য জানিয়েছেন আব্দুল জলিল কালু। গ্রেফতারকৃত কালু ২০০৭ সালে গোয়ালাবাজারে একইভাবে সংঘটিত হওয়া একটি হত্যা মামলারও আসামি।
পুলিশ জানায়, উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের কটালপুর গ্রামের মৃত আখলু মিয়ার স্ত্রী যুক্তরাজ্য প্রবাসী রহিমা বেগম ওরফে আমিনা (৬০) তার ৪ সন্তানসহ যুক্তরাজ্যে থাকতেন। গত ২ বছর ধরে গোয়ালাবাজারের করনসী রোডে নিজস্ব বাসায় তিনি বসবাস করছেন। পার্শবর্তী হেলাল ভিলায় ভাড়া থাকতেন নগরীকাপন গ্রামের আব্দুল কাছিমের ছেলে আব্দুল জলিল ওরফে কালু।
পাশাপাশি বাসা থাকায় পরিচিতর সুবাদে কালু গত মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) প্রবাসী রহিমা বেগমের কাছে ঈদ উপলক্ষে ৫ হাজার টাকা ধার চায়। রহিমা বেগম টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং কালুকে তাড়িয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে রহিমা বেগমকে খুন করার পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী মঙ্গলবার রহিমার ঘরে লুকিয়ে থাকেন কালু। কিছু সময় পর তিনি পিছন থেকে রহিমার মাথায় বাঁশের লাঠি দিয়ে আঘাত করেন। এতে রহিমা মাটিতে পরে যান। এরপর নড়াচড়া করতে থাকায় বটি দা দিয়ে তার গলা কেটে দেন কালু। পরবর্তীতে তিনি ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যান।
রহিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিকেল থেকে বন্ধ থাকায় দেশে তার আত্মীয়রা বৃহস্পতিবার রাতে রহিমা বেগমের বাসায় গিয়ে বাসাটি তালাবদ্ধ দেখতে পান। পরে গভীর রাতে থানা পুলিশের উপস্থিতিতে গেইট ও দরজার তালা ভেঙে ঘরে প্রবেশ করে বাথরুমের মেঝেতে রহিমা বেগমের গলা কাটা রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় রহিমা বেগমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার সকাল ১০টায় সিলেটের পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন পিপিএম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) রফিকুল ইসলাম, থানার ওসি শ্যামল বনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এছাড়া পুলিশ ইনভেস্টিগেশন অব ব্যুরো (পিবিআই) ও সিআইডির দুটি টিম ঘটনাস্থলে এসে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে। থানা পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে, শুক্রবার রাতে এ ঘটনায় একটি হত্যা মালমা দায়ের করেন নিহত রহিমার ছোট ভাই উপজেলার দিরারাই গ্রামের আব্দুল কাদির। মামলা দায়ের এবং লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ। এক পর্যায়ে শুক্রবার দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে গোয়ালাবাজারস্থ হেলাল ভিলা (করনসী রোড) থেকে আব্দুল জলিল কালুকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেফতারের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কালু তাকে ৫ হাজার টাকা ধার না দেওয়ায় রহিমা বেগমকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেন। শনিবার (১ আগস্ট) পুলিশ তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে রহিমা বেগমের মোবাইল ফোন ও ২৮ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে সংঘটিত এ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বটি দা উদ্ধার করে।
সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর ও মিডিয়া) মো. লুৎফুর রহমান জানান, কালুকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে সে হত্যাকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশ ভিকটিমের ব্যবহৃত সাদা রংয়ের স্যামসাং মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে।
লুৎফুর রহমান আরও জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে রিমান্ডের আবেদন জানালে বিজ্ঞ আদালত কালুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২ আগস্ট, ২০২০ / ডিপি / ডালিম