আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

করোনাকে পুঁজি করে সিলেটে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের ‘ডাকাতি’!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-০৭ ১৫:১১:৪৭

মো. রেজাউল হক ডালিম :: দক্ষিণ সুরমার চন্ডিপুল থেকে সিএনজি অটোরিকশায় উঠেছেন জাহিদ হাসান নামের এক  শিক্ষক। যাবেন দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারে। অটোরিকশা থেকে নেমে নায্য ভাড়া ২০ টাকা দিতেই থেঁতে উঠেন চালক। তার দাবি ৩০ টাকা। ৩০ টাকা কেন জানতে চাইলে জাহিদ হাসানকে চালক বলেন, এত কথা বলতে পারবো না। ভাড়া ৩০ টাকাই।

এসময় জাহিদ হাসান বলেন, করোনাকালে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ জন নিয়ে আসলে আপনি ৩০ টাকা করে ভাড়া নেওয়ার কথা। কিন্তু আপনি তো যাত্রী পাঁচজনই নিয়ে এসেছেন। তাই ভাড়া ৩০ টাকা নয়, ২০ টাকাই নেবেন আপনি।  ৩০ টাকা নেওয়া অন্যায় হবে। এ কথা বলতেই জাহিদ হাসানের দিকে মারমুখো হয়ে পড়েন চালক। পরে মান-ইজ্জতের ভয়ে জাহিদ হাসান ওই চালককে ৩০ টাকা দিয়ে আসতে বাধ্য হন।

শুধু চন্ডিপুল থেকে নাজিরবাজার পর্যন্ত আর যাত্রী জাহিদ হাসানই নন, সিলেটের প্রায় সব রাস্তায়ই এভাবে প্রতিদিন জাহিদ হাসানের মতো অসংখ্য যাত্রী সিএনজি অটোরিকশা চালকদের ‘ডাকাতি’র শিকার হচ্ছেন। কিন্তু তাদের লাগাম টেনে ধরার যেন কেউ নেই।

সিলেটসহ সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত ২৬ মার্চ সব ধরণের গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে ৩১ মে থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের আদেশ দেয়া হয়। ওই সময় করোনাভাইরাস ঠেকাতে সিলেটসহ সারা দেশে গণপরিবহনে যাত্রী কম বহন এবং যাত্রীপ্রতি ৬০% ভাড়া বাড়ানোর নির্দেশও দেয় সরকার।

কিন্তু সরকারের সেই নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সিলেটে সিএনজি অটোরিকশা চালকরা কোনো স্থানে যাত্রীদের জিম্মি করে ১০০% আর কোনো স্থানে যাত্রী কম না নিয়েই ৬০% ভাড়া আদায় করছেন। তাদের দাবি অনুযায়ী ভাড়া না দিলে অনেক সময় যাত্রীদের হেনস্তাও করছেন চালকরা। যাত্রীরা মান-ইজ্জতের ভয়ে চালকদের অন্যায় দাবি মেনে বাড়তি টাকা দিয়েই রেহাই পাচ্ছেন তাদের হাত থেকে।

বিশেষ করে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চন্ডিপুল থেকে গোয়ালাবাজার পর্যন্ত অটোরিকশা চালকরা বেশি নৈরাজ্য চালাচ্ছেন।

এ লাইনের যাত্রীদের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চন্ডিপুল থেকে গোয়ালাবাজার পর্যন্ত স্বাভাবিক থেকে ৬০ ভাগ বাড়িয়ে ভাড়া হয় ৬০ টাকা। তবে এ ক্ষেত্রে ৩ জন যাত্রী বহনের নিয়ম। কিন্তু সিএনজি অটোরিকশা চালকরা তার জায়গায় ১০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করে বসেন। আর যাত্রীও নেন পাঁচজন। যাত্রীদের জিম্মি করে তারা প্রতিজনের কাছ থেকে ৯০-১০০ টাকা করে ভাড়া আদায় করে নেন।

অন্যদিকে, সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিশ্বনাথ স্ট্যান্ডের অটোরিকশা চালকরা সিলেট পর্যন্ত তিনজন করে যাত্রী বহন করলেও সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে প্রতিজনের কাছ থেকে ভাড়া আদায় করেন ৬০ ভাগের জায়াগয় পুরো ১০০ ভাগ। প্রতিবাদ করলেই চালকরা একজোট হয়ে মারমুখো হন তারা যাত্রীর দিকে ।

সিলেটজুড়ে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের এমন হয়রানি আর নৈরাজ্যের প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন যাত্রীসাধারণ।

এ বিষয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জ্যোতির্ময় সরকার পিপিএম সিলেটভিউ-কে বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। তবে এখন যেহেতু বিষয়টা জানলাম, ট্রাফিক বিভাগকে অবগত করবো এবং এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ৭ আগস্ট, ২০২০ /  ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন