আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেট কিন ব্রিজের মালিক কে?

একবছরেও শুরু হয়নি সংস্কার কাজ!

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৮-১৩ ১৪:১৮:৪৭

মো. রেজাউল হক ডালিম ::  ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত কিনব্রিজটি কালের বিবর্তণে এখন ঝুঁকিপূর্ণ। দীর্ঘদিন সংস্কারবিহীন এই ব্রিজটি মেরামতের দোহাই দিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাতের আধারে সিলেট সিটি করপোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গ্রিল দিয়ে ব্রিজের দু’পাশ বন্ধ করে দেন। কিন্তু মেয়রের সেই ‘ফাঁকা আশ্বাসের’ প্রায় একবছর হতে চললেও ঝুঁকিপূর্ণ এ ব্রিজে এখনও শুরুই হয়নি সংস্কার কাজ।

জানা গেছে, এই ব্রিজের কাজ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং সেই কমিটির পক্ষ থেকে একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিলো। সেই প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি, তাই ঐতিহ্যবাহী ব্রিজটিও পড়ে আছে সংস্কারবিহীন। ব্রিজটি দেখভালের মূল দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের হলেও তারাও রয়েছে এ ব্যাপারে উদাসীন।

এদিকে, সিলেট নগরীর ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ কিন ব্রিজ দিয়ে আবারও অবাধে চলতে শুরু করেছে সব ধরণের যানবাহন। গত ঈদের পর থেকেই সিএনজি অটোরিকশসহ প্রায় সব ধরণের যানবাহন এ ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

জানা যায়, সিলেট নগরের ঐতিহাসিক কিন ব্রিজ সংস্কারের জন্য সিটি কর্পোরেশন, সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ এবং পুলিশ (ট্রাফিক বিভাগ)-এর  যৌথ সিদ্ধান্তে  গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর এই সেতু দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করা দেয়া হয়। শুধু পথচারীরা হেঁটে পারাপারের সুযোগ রেখে ব্রিজের দু’ধারে (দক্ষিণ ও উত্তর পাশে) লোহার গ্রিল বসিয়ে দেন মেয়র আরিফ। যাতে কোনো ধরণের যানবাহন যাতে চলাচল করতে না পারে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের (সিসিক) মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ওই সময় বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই সেতুটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে সংস্কারের জন্য এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় শতবর্ষী এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন সুরমা নদী পার হয় অসংখ্য যানবাহন। ফলে সেতুর বিভিন্ন স্থানে গর্ত হওয়ায় যান চলাচল অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঐতিহাসিক এই স্থপনাটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

তবে এভাবে কিন বিজ্র বন্ধ করে দেয়ায় সে সময় ফুঁসে উঠেন সুরমার দক্ষিণপারের মানুষ। তাদের আন্দোলনের মুখে এক মাস ২২ দিন বন্ধ রাখার পর গ্রিলের কয়েকটি রড কেটে মোটরসাইকেল ও রিকশা চলাচলের সুযোগ করে দেয়া হয়, বন্ধ রাখা হয় অন্য সব যানবাহন।

কিন্তু মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সংস্কার কাজের আশ্বাস প্রদানের পর চলে গেছে ১০ মাসের অধিক সময়, ব্রিজটিতে হয়নি কোনো সংস্কার কাজ। সিসিক বলছে- এর মূল দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের। আর সওজ বলছে- এ বিষয়ে ঠিকমতো জানা নেই। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে- সিলেট কিন ব্রিজের প্রকৃত মালিক আসলে কে?

কিন ব্রিজে কাজ না হওয়ার বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান আজ বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) সিলেটভিউ-কে বলেন, কিন ব্রিজে কোনো সংস্কার হয়নি এটা ঠিক। ব্রিজটির মূল অভিভাবক সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেই সংস্কার কাজের উদ্দেশ্যে ব্রিজটিতে গত বছর যান চলাচল বন্ধ করা হয়েছিলো।

নূর আজিজ জানান, ব্রিজটিতে যান চলাচল বন্ধ করার পর বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে একটি মিটিং হয়। সে মিটিংয়ে সিসিক, সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সে মিটিংয়ে এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কমিটির পক্ষ থেকে ব্রিজে সংস্কার কাজ নিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেই প্রতিবেদন আজও আলোর মুখ দেখেনি।

এর পর থেকে কিন ব্রিজে সংস্কার কাজের সংশ্লিষ্টতা থেকে হাত গুটিয়ে নেয় সিসিক- এমনটাই জানালেন প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী।

এ বিষয়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া সিলেটভিউ-কে বলেন, সিসিক কর্তৃপক্ষ বা মেয়র মহোদয় এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।

তবে ‘কিন ব্রিজের দেখভালের মূল দায়িত্ব সড়ক ও জনপদ বিভাগের’- সিসিকের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রিতেশ বড়ুয়া বলেন, আসলে এ বিষয়ে আমি ঠিকমতো জানি না, জেনে বলতে হবে।

এদিকে, সংস্কার কাজ হওয়ার আগেই গত ঈদুল আযহার (১ আগস্ট) থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সেই কিন ব্রিজ দিয়ে আবারও চলতে শুরু করেছে সিএনজি অটোরিকশসহ প্রায় সব ধরণের যানবাহন। রিকশার দু’পাশের চাকার মধ্যখানের লোহার রডের ধাক্কায় গ্রিল ভেঙে যাওয়া এবং পরবর্তীতে সেগুলো মেরামত না করার কারণে বর্তমানে সেখানে গ্রিলের অস্তিত্বই নেই। যার ফলে গত ঈদের পর থেকেই ব্রিজ দিয়ে অবাধে চলছে সিএনজি অটোরিকশসহ প্রায় সব ধরণের যানবাহন। এতে বাধা দিচ্ছে না দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ।

এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশেনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী গতকাল বুধবার (১২ আগস্ট) সিলেটভিউ-কে ফোনে জানান, গ্রিল যে ভেঙেছে সেটি দেখেছি এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করছি।

উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩৩ সালে সুরমা নদীর ওপর কিনব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। নির্মাণ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেয়া হয়। আসাম প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর মাইকেল কিনের নামে এই সেতুর নাম রাখা হয় ‘কিন ব্রিজ’।

স্বাধীনতা যুদ্ধ শেষে সিলেট শহর থেকে পাক সেনারা পালিয়ে যাওয়ার সময় সিলেটে প্রবেশের এই ঐতিহাসিক স্থাপনায় মাইন বিস্ফোরণ ঘটালে এর একাংশ ধসে যায়। দেশ স্বাধীনের পর তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকার এটি পুনঃনির্মাণ করে।
দৃষ্টিনন্দন লোহার পাটাতনের ওপর লাল রং দেয়া সেতুটির অবকাঠামো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ১৩ আগস্ট, ২০২০ / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন