আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

ওসমানীনগরে মামাতো ভাইয়ের ‘ধর্ষণে’ মা হলো কিশোরী

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-০৯-২৮ ১৯:৩০:৫৪

(ফাইল ছবি)

ওসমানীনগর প্রতিনিধি :: সিলেটের ওসমানীনগরে মামাতো ভাইয়ের একাধিবার ‘ধর্ষণে’ মা হয়েছেন ১৬ বছরের এক কিশোরী। তবে এখন সেই কিশোরীকে স্ত্রী হিসেবে এবং কন্যাশিশুকে নিজের সন্তান বলে পরিচয় দিতে নারাজ ‘ধর্ষণকারী’ মামাতো ভাই।

এ বিষয়ে কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে ওসমানীনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছন।  

জানা গেছে, উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের মজনু মিয়ার পুত্র রায়হান আহমদ (১৯) তার নিজ বাড়িতে ফুফাতো বোন (ওই কিশোরী) থাকার সুবাদে নানা ভাবেফুসলিয়ে একাধিকবার দৈহিক মিলন ঘটালে ওই কিশোরী অন্তসত্তা হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর রায়হানের পরিবার টালবাহানা শুরু করে। রায়হানের স্ত্রী হিসাবে ওই কিশোরীকে তাদের ঘরে তুলা হবে এমন প্রস্তাবে শুরু হয় কালেক্ষপন। বিয়ের প্রলোভনে মাসের পর মাস দৈহিক মিলনের ফলে কিশোরীর গর্ভে জন্ম নেয় এক কন্যাসন্তানের।  কন্যাশিশুর জন্মের পর রায়হানের পরিবার আর ওই কিশোরীকে ঘরে তুলবে না বলে জানালে সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়ে ওই কিশোরী। ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের পিতৃপরিচয় পেতে এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রিকশা চালক পিতার কিশোরী কন্যা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ ও গত রবিবার (২৭ সেপ্টম্বর) ওসমানীনগর থানায় রায়হানের পরিবারের ৪ জনকে আসামি করে একটি মামালা দায়ের করে কিশোরীর পিতা।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরীর পিতা একজন রিকশা চালক। নিজের সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় ছোট বেলা থেকে তার মামার বাড়িতে বড় হয়েছে কিশোরী। এই সুবাদে তার মামাত ভাই রায়হান  গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষন করে। বিষয়টি কিশোরী তার পিতাকে জানালে তিনি রায়হানের পরিবারকে এই ঘটনা জানান। তখন রায়হানের পিতা মজনু মিয়ার ও মাতা হামিদা বেগম তাদের পুত্রবধূ করে কিশোরী ঘরে তুলার প্রতিশ্রুতি দেন। নিজ পরিবার থেকে এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানতে পেরে রায়হান বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার কিশোরীকে ধর্ষণ করে।

এক পর্যয়ে কিশোরী অন্তসত্তা হলে কয়েক দিনের মধ্যে রায়হানের ন্ত্রী করে ঘরে তুলা হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে তাকে একই গ্রামে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিষয়টি জানা জানি হলে ধর্ষকের পরিবারের পক্ষ থেকে মেয়েকে ৫০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে এবং  কিশোরীর গর্ভপাত করতে বলা হয় শালিশান ব্যক্তিদের মাধ্যমে। কিন্তু এতে কিশোরীর পরিবার রাজি না হওয়ায় শুরু হয় গ্রাম্য শালিশ। কিশোরীকে রায়হানের ঘরে তুলা হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে কিশোরীর পিতার একমাত্র সম্বল রিকশাটিও বিক্রি করতে হয়। নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে শালিশানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুহারা পাননি রিকশাচালক কিশোরীর পিতা।

ওই কিশোরী গত ৯ আগস্ট একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে কিশোরী দেড় মাসের কন্যা শিশুকে নিয়ে পিতার স্বৃকৃতির দাবিতে একাধিকবার রায়হানের পরিবারের কাছে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

অবশেষে কিশোরীর পিতা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগটির তিনটি শুনানীর দিন ধার্য করেন। প্রথম শুনানীতে রায়হানের পরিবার বা তার পক্ষে কেই উপস্থিত হননি।

দুই শুনানিতে বিবাদিদের উপস্থিতিতে কোন সুহারা না হওয়ায় ওসমানীনগর থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানানো হয়।

পরবর্তীতে গত রবিবার ওসমানীনগর থানায় কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। মামালায়  রায়হান (১৯), তার পিতা মজনু মিয়া, মাতা হামিদা বেগম ও চাচা কামরু মিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়।

কিশোরী জানায়, এই সন্তানের বাবা রায়হান। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন সমাজে নিরীহ ও হতদ্ররিদ্র। তাই সুবিচার থেকে বঞ্চিত। আমার সন্তানের পিতৃপরিচয় ও স্ত্রী হিসেবে রায়হানের কাছ থেকে স্বীকৃতি চাই।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এস আই সবিনয় বৈদ্য বলেন, অভিযুক্তদের আটকে অব্যাহত তৎপরতার পাশাপাশি মামলাটির সার্বিক বিষয়গুলো অত্যান্ত গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বনিক বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কিশোরীর পিতার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর তা মামলা আকারে গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ /  রণিক / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন