আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেটে মেটলাইফের ম্যানেজার কবিরের যত ‘স্বেচ্ছাচারিতা-অনিয়ম’

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-০১ ১৯:১২:৪৮

নিজস্ব প্রতিবেদক :: আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ‘মেটলাইফ’র অধিভুক্ত সিলেটের ‘কবির খান এজেন্সি’র ম্যানেজার কবির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও জালিয়াতির গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার অনিয়মে ইতোমধ্যে চুক্তিভিত্তিক চাকরি হারিয়েছেন ‘কবির খান এজেন্সি’র দুই ইউনিট ম্যানেজার। আরও বেশ কয়েকজন প্রতিবাদী কর্মকর্তা-কর্মচারীর চুক্তিও হুমকির মুখে।

এছাড়াও কবির খানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কর্মকর্তাদের প্রাণনাশের হুমকি ও এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে অপসারণসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।  

এ বিষয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসক ও সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও কবির খানের অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়ে হিন্দু মহাজোটের উদ্যোগে মানববন্ধন এবং ‘কবির খান এজেন্সি’র ভুক্তভোগী কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ ১৫ দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন।

অভিযোগে প্রকাশ, ২০০৩ সালে সিলেট নগরীর বারুতখানাস্থ সিম্ফনি হাইটস ভবনের তৃতীয় তলায় ‘কবির খান এজেন্সি’ নামে ‘মেটলাইফ’র একটি ব্রাঞ্চ খুলে বসেন কবির উদ্দিন খান। খোলার পর থেকেই ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্বরত কবির উদ্দিন নানা অনিয়ম ও কোম্পানি বিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগকারীরা বলেন, কোম্পানির নিয়োগকৃত সেক্রেটারিবৃন্দ কবির উদ্দিন খানের প্রত্যক্ষ মদদে অফিসের কাজ বাদ দিয়ে নিজেরা গ্রাহকদের পলিসি করাতে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও সার্টিফিকেট জাল করে এফ.এ (ফিনান্সিয়াল এসোসিয়েট) নিয়োগ দিয়ে থাকেন। শুধু তাই নয়, কোম্পানির নির্দিষ্ট ফরমেট ছাড়াই কবির উদ্দিন ব্যক্তিগত ফরমেটে গ্রাহকদের পলিসি করান। এতে পরবর্তীতে গ্রাহক এবং কোম্পানির মাঝে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয় এবং গ্রাহকরা চরম ক্ষুব্ধ হন।  

অভিযোগকারীরা সিলেটভিউ-কে বলেন, ‘কবির খান এজেন্সি’-তে বিভিন্ন ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর কোনো রিসিভ কপি দেওয়া হয় না। পরবর্তীতে অধিকাংশ ডকুমেন্ট ‘হারিয়ে গেছে’ বলে জানান কবির উদ্দিন এবং তার বলয়ের কর্মকর্তারা। এমনকি অনেক গ্রাহকের ডকুমেন্ট হারিয়ে যাওয়ার পরে সেক্রেটারিবৃন্দ সে ডকুমেন্টের কথা পুরোপুরি অস্বীকার করে বসেন।

এছাড়াও কবির উদ্দিন মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির লগো দেখিয়ে লোক নিয়োগ দিয়ে এফ.এ কোড তৈরির পর  পরবর্তীতে সে এফ.এ (ফিনান্সিয়াল এসোসিয়েট)-কে তার ভাইয়ের কোম্পানি চার্টার্ড লাইফ ইন্সুরেন্স-এ স্থানান্তরিত করেন।

কবির উদ্দিনের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় অনেকেই ইতোমধ্যে বাধ্য হয়ে এজেন্সি ছেড়ে নিরবে চলে গেছেন। তার এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেন তাদের বিরুদ্ধে হেড অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে নানা মিথ্যা অভিযোগ তুলে ধরেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল তথ্য দিয়ে তাদের চুক্তি বাতিল করান।

অভিযোগকারীরা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রহস্যজনক কারণে কবির উদ্দিন খানের অনিয়মের বিষয়ে নিরব ভূমিকা পালন করেন।

জানা গেছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খুলায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ভুল বুঝিয়ে অজিত কুমার ভট্টাচার্য্য (৬৩) ও বিনয় ভূষণ দে (৩৫) নামের দুজন ইউনিট ম্যানেজারের চুক্তি বাতিল করান কবির উদ্দিন। এছাড়াও এই দুই ম্যানেজারের সকল গ্রাহককে কবির উদ্দিন তার নিজস্ব কোডে স্থানান্তরিত করতে অজিত কুমার ও বিনয় ভূষণকে অফিসে প্রবেশ না করার জন্য বলেন। কবিরের কথায় তারা দুজন প্রথমে রাজি না হলে তাদের হুমকিও প্রদান করেন তিনি। এমনকি তিনি বাসায় গিয়েও প্রাণনাশের হুমকি দেন।

এ বিষয়ে অজিত কুমার ও বিনয় ভূষণ সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় পৃথক ৩টি জিডি করেছেন।

এছাড়াও প্রতিবাদী বাকি কর্মকর্তাদের চুক্তি বর্তমানে হুমকির মুখে আছে বলে অভিযোগ।

কবির উদ্দিনের অনিয়ম-দুর্নীতিতে অতীষ্ট হয়ে গত ৩১ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভুক্তভোগী ৩০ জন ফিন্যান্সিয়াল এসোসিয়েট ও ইউনিট ম্যানেজার কর্মবিরতি পালন করেন। এছাড়াও কবির উদ্দিনের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে গত ১৮ সেপ্টেম্বর নগরীতে মানববন্ধন করে হিন্দু মহাজোট।

পরবর্তীতে গত ২৭ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসক ও এসএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগীরা।

সর্বশেষ গত কয়েক দিন আগে সবার প্রতিবাদের মুখে কবির উদ্দিন অফিসের সিনিয়র ৬ কর্মকর্তার সামনে ‘এমন অনিয়ম আর হবে না’ বলেন এবং অজিত কুমার ও বিনয় ভূষণকে স্বপদে বহাল করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু পরদিনই তিনি তার দেয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসেন এবং অনিয়ম অব্যাহত রাখেন।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে ‘কবির খান এজেন্সি’র ম্যানেজার কবির উদ্দিন খানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে এ বিষয়ে মেটলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সিলেট বিভাগীয় (এরিয়া) ম্যানেজার শামীম আহমদ সিলেটভিউ-কে বলেন, কবির উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে লিখিত কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে অফিসিয়ালি তদন্ত হবে এবং কবির উদ্দিন দোষী হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কারও বিরুদ্ধে কেউ যদি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে অভিযোগ করেন তবে সেটিও আমরা খতিয়ে দেখবো।

এক প্রশ্নের জবাবে শামীম আহমদ বলেন, সিলেট জেলা প্রশাসক ও এসএমপি পুলিশ কমিশনার বরাবরে অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি আমি একটি অনলাইন পত্রিকায় দেখেছি। এর বেশি আর কিছু জানি না।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ১ অক্টোবর, ২০২০ / ডালিম

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন