আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক: সময় নষ্ট তিন বছর, ব্যয় বাড়লো প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১০-২৫ ১২:১০:৩২

সিলেটভিউ ডেস্ক ::  ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পটি প্রায় তিন বছর ধরে ঝুলছে। প্রথমে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তবে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবারকে কালো তালিকাভুক্তির পর নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। যদিও সর্বশেষ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে চার লেন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এদিকে গত তিন বছরে প্রকল্পটি চূড়ান্ত না হলেও নির্মাণব্যয় প্রায় সাত হাজার ৮৮০ কোটি টাকা বা ৮৩ শতাংশ বেড়ে গেছে। তবে প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। ফলে নির্মাণ শুরুর পর চার লেন নির্মাণব্যয় আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, ঢাকা-সিলেট রুটে ২০৭ দশমিক ৬৩ কিলোমিটার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত ছাড়াও উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া পুরো চার লেনের ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকগুলো সরলীকরণ করা হবে, যাতে ৮০ কিলোমিটার গতিতে যান চলাচল করতে পারে। এছাড়া প্রকল্পটির আওতায় ৩২১টি কালভার্ট, ৭০টি ছোট-মাঝারি সেতু, ৫টি রেল ওভারপাস, ৪টি ফ্লাইওভার, ১০টি আন্ডারপাস ও ৪২টি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করা হবে। ১৩টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।

২০১৭ সালের ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৫১০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ২০১৫ সালের রেট শিডিউল ও নির্মাণসামগ্রীর ২০১৪ সালে বাজারদরের পরিপ্রেক্ষিতে এ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল।

পরে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষির সময় প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়ায় ১০ হাজার ৩৭০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। যদিও জিটুজি ভিত্তিতে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে চায়না হারবার প্রস্তাব করেছিল ১৬ হাজার ৩৪৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। পরে কয়েক দফা বৈঠক শেষে সওজের নির্ধারিত দরেই চার লেন নির্মাণে রাজি হয় চায়না হারবার।

যদিও ২০১৮ সালের শুরুর দিকে নবনিযুক্ত সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে উপঢৌকন হিসেবে ৮০ লাখ টাকা (১ লাখ ডলার) দেয় চায়না হারবার। তবে ওই উপঢৌকন ফেরত দিয়ে চায়না হারবারকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। এরপর জিটুজির পরিবর্তে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৬১০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।

এদিকে গত বছর ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে এডিবি। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রকল্পটিতে এডিরিব অর্থায়ন নিশ্চিত হওয়ার পর সম্প্রতি ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৩৯০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অর্থাৎ অনুমোদনের আগেই প্রকল্পটির ব্যয় প্রায় সাত হাজার ৮৭৯ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বা ৮২ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে গেছে।

প্রকল্পটি বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিকভাবে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৪৫ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চীনের অর্থায়নের সময় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের পরিকল্পনায় কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬০ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আর এডিবির অর্থায়নে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে কিলোমিটারপ্রতি ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে জানতে সওজের প্রধান প্রকৌশলী কাজী শাহ্রিয়ার হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। পরে এসএমএস পাঠানো হলেও তিনি উত্তর দেননি। এছাড়া সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ফলে তার বক্তব্যও জানা যায়নি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পটির যাচাই কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে কিছু ব্যয় খাত নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। এসব খাতে ব্যয় কমানো যায় কী না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরপর ব্যয়ের পরিমাণ কত তা চূড়ান্ত বলা যাবে। ডিপিপি চূড়ান্ত হলে তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে।

যদিও প্রকল্প অনুমোদন ও নির্মাণ শুরুর পর চার লেন নির্মাণ ব্যয় আরও বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, এডিবির অর্থায়নে ১৩টি প্যাকেজে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এতগুলো প্যাকেজের আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান, মূল্যায়ন ও ঠিকাদার নিয়োগেই এক বছরের বেশি সময় পেরিয়ে যাবে। এরপর বাস্তবায়ন যত বিলম্বিত হবে, দরপত্রের আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুসারে (ফিডিক শর্তানুসারে) প্রকল্প ব্যয় তত বৃদ্ধি পাবে। তাই ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণব্যয় শেষ পর্যন্ত কত দাঁড়াবে তা বলা যাচ্ছে না।

চার লেন নির্মাণ ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাধারণ ও সাইট ফেসিলিটি অংশের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, মাটির কাজে এক হাজার ৬৬৪ কোটি ১৬ লাখ, পেভমেন্ট ওয়ার্কে পাঁচ হাজার ৭১৩ কোটি পাঁচ লাখ, অবকাঠামো খাতে পাঁচ হাজার ১৮ কোটি ৫৭ লাখ, রোড মার্কিং, সাইন-সিগনাল ও সড়ক বিভাজক খাতে এক হাজার ১৫৯ কোটি ১৫ লাখ এবং অন্যান্য খাতে ৩৫৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। আর ব্যয় সমন্বয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯৪৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে পাঁচ শতাংশ বা ৮২৮ কোটি ১২ লাখ টাকা কন্টিনজেন্সি। প্রকল্পটিতে এডিবির ১৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে তামাবিল পর্যন্ত চার লেন নির্মাণে ৯৯০ দশমিক ২৭ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। এজন্য সরকারি অর্থায়নে পৃথক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ফলে ঢাকা-সিলেট চার লেন নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিষেবা সংযোগ লাইন স্থানান্তরে খুব বেশি অর্থ প্রয়োজন হবে না।

সৌজন্যে : শেয়ার বিজ

সিলেটভিউ২৪ডটকম/২৫ অক্টোবর ২০২০/ডেস্ক/মিআচৌ

শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন