আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ইং

টাকা পেয়ে মন গলেনি বিয়ে পাগল মামুনের

কারাবন্দী এমরানকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২০-১১-২৫ ১১:০৭:৫০

নিজস্ব প্রতিবেদক : যৌতুকের টাকার জন্য সিলেটে নববধূ তামান্নাকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তার মা হাফিজুন চৌধুরী। মেয়ের শোকে কাতর মা জানালেন, ‘বিয়ের আগে তারা বলেছিল কোনো মালপত্র কিংবা টাকা লাগবে না। তারা কেবল কনে চায়। কিন্তু বিয়ের পরই পাল্টে যায় তাদের চেহারা। টাকার জন্য বার বার চাপ দেয়া হতো তামান্নাকে। টাকা না দিলে করা হতো নির্যাতন।’

তিনি জানান, ‘মেয়ের ওপর নির্যাতন কমাতে তিনি দেনা করে ২০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন। এতেও মন গলেনি তাদের। শেষ পর্যন্ত মেয়েটিকে মেরেই ফেললো।’ তামান্নার জন্য কাঁদছে তার পরিবার, আত্মীয় স্বজন।

মামলার বাদী নিহতের ভাই অভিযোগ করেছেন, পলাতক আল মামুন এর আগেও একটি বিয়ে করেছিলো, তার স্ত্রী সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে আদালতে একটি মামলাও রয়েছে।  ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে স্বামী আল-মামুন। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ। এ কারণে এই হত্যাকাণ্ডের সন্দেহ স্বামী আল-মামুনের বিরুদ্ধে। পুলিশ মামুনকে হন্য হয়ে খোঁজছে। এদিকে, মামলা দায়েরের পর রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামুনের বোন জামাই এমরানকে গ্রেফতার করেছে। এমরানকে সুবহানীঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানায় পুলিশ। গ্রেফতাকৃত এমরান বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার চরহোগলা গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে।

এদিকে, তামান্নাকে বিয়ে করার সময় যে আইডি কার্ড প্রদর্শন করেছিলেন মামুন সেটি ভূয়া বলে নববধূর পরিবারের অভিযোগ। মো. আল মামুনের জন্মস্থান বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ থানার হোগলারচরে। তবে তার ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানায় রয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বারুতখানা এলাকার নাম। আইডি কার্ডে উল্লেখ রয়েছে মামুন বারুতখানা এলাকার আবুল কাশেম সরদার ৮ ও আম্বিয়া বেগমের ছেলে। আল মামুন নগরীর জিন্দাবাজারস্থ আল-মারজান শপিং সেন্টারের ঐশি ফেব্রিক্স নামক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।

অপরদিকে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, তামান্না ও আল মামুনের বিয়ের মধ্যস্থতাকারী ছিলেন শাহনাজ পারভিন নামের মেঘনা লাইফ ইন্সুরেন্স এর এক কর্মকর্তা। ওই মহিলা মামুনকে তার চাচাতো ভাই বলে পরিচয় দেন এবং তামান্নার পরিবারে বিয়ের জন্য পীড়াপিড়ি করতে থাকেন। বিয়ের সময় টাকা দিয়েও শাহনাজ পারভিন সাহায্য করেন তামান্নার পরিবারকে। অভিযোগ রয়েছে, এ বিয়েতে তামান্নার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যের অসম্মতি ছিলো। কিন্তু শাহনাজ পারভিনের পীড়াপিড়িতেই এ বিয়েটি হয়। শাহনাজ এখন গা ঢাকা দিয়েছেন।

পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন,অন্যান আসামীদের তথ্যের জন্য কারাবন্দী এমরানকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আদালতে ৫দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন কোতোয়ালি থানার এসআই আব্দুল মান্নান। আদালতে রিমান্ডের আবেদন করলেও এখনও রিমান্ডের শুনানী হয়নি। তবে তদন্ত কর্মকর্তা আশাবাদী আদালত আলোচিত এই হত্যা মামলায় ৩দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করতে পারেন আদালত।  

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) সিলেট ভিউকে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত এমরানের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। রিমান্ড শুনানি হয়নি। পলাতক থাকা আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানে রয়েছে।

তিনি জানান, নিহত তামান্নার স্বামী আল মামুনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগের অন্ত নেই। নগরীর আল মারজানে রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এখানে তার সঙ্গে নানা বিরোধ ছিল বিভিন্ন জনের। টাকা-পয়সা ধার দেনার কারণে এই মতবিরোধ দেখা দেয় বলে জানিয়েছেন কয়েক জন ব্যবসায়ী। দুই মাস আগে তামান্নাকে বিয়ে করার পর আল মামুনের বিরুদ্ধে গুরুতর একটি অভিযোগ পাওয়া যায়। তামান্নাকে বিয়ের আগে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন মামুন। আগের স্ত্রীর দায়ের করা একটি মামলাও রয়েছে। সেই স্ত্রীর ঘরে একটি সন্তানও রয়েছে মামুনের।

তামান্নার খালাতো ভাই মো. ইকবাল অভিযোগ করেছেন. মামুন আগেও একটি বিয়ে করেছে। সেই বিয়ের বিষয়টি গোপন করে তামান্নাকে বিয়ে করে। এ ক্ষেত্রে মামুনকে সহায়তা করেন মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শাহনাজ পারভিন নামের এক মহিলা কর্মকর্তা।

পারিবারিক সূত্র জানায়- ওই মহিলা মামুনকে তার চাচাতো ভাই বলে পরিচয় দেন। বিয়ের আগে যখন কথাবার্তা চলছিল তখন ছেলে স্থানীয় না হওয়ার কারণে তারা মত দেননি। চার মাস পর তামান্নার মা হাফিজুন নেছা বিয়েতে মত দেন। এরপর শাহানাজ পারভিন বিয়েতে নিজেও টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেন তামান্নার মাকে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার দুপুরের দিকে নগরীর কাজীটুলার অন্তরঙ্গ ৪ নম্বর বাসার তালাবদ্ধ কক্ষ থেকে গৃহবধূ সৈয়দা তামান্নার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তার গলায় রক্ত জমাট বাধা ছিলো। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী আল মামুনের সাথে তামান্নার বিয়ে হয়। পুলিশের ধারণা, স্ত্রীকে হত্যা করে পালিয়েছে স্বামী এবং রোববার রাতের কোনো এক সময় তামান্নাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলেও ধারণা পুলিশের। নিহত সৈয়দা তামান্না বেগম-এর বাড়ি দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লালাবাজার ইউনিয়নের ফুলদি গ্রামে। তবে মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যরা বর্তমানে গোলাপগঞ্জ পৌর এলাকার এমসি একাডেমি সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।


সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/ ২৫ নভেম্বর ২০২০/পিটি







শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন