আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ইং

এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ধর্ষণ : দুই মামলার আদেশ প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয়ে

সিলেটভিউ টুয়েন্টিফোর ডটকম, ২০২১-০৩-০৭ ১৩:০১:১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক :  সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের দুটো মামলার বিচারকার্য একই আদালতে ও একসঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু হাইকোর্টের আদেশ রবিবার (৭ মার্চ) পর্যন্ত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন থাকায় সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে আলোচিত মামলার শুনানী হয়নি। আদেশ আশার পর পরই ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে বলে বাদী পক্ষের আইনজীবীদের জানিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহিতুল হক ইনাম চৌধুরী। রবিবার (৭ মার্চ) সকালে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সকল আসামীদের আদালতে হাজির করে পুলিশ।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাদীপক্ষের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান শহীদুজ্জামান চৌধুরী। তিনি সিলেট ভিউকে বলেন, মহানগর দায়রা জজ আদালতে দন্ডবিধি (ঘটনার দিন মারধর, ছিনতাই, চাঁদাবাজি) ২৫০নং মামলাটির শুনানীর তারিখ ছিল গত ১০ ফেব্রুয়ারি। তখন আমরা হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিষয়টি আদালতকে অবগত করলে আদালত মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখেন। আজ (রবিবার ৭ মার্চ) সিলেট নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে একই সাথে দুই মামলা চলার বিষয়ে অবগত করলে আদালত আমাদেরকে জানিয়েছেন একই সাথে একই ট্রাইব্যুনালে দুই মামলা বিচার কার্যক্রম চলার জন্য একটি রিকুজিশন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছে সেখান থেকে আদেশ আসার পর পরই মামলার কার্যক্রম শুরু হবে।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রাবাসে তরুণীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের আগে তার স্বামীকে (মামলার বাদী) মারধর ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। এ ঘটনায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে আরও একটি মামলা হয়। ধর্ষণ মামলার আট আসামিই এই মামলার আসামি। এতে ধর্ষণ মামলার ৫১ জন সাক্ষীকেও সাক্ষী রাখা হয়েছে। একই ঘটনার পৃথক দুটি মামলা একই ট্রাইব্যুনালে চললে বাদী পক্ষ ন্যায় বিচার পাবেন। সেই সাথে বিচারকার্য বিলম্বিত হবে না মন্তব্য করেন তিনি।

আদালত সূত্র জানায়, সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে তরুণীকে ধর্ষণের দুটো মামলার বিচারকার্য একই আদালতে ও একসঙ্গে করার জন্য গত ৭ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি শেষে বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দিয়েছেন। সেই সাথে হাইকোর্ট নিরাপত্তার বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন।  এর আগে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাক্ষ্য গ্রহণ মুলতবি রাখা হয়। বাদীর আবেদনে সাক্ষ্য গ্রহণ প্রক্রিয়া ও আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী নিয়োগসহ কিছু অসংগতি তুলে ধরেন বাদীপক্ষের আইনজীবী। আবেদনে বলা হয়, অভিযুক্ত ৭ ও ৮ নম্বর আসামি আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাহ-উল ইসলামের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিযুক্ত করা হয়নি। তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেলে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আইনজীবী নিযুক্ত করে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরুর কথা। কিন্তু এই ফাঁক রেখে বিচারকার্য সম্পন্ন হলে এই আসামিরা পরবর্তী সময়ে অনুকম্পা পাওয়ার সুযোগ পাবেন। প্রসঙ্গটি আবেদনে উদ্ধৃত করা হয়েছে এভাবে, ‘৭ ও ৮ নম্বর আসামি কোনো ওকালতনামা দেননি। স্টেট ডিফেন্স না করে জবরদস্তি মূলে মামলার বিচার করার প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হচ্ছে।’

জানা যায়, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে এক তরুণীকে (২০) দল বেঁধে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর স্বামী বাদী হয়ে মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় ছয়জনের নাম উল্লেখ করে এবং দুজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার পর আসামিরা ছাত্রাবাস থেকে পালিয়ে গেলেও তিন দিনের মধ্যে ছয় আসামি ও সন্দেহভাজন দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও র‍্যাব। গ্রেফতারের পর আটজন আসামিকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। পরে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ঘটনার দায় স্বীকার করেন। আসামিদের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষায় আটজন আসামির মধ্যে ছয়জনের ডিএনএর মিল পাওয়া যায়। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর মামলার পৃথক দুটি অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা ও মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য।

অভিযোগপত্রে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ও মাহফুজুরকে ধর্ষণে সহায়তা করতে অভিযুক্ত করা হয়। আট আসামিই বর্তমানে কারাগারে আছেন। তারা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।



সিলেট ভিউ ২৪ ডটকম/পিটি ১২


শেয়ার করুন

আপনার মতামত দিন